Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Health Commission

স্বাস্থ্য কমিশনের কাঠগড়ায় দুই বেসরকারি হাসপাতাল

বুধবার যে মামলায় প্রাথমিক ভাবে গাফিলতির ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:২৯
Share: Save:

টাকার অভাবে বেসরকারি হাসপাতালের চৌকাঠ পেরোতে পারেননি তমলুকের লায়লা বিবি (৬০)। কার্যত বিনা চিকিৎসায় অ্যাম্বুল্যান্সেই মৃত্যু হয়েছিল ওই প্রৌঢ়ার। অগস্টের ওই ঘটনায় কোভিড রোগীর প্রতি বেসরকারি সেই হাসপাতালের এ হেন আচরণের অভিযোগ ঘিরে সমালোচনার ঝড় বয়েছিল। সেপ্টেম্বরে জানা গেল, লায়লা বিবি প্রথম নন। গত জুনে অনেকটা একই ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন হিন্দুস্থান পার্কের বাসিন্দা ৭৯ বছরের এক বৃদ্ধও। বুধবার যে মামলায় প্রাথমিক ভাবে গাফিলতির ইঙ্গিত মিলেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়।

স্বাস্থ্য কমিশনের খবর, জুনের চার তারিখ আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি হন হিন্দুস্থান পার্কের বাসিন্দা অশোক ঘোষ। সপ্তাহখানেকের মাথায় রোগীর কোভিড ধরা পড়লে কর্তৃপক্ষ তিন ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে অন্যত্র সরানোর জন্য নিদান দেন বলে স্বাস্থ্য কমিশনের কাছে অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন রোগীর স্ত্রী শুভ্রা ঘোষ। রোগীকে স্থানান্তরিত করার আগে দু’লক্ষ ন’হাজার টাকা বিল মিটিয়ে দিতে বলা হয়। শুভ্রাদেবীর দাবি, আলিপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের তরফেই করোনা আক্রান্তকে ভর্তি করাতে বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরিজনেরা রাজি হলে বাইপাসের ধারের ওই হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়ে অশোকবাবুকে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ১১ কিলোমিটারের জন্য সাড়ে ন’হাজার টাকা অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া দিতে হয় বলে অভিযোগ।

পরিবারের দাবি, হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে দু’লক্ষ টাকা অগ্রিম চাওয়া হয়। সেই টাকা জোগাড় করতে সময় লাগবে বলে জানান রোগীর স্ত্রী। অভিযোগ, হাসপাতালের এক কর্মী জানান, টাকা না পেলে চিকিৎসা শুরু হবে না। ঘণ্টাখানেক অ্যাম্বুল্যান্সেই ছিলেন বৃদ্ধ। এক পরিচিতের মাধ্যমে হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকলে চিকিৎসা শুরু হয়। দু’সপ্তাহ পরে সেখানেই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন: আধ ঘণ্টা পিছোতে পারে শেষ মেট্রোর সময়

এ দিন কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, লায়লা বিবির সঙ্গে এই ঘটনার মিল রয়েছে। প্রৌঢ়ার ক্ষেত্রেও স্থানান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগের ঘেরাটোপে এসেছিল একটি নার্সিংহোম। এ ক্ষেত্রে একই প্রশ্নে আলিপুরের বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। চেয়ারম্যান জানান, উডল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, তাঁরা তিন ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে অন্যত্র সরানোর কথা বলেননি। বকেয়া বিল মেটানোর জন্যও কোনও চাপ দেননি। তবে কোভিড রোগীর চিকিৎসা না করে স্থানান্তর প্রসঙ্গে কর্তৃপক্ষের সদুত্তর মেলেনি বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। ওই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, নিজেদের বক্তব্য হলফনামার মাধ্যমে কমিশনকে জানাবেন। একই বক্তব্য বাইপাসের ধারের হাসপাতাল ডিসান কর্তৃপক্ষেরও। রোগীর তরফে অভিযোগকারিণীকেও হলফনামা দিতে বলেছে কমিশন। মামলার চূড়ান্ত শুনানি না হওয়া পর্যন্ত উডল্যান্ডসকে এক লক্ষ টাকা এবং ডিসানকে চার লক্ষ টাকা জমা রাখতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: মিলল স্লট, ফের চালু লন্ডনের সরাসরি উড়ান

কোভিড সংক্রান্ত অ্যাডভাইজ়রি না মানায় এ দিন আরও দু’টি হাসপাতালকে জরিমানা করা হয়েছে। বাগুইআটির একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ পিপিই-র খরচ নেওয়ার পরেও পৃথক ভাবে মাস্ক, গ্লাভসের বিল নেওয়া হয়েছে। তপসিয়ার একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এক দিনে রোগীর পরিবারের কাছে আইসিইউ খরচ বাবদ সতেরো হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল। কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘দু’ক্ষেত্রেই অ্যাডভাইজ়রি মানা হয়নি বলে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। প্রথম অভিযোগ বলে কড়া পদক্ষেপ করা হয়নি। জানানো হয়েছে, আগামিদিনে এমন ঘটনায় লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Commission Coronavirus in Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE