Advertisement
E-Paper

দূষণ-নিম্নচাপেই দাপট গরমের

হাওয়া অফিসের পারদ যত না চড়ছে, গরম লাগছে তার চেয়ে অনেক বেশি! গত কয়েক বছর ধরেই গরমকালে অস্বস্তির ঠেলায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন মানুষজন। রোদে বাইরে বেরোলেই ঘেমেনেয়ে জবজবে হয়ে যাচ্ছে জামা। গরমটাও যেন ক্রমে চলে যাচ্ছে সহ্যের বাইরে। কখনও কখনও গরম বাতাস ঢুকে রীতিমতো নাকমুখে জ্বালা ধরাচ্ছে!

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ০৩:৩৩

হাওয়া অফিসের পারদ যত না চড়ছে, গরম লাগছে তার চেয়ে অনেক বেশি!

গত কয়েক বছর ধরেই গরমকালে অস্বস্তির ঠেলায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন মানুষজন। রোদে বাইরে বেরোলেই ঘেমেনেয়ে জবজবে হয়ে যাচ্ছে জামা। গরমটাও যেন ক্রমে চলে যাচ্ছে সহ্যের বাইরে। কখনও কখনও গরম বাতাস ঢুকে রীতিমতো নাকমুখে জ্বালা ধরাচ্ছে! এমন গরমেও আবহাওয়া অফিসে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাচ্ছে, থার্মোমিটারের পারদ কিন্তু ততটা চড়েনি। তা হলে গরম এতটা বেশি লাগছে কেন?

পরিবেশবিদ ও আবহবিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, মহানগরের এই অসহনীয় গরমের পিছনে অনেকটাই দায়ী দূষণ। কারণ, গত কয়েক বছরের হাওয়া অফিসের তথ্য ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, তাপমাত্রা যে খুব একটা বেড়ে গিয়েছে এমনটা নয়। অনেক সময়েই খাতায়-কলমে তাপমাত্রা স্বাভাবিক বা তার আশপাশেই ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু বাতাসে যে দূষিত পদার্থগুলি থাকে, তার জেরেই তাপমাত্রা এবং অস্বস্তি বাড়ছে। তবে আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা শুধু দূষণের উপরেই গরমের দায় চাপাতে নারাজ। গত ক’দিনের নাকাল করা গরমের প্রেক্ষিতে বাংলা থেকে ওড়িশা পর্যন্ত বিস্তৃত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখাকেও দায়ী করছেন তাঁরা।

হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, বাতাসের নিচুস্তরে নিম্নচাপ অক্ষরেখার জন্য জলীয় বাষ্প থাকছে। রাতে মেঘও জমছে। তার জেরে তৈরি হচ্ছে গুমোট গরম। মাঝরাত বা ভোরেও তাপমাত্রা কমছে না। ‘‘তাই দিনরাত সব সময়েই গরম মালুম হচ্ছে,’’ বলছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। তবে দূষণের কারণটাও উড়িয়ে দিচ্ছে না হাওয়া অফিস। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গরমের উপরে দূষণের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী।

এই প্রসঙ্গেই পরিবেশ দফতরের একটি সূত্র বলছে, অক্টোবর থেকে জুন, বছরের প্রায় আট মাস শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা থাকে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। শহরজুড়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বসানো একাধিক যন্ত্রে এই তথ্য ধরা পড়েছে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের এক মামলায় সেই তথ্য পেশও করেছেন রাজ্যের পরিবেশকর্তারা। দূষণের সঙ্গে গরম বেশি লাগার সম্পর্কটা ঠিক কী?

পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, গাড়ির ধোঁয়া-সহ নানা যন্ত্রপাতি থেকে কার্বনকণা মিশ্রিত দূষিত পদার্থ ক্রমাগত বাতাসে মিশছে। পাশাপাশি ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণও বাড়ছে। কার্বনকণা বাতাসে তাপমাত্রা ধরে থাকে। তার ফলেই তাপমাত্রা পারদে যতটা ধরা পড়ছে, তার থেকেও বেশি অস্বস্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষজনকে।

উদাহরণ হিসেবে আবহবিজ্ঞানীদের অনেকেই চলতি বছরের গরমের কথা বলছেন। মে মাসের গোড়া থেকেই শহরে গরম বাড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু তাপপ্রবাহ হয়নি। এমনকী, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরেও তাপমাত্রা সে ভাবে ওঠেনি। অথচ সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে, খাস কলকাতাতেই যেন এক টুকরো রাজস্থান বা মধ্যপ্রদেশ উঠে এসেছিল। একে তো অস্বস্তিকর গরম, তাতে হাজির হয়েছিল আর্দ্রতাও।

পরিবেশবিদেরা বলছেন, গরমে এমন নাকাল হওয়ার পিছনে অনেকটাই দায়ী মানুষই। সম্প্রতি দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দেশের বিভিন্ন শহরে একটি জনমত সমীক্ষা করেছিল ‘দি এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট’। সেই সমীক্ষায় উঠে এসেছে— গরম যে বাড়ছে, তা স্বীকার করেছেন ৮১ শতাংশ মানুষ। ৮০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের পিছনে মানুষের কাজকর্মই দায়ী। অনেকেই অবশ্য বলছেন, মানুষের কাজকর্মের মধ্যে প্রশাসনিক নীতি প্রণয়নকেও ধরা হয়েছে। তাঁরা জানান, ডিজেল বা কাটা তেলের মতো অপরিশোধিত জ্বালানি ব্যবহারের ফলে এই ধরনের কার্বন দূষণ বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি কলকাতায় সিএনজি-র মতো পরিচ্ছন্ন জ্বালানি নিয়ে মামলা করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তিনি বলছেন, ‘‘সরকারি উদাসীনতায় কলকাতায় পরিষ্কার জ্বালানি চালু হয়নি।’’

এর থেকে রেহাই মিলবে কী ভাবে?

আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, বৃষ্টিই হল এই গরম থেকে বাঁচার একমাত্র দাওয়াই। কারণ, তা হলে এক দিকে যেমন আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে তাপ বিকিরণে সাহায্য করবে, তেমনই বাতাসের কার্বন ও ধূলিকণাও বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে হাওয়াকে পরিশ্রুত করবে। এই প্রসঙ্গেই চলতি বছরের এপ্রিল মাসের উদাহরণ দিয়েছেন আবহাওয়া দফতরের এক কর্তা। তিনি বলেন, এ বছর এপ্রিলে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ঘনঘন ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। তখন তাপমাত্রা অনেক কমে গিয়েছিল। দূষণের মাত্রাও কমেছিল।

সেই সঙ্গে এখনই কলকাতাবাসীকে বৃষ্টির সুখবর শোনাতে পারছে না হাওয়া অফিস। কারণ, প্রশান্ত মহাসাগরে জলের তাপমাত্রা বেশি থাকায় মৌসুমী বায়ু দুর্বল হয়ে পড়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের চার দিন পরে কেরলে ঢুকে সেখানেই আটকে রয়েছে সে।

তাই বর্ষা কবে আসবে, প্রশ্ন করতেই মৌসম ভবনের এক বিজ্ঞানী বললেন, ‘‘কলকাত্তা আভি দূর হ্যায়।’’

kuntak chattopadhyay kolkata weather kolkata heat wave kolkata pollution heat and pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy