Advertisement
E-Paper

মৃত্যু অবহেলাতেই, শাস্তি শুধু সতর্কবার্তা

একেই বোধহয় বলা চলে গুরুপাপে লঘুদণ্ড! এত দিন যা মৌখিক ভাবে বলা হচ্ছিল, এ বার স্বাস্থ্যকর্তারা তা লিখিত ভাবে স্বীকার করলেন।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:০৮
স্বাস্থ্য ভবনের সেই চিঠি।

স্বাস্থ্য ভবনের সেই চিঠি।

একেই বোধহয় বলা চলে গুরুপাপে লঘুদণ্ড!

এত দিন যা মৌখিক ভাবে বলা হচ্ছিল, এ বার স্বাস্থ্যকর্তারা তা লিখিত ভাবে স্বীকার করলেন। জানালেন, শুধুমাত্র চিকিৎসক এবং নার্সদের কর্তব্যে গাফিলতি, উদ্যোগহীনতা এবং অমানবিক আচরণ রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতালে এক কিশোরীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ডাক্তার এবং নার্সদের নাম উল্লেখ করে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষকে চিঠিও দিলেন তাঁরা। কিন্তু এই ‘নজিরবিহীন’ স্বীকারোক্তির পরে দোষীদের শাস্তি কী হল? স্রেফ এক লাইনের একটা সতর্কবার্তা এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটলে শাস্তির হুঁশিয়ারি! যে ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য খাস নবান্ন থেকে নির্দেশ এসেছিল, সেখানে এমন লঘুদণ্ডের নমুনায় স্তম্ভিত চিকিৎসক মহল। তাঁরা মনে করছেন, এর ফলে কর্তব্যে গাফিলতির ঘটনা আরও বাড়বে। অনেকেই ধরে নেবেন, যথেচ্ছাচার করে ধরা পড়লেও শাস্তি হবে না।

স্বাস্থ্য ভবন থেকে এসএসকেএমে যাওয়া ওই চিঠিতে দেখা যাচ্ছে, ওই কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনায় প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান বিজয় মজুমদার, সহকারি প্রফেসর সন্দীপকান্তি বসু এবং পাঁচ জন পোস্ট ডক্টরাল ট্রেনি জয়ন্ত বায়েন, অশ্বিন কুমার, রাফত আলি, বৈভব জৈন ও বিবেক গুপ্তর এই ঘটনায় দায় রয়েছে। ওই পাঁচ জন পোস্ট ডক্টরাল ট্রেনিই সেই ২৪ ঘণ্টায় ডিউটিতে ছিলেন। দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ওয়ার্ডের আট জন নার্স যথাক্রমে সুস্মিতা মণ্ডল, কাবেরী চাওলি, সোমা চক্রবর্তী, শিখা বিশ্বাস, মধুমিতা মণ্ডল, আশা ডমোর, সুজাতা শূর এবং সাধনা পাত্রকেও।

এর আগে টানা ন’মাস ওই মৃত্যুর তদন্ত ফাইল স্বাস্থ্য ভবনে টেবিল-বন্দি ছিল। মৃতার বাবা টানা নবান্নে ধর্ণা দিয়ে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। নবান্ন থেকে নির্দেশ যায় স্বাস্থ্য ভবনে। তার পরে স্বাস্থ্যকর্তারাই বলেন, সবই তো প্রমাণিত। শুধু ব্যবস্থা নেওয়া বাকি। ডাক্তারেরা এমন করলে তাঁদের শাস্তিও কঠোর হওয়া জরুরি।

কিন্তু এই কি ‘কঠোর’ ব্যবস্থার নমুনা? কেন সতর্ক করা ছাড়া আর কিছু করছে না স্বাস্থ্য ভবন? স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এর পর যা করার রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল করবে। যদিও স্বাস্থ্যকর্তাদেরই একটি বড় অংশ বলছে, ইতিপূর্বে এমন অপরাধে স্বাস্থ্য দফতর থেকে সাসপেন্ড করার নজির রয়েছে অজস্র। এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট স্বাস্থ্য দফতরের এক আমলা বলেন, ‘‘ডাক্তারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে গেলে নানা মহল থেকে চাপ আসার আশঙ্কা আছে। তাই তেমন সিদ্ধান্ত হয়নি। এতে সাধারণ মানুষের ভরসা নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষের মনে হবে, গাফিলতির অভিযোগ তুলে লাভ নেই। অভিযোগ প্রমাণিত হলেও সুবিচার মিলবে না।’’

গত ২৫ নভেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের বাসিন্দা সুহানা ইয়াসমিন মণ্ডল রাস্তায় রড বোঝাই একটি গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর জখম হয়। প্রথমে বসিরহাট, পরে কলকাতার আর জি করে উপযুক্ত চিকিত্‌সা না মেলায় তাকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই রাতে চার ইউনিট রক্ত লাগবে বলে সুহানার পরিজনরেদের জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। পরদিন অর্থাত্‌, ২৬ নভেম্বর দুপুরে তা আনেনও পরিজনেরা। কিন্তু পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় তা সুহানাকে দেওয়ার ‘সময় পাননি’ ডাক্তারেরা। রক্তের অভাবে ধুঁকতে ধুঁকতে মৃত্যু হয় কিশোরীর।

রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতালে এমন ঘটায় তোলপাড় শুরু হয়েছিল নানা মহলে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়া হয়। এসএসকেএম থেকে সেই তদন্ত রিপোর্ট স্বাস্থ্য ভবন, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। তবুও গত ন’মাসে ওই চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মেডিক্যাল কাউন্সিল অবশ্য জানিয়েছে, তাদের কাছে অতি সম্প্রতি বিষয়টি এসেছে। প্রক্রিয়া মেনে যত দ্রুত সম্ভব তারা ব্যবস্থা নেবে।

গোটা ঘটনায় ভেঙে পড়েছে সুহানার পরিবার। সুহানার বাবা রুহুল আমিন মণ্ডল বলেন, ‘‘মেয়েটা বারবার বলেছিল, ‘বাবা, আমি বাঁচব তো?’ কথাগুলো সর্বক্ষণ কানে বাজে। ওকে যারা বাঁচতে দিল না, তাদের কঠিন শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমারও শান্তি নেই।’’

soma mukhopadhyay health department oneliner warning sskm doctors teen death case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy