কলকাতা পুলিশের হাত থেকে তদন্তভার সিআইডি-কে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু বছর ঘুরতে চললেও খোঁজ মিলল না ভারতীয় জাদুঘরের মুখ্য সংরক্ষণ আধিকারিক সুনীল উপাধ্যায়ের। উল্টে প্রাথমিক ভাবে সুপ্রিম কোর্টের কাছে সিআইডি-র পেশ করা ‘স্ট্যাটাস রিপোর্ট’ এবং কলকাতা পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে গরমিল মেলায় রহস্যের জট আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। রাজ্যের দুই তদন্তকারী সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তাঁদের প্রশ্ন, কোন রিপোর্টটি ঠিক?
গত বছরের ৩ জুলাই হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যান সুনীলবাবু। তিন মাসেও কলকাতা পুলিশ কিনারা করতে না পারায় তাঁর ভাই কৃষ্ণমোহন উপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে যান। সিআইডি-র হাতে তদন্তভার দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে শীর্ষ আদালতের কাছে প্রাথমিক ‘স্ট্যাটাস রিপোর্ট’
পেশ করলেও ঘটনার কিনারা করতে পারেনি সিআইডি-ও।
তবে ওই রিপোর্টে সিআইডি-র দাবি, সুনীলবাবু অপহৃত হননি। এমনকী ওই সময়ে জাদুঘরের সংগ্রহ নষ্ট এবং সংগ্রহ কেনায় একাধিক অনিয়মের সঙ্গে এর যোগ নেই বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, পরপর অনিয়ম এবং সংগ্রহ নষ্টের ঘটনায় সুনীলবাবু বেশ চিন্তিত ছিলেন। তাঁর উপর নানা ধরনের চাপও তৈরি হয়েছিল বলে সিআইডি গোয়েন্দারা রিপোর্টে উল্লেখ করছেন।
রিপোর্টে গোয়েন্দারা আরও বলেছেন, জাদুঘরের একটি মূর্তির ক্ষতির ঘটনায় কর্তৃপক্ষের গড়া তদন্ত কমিটিতে সুনীলবাবু ছিলেন। তাদের রিপোর্টে বলা হয়, মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পিছনে জাদুঘরের কারও গাফিলতি ছিল না। অথচ একই ঘটনায় অছি পরিষদের অনুরোধে কেন্দ্রীয় তথ্য মন্ত্রকের গড়া কমিটি এই রিপোর্টটিকে খারিজ করে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির দিকেই আঙুল তোলে। যার জেরে মুখ্য সংরক্ষণ আধিকারিক হিসেবে দায় এড়াতে না পেরে সুনীলবাবু বেশ চিন্তিত ছিলেন বলেও রিপোর্টে বলা হয়েছে।
তবে দু’টি রিপোর্টে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে সুনীলবাবুর বাড়ি ও জাদুঘরে তাঁর অফিস থেকে উদ্ধার করা কিছু জিনিস। চারু মার্কেট থানার তদন্তকারীরা রিপোর্টে জানান, ৩৮জি সুলতান আলম রোডের সুনীলবাবুর ভাড়া বাড়ি থেকে তাঁর দু’টি মোবাইল, ল্যাপটপ মিলেছে। কিন্তু পাসপোর্ট, মানিব্যাগ বা পরিচয়পত্র মেলেনি। অথচ সিআইডি-র প্রাথমিক ‘স্ট্যাটাস রিপোর্টে’ বলা হয়েছে, সুনীলবাবুর পাসপোর্টটি ভারতীয় জাদুঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে।
জাদুঘরের কিছু কর্মী জানান, চারু মার্কেট থানার পুলিশ ছাড়াও কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও জাদুঘরে তল্লাশি চালিয়ে সুনীলবাবুর পাসপোর্ট পাননি। অথচ নভেম্বরে সিআইডি সেখান থেকেই কী করে পাসপোর্ট পেল? তাঁদের প্রশ্ন, তবে কি চারু মার্কেট থানার তদন্তকারীরা ঠিকমতো তল্লাশি চালাননি? যদিও জাদুঘরের অপর একাংশের দাবি, পাসপোর্টটি জাদুঘরের প্রাক্তন অধিকর্তা বি বেণুগোপালের কাছে ছিল এবং তিনিই সিআইডি-কে দিয়েছেন। ওই কর্মীদের প্রশ্ন, অধিকর্তা চারু মার্কেট থানার তদন্তকারীদের তা দেননি কেন? বেণুগোপাল কিছু না বললেও এখানেই রহস্য রয়েছে বলে মত সুনীলবাবুর পরিবারের।
দু’টি রিপোর্টে সুনীলবাবুর মোবাইলে আসা একটি মেসেজ ঘিরেও রয়েছে দু’রকম তথ্য। থানার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩ জুলাই নিখোঁজ হওয়ার পরে সুনীলবাবুর মোবাইল দু’টি সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি (সিএফএসএল)-তে পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৩ জুলাই সকাল ৯টা ৩৮ মিনিটে একটি মোবাইলে বেণুগোপালের ‘মেসেজ’ আসে। কিন্তু উদ্ধারের সময়ে সুনীলবাবুর মোবাইলে কোনও ‘মেসেজ’ ছিল না। ফলে ‘মেসেজ’-এর বক্তব্য জানতে বেণুগোপালের মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা। তিনিও মোবাইল থেকে মেসেজ মুছে ফেলেছিলেন বলে দাবি তদন্তকারীদের। ফলে অধিকর্তার মোবাইলও সিএফএসএল-এ পাঠানো হয়। সিআইডি-র হাতে তদন্তভার দেওয়ার সময় পর্যন্ত তাদের রিপোর্ট হাতে পায়নি পুলিশ। অথচ এই পুরো বিষয়টিই সিআইডি-র রিপোর্টে নেই। এক তদন্তকারী আধিকারিক জানান, এটি প্রাথমিক ‘স্ট্যাটাস রিপোর্ট’। পরে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।
ফলে জাদুঘর আধিকারিকের নিখোঁজ রহস্যের জট কবে কাটবে, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy