Advertisement
০২ মে ২০২৪

ব্যবসায়ীর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি, প্রশ্নে রাতের শহরের নিরাপত্তা

কলকাতা পুলিশের অপরাধ দমন বৈঠকে কমিশনার বলেছিলেন, শহর থেকে ঠিক মতো অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে না। কয়েক দিন পরেই সেই বক্তব্যকে ‘সমর্থন’ দিল দুষ্কৃতীরা। তা-ও পুলিশ কমিশনারের বাসভবন থেকে কয়েক মিনিট হাঁটাপথের দূরত্বে! পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত সওয়া তিনটে নাগাদ হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট ও অ্যালবার্ট রোডের সংযোগস্থলে এক ব্যবসায়ীর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তিন দুষ্কৃতী। তবে কেউ হতাহত হয়নি। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কোনও অভিযুক্তের হদিস পায়নি পুলিশ।

এই গাড়িকে লক্ষ্য করে গুলি চলে।—নিজস্ব চিত্র।

এই গাড়িকে লক্ষ্য করে গুলি চলে।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ১৫:০৫
Share: Save:

কলকাতা পুলিশের অপরাধ দমন বৈঠকে কমিশনার বলেছিলেন, শহর থেকে ঠিক মতো অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে না। কয়েক দিন পরেই সেই বক্তব্যকে ‘সমর্থন’ দিল দুষ্কৃতীরা। তা-ও পুলিশ কমিশনারের বাসভবন থেকে কয়েক মিনিট হাঁটাপথের দূরত্বে! পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত সওয়া তিনটে নাগাদ হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিট ও অ্যালবার্ট রোডের সংযোগস্থলে এক ব্যবসায়ীর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে তিন দুষ্কৃতী। তবে কেউ হতাহত হয়নি। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কোনও অভিযুক্তের হদিস পায়নি পুলিশ।

কী হয়েছিল শুক্রবার রাতে?

পুলিশ সূত্রের খবর, সুখবীর সিংহ নামে ওই ব্যবসায়ী তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে একটি এসইউভি (স্পোর্টস ইউলিটি ভেহিকল) গাড়িতে চেপে শেক্সপিয়র সরণির দিকে যাচ্ছিলেন। সুখবীরের অভিযোগ, পিছন থেকে একটি নীল রঙের গাড়ি তাঁদের গাড়িকে ওভারটেক করে পথ আটকায়। সেই গাড়ি থেকে তিন যুবক নেমে গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সুখবীর, তাঁর বান্ধবী বা গাড়িচালকের কিছু হয়নি।

সুখবীর পুলিশকে জানান, গুলি ছোড়ার পরেই সুখবীরের গাড়িচালক দ্রুত গাড়ি পিছনে নিয়ে এসে এজেসি বোস রোড-মিন্টোপার্ক হয়ে শেক্সপিয়র সরণি থানায় পৌঁছন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। নীল রঙের গাড়িটি বা ফাঁকা কার্তুজের খোল মেলেনি। তবে গাড়ির কাচে গুলির চিহ্ন মিলেছে বলে পুলিশের দাবি। গাড়িটিকে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।

ওই ব্যবসায়ী কেন আক্রান্ত হলেন, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা শনিবার রাত পর্যন্ত মেলেনি। সুখবীর বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই। ছেলেগুলিকে আমি চিনতে পারিনি। আগে কোনও হুমকিও পাইনি।’’ সুখবীর জানান, তিনি বালিগঞ্জের সার্কুলার রোডের একটি পানশালায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পার্ক স্ট্রিটের আর একটি পানশালায় যাচ্ছিলেন।

তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বালিগঞ্জের পানশালায় সুখবীরের সঙ্গে তাঁর দুই বান্ধবী ছিলেন। ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই ভবানীপুরে এক বান্ধবীকে নামান তিনি। এ দিন বালিগঞ্জের পানশালাটিতে তদন্তকারীদের একটি দল গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে। পুলিশের দাবি, ওই রাতে আরও চারটি পানশালায় যান সুখবীর। তদন্তের স্বার্থে হাঙ্গারফোর্ড স্ট্রিটের একাধিক সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

গোয়েন্দাদের একাংশের সন্দেহ, হামলার পিছনে ব্যবসায়িক শত্রুতা থাকতে পারে। কোনও পানশালায় কারও সঙ্গে সুখবীরের গোলমাল হয়েছিল কী না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। শনিবার সকালেই সুখবীরকে থানায় ডেকে তাঁর সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন পুলিশের শীর্ষকর্তারা। পরে সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে কার্যত দৌড়ে থানা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ভরসন্ধ্যায় মধ্যমগ্রাম উড়ালপুলে ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে খুন করা হয় দুই নির্মাণ ব্যবসায়ীকে।

শুক্রবার রাতের এই ঘটনার পর ফের প্রশ্ন উঠেছে রাতের কলকাতার নিরাপত্তা নিয়ে। পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি, লাউডন স্ট্রিটের মতো রাতের জনপ্রিয় এলাকায় এ ভাবে গুলি চললে তা নাগরিকদের জন্য কতটা নিরাপদ সে প্রশ্নও উঠেছে। পুলিশেরই একাংশ বলছেন, শুক্র-শনিবারের মতো সপ্তাহের শেষ লগ্নে ওই এলাকার পানশালায় ভিড় বেশি হয়। তাই পুলিশি পাহারাও বেশি থাকে। কিন্তু শুক্রবার রাতে সেই পাহারা ছিল কি না, সে প্রশ্নও উঠেছে। এ ব্যাপারে ডিসি (সাউথ) মুরলীধর শর্মা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

প্রশ্ন উঠেছে, দুষ্কৃতী দমনে কলকাতা পুলিশের দক্ষতা নিয়েও। অনেকেই বলছেন, অপরাধ দমন বৈঠকে সিপি শহর থেকে অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিলেও তা যে পালন করা হচ্ছে না, শুক্রবার রাতের ঘটনা তা প্রমাণ করে দিল। সিপি-র মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন গোয়েন্দা অফিসারদের একাংশ। লালবাজারের একটি সূত্র বলছে, মেছুয়া-কলাবাগান এলাকায় এক দুষ্কৃতী ভরসন্ধ্যায় অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে। তা শুনে কিছু গোয়েন্দা অফিসার তাঁকে ধরতে সম্প্রতি হানা দেন। কিন্তু তখন কলকাতা পুলিশের শীর্ষমহল থেকে বলা হয়, ওই দুষ্কৃতী শাসক দলের ঘনিষ্ঠ। তাই ধরা যাবে না।

এক গোয়েন্দাকর্তার মন্তব্য, ‘‘উঁচুতলার কর্তারা যদি কথায় এক আর কাজে আর এক হন, তা হলে নীচুতলার অফিসারেরা কাজ করবেন কী করে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE