Advertisement
E-Paper

কাশির সঙ্গে রক্ত, তবু মিলল না চিকিৎসা

এনআরএসে ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার গভীর রাত থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। তার জেরে নাভিশ্বাস উঠছে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ০৩:২৭
এসএসকেএম হাসপাতালে কবিরুল শেখ। বুধবার। ছবি: মেহবুব কাদের চৌধুরী

এসএসকেএম হাসপাতালে কবিরুল শেখ। বুধবার। ছবি: মেহবুব কাদের চৌধুরী

কাশির সঙ্গে রক্ত বেরোচ্ছে। চিকিৎসা করাতে জঙ্গিপুর থেকে কলকাতায় এসেছেন সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রটি। কিন্তু চিকিৎসা তো দূর, হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত হতে পারেননি ওই যুবক। রাত কেটেছে এসএসকেএম হাসপাতালের আউটডোর চত্বরেই। অভিযোগ, সেখানে বসেই আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা স্লোগান দিচ্ছেন, হাততালি দিচ্ছেন। কিন্তু কবিরুল শেখ নামে অসুস্থ ওই ছাত্রকে পরীক্ষা করার কথা কানেই তোলেননি।

এনআরএসে ডাক্তার নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার গভীর রাত থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারেরা। তার জেরে নাভিশ্বাস উঠছে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায়। অসুস্থ, মরণাপন্ন রোগীরা হাসপাতাল চত্বরে হাজির হয়েও ন্যূনতম চিকিৎসাটুকুও পাচ্ছেন না। ক্যানসার-সহ একাধিক কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীরা হয় বাধ্য হচ্ছেন বাড়ি ফিরে যেতে। না হয় হাসপাতাল চত্বরেই পড়ে থাকছেন চিকিৎসা পাবার আশায়।

কবিরুলের বাবা আসাদুল শেখ পেশায় নির্মাণকর্মী। ছেলের কী রোগ হয়েছে জানেন না। কিন্তু ছেলের কাশির সঙ্গে রক্ত বার হওয়ায় দুশ্চিন্তায় তিনি। আসাদুল বুধবার বলেন, ‘‘মঙ্গলবার থেকে হাসপাতালের বাইরে ত্রিপল বিছিয়ে বসে রয়েছি। ছেলেটাকে কোনও ডাক্তার দেখেননি। ডাক্তারদের গায়ে হাত তোলা অন্যায়। কিন্তু এত সাধারণ অসহায় মানুষ কী করবেন। আমরা কী দোষ করেছি? আমার এই ছেলেটা কী অপরাধ করেছে?’’

বর্ধমানের বাসিন্দা, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত বর্ষা মালকে রক্ত না নিয়েই ফিরে যেতে হয়। ছবি: মেহবুব কাদের চৌধুরী

ক্যানসার আক্রান্ত মহেশতলার বাসিন্দা ৪৫ বছরের আনোয়ারা সাঁপুই আবার ভর্তি হতে না পেরে বাধ্য হলেন বাড়ি ফিরে যেতে। তার পরিজনদের দাবি, গত ৮ তারিখ তাঁকে হাসপাতালের তরফে ভর্তির ডেট দেওয়া হয়েছে। আনোয়ারার ছেলে সফিক জানান, তাঁর মা বুকের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন। বাড়িতে থাকতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘‘আজ হাসপাতালে আসার পরে এখানে বলা হল টিভিতে চোখ রাখুন। গোলমাল থামলে ভর্তি হতে আসবেন।’’

রাজ্যজুড়ে সরকারি হাসপাতালগুলিতে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে এ ভাবে বুধবারও অনেককেই নাকাল হতে হল। চিকিৎসার আশায় শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে সারা দিন দৌড়ে বেড়ালেন রোগীদের পরিজনেরা। কিন্তু দিনের শেষে বিনা চিকিৎসাতেই ফিরলেন সবাই।

ডাক্তারদের অনড় মনোভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবারই এনআরএসের সামনে প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন রোগীর আত্মীয়েরা। একই ছবি দেখা গেল বুধবারেও। চিকিৎসার অভাবে রোগীর পরিজনেরা এ দিন সকালে দু’দফায় এসএসকেএমের সামনে হরিশ মুখার্জি রোড এবং এ জে সি বসু রোড ও ক্যাথিড্রাল রোড মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে রোগীর লোকজনদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল ধস্তাধস্তি হয়।

এ দিন সকাল থেকেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মূল গেট বন্ধ ছিল। একমাত্র ভর্তি হওয়া রোগীদের বাড়ির লোকেদের ছাড়া আর কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। যার জন্য রোগীর পরিবারের সঙ্গে দফায় দফায় চিকিৎসকদের ঝামেলা হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ন্যাশনালে অ্যাম্বুল্যান্সে করে রোগী আসলেও রাস্তা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। একই অবস্থা ছিল এসএসকেএম, আর জি কর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও চিত্তরঞ্জন শিশু সদনেও। এ দিন সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডার ও জরুরি পরিষেবা বন্ধ ছিল। এসএসকেএমের জরুরি বিভাগের সামনে সকাল থেকেই গার্ড রেল দিয়ে ব্যারিকেড করা হয়। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ এসএসকেএমের জরুরি বিভাগের সামনে প্রায় শ’চারেক জুনিয়র চিকিৎসক ধর্নায় বসে পড়েন।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

NRS Health Junior Doctors Strike
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy