Advertisement
E-Paper

রেল থেকে বিমান, সব থইথই

মাটি হোক বা আকাশ— বৃষ্টিতে শান্তি নেই কোত্থাও! টানা বর্ষণে বিমানবন্দরের হ্যাঙার (বিমানের গ্যারাজ) যদি উপচানো গামলার চেহারা নেয়, পূর্ব রেলের লাইন অনেক জায়গাতেই টইটম্বুর কড়াই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৫ ০০:৫১
বিমানবন্দর

বিমানবন্দর

মাটি হোক বা আকাশ— বৃষ্টিতে শান্তি নেই কোত্থাও!

টানা বর্ষণে বিমানবন্দরের হ্যাঙার (বিমানের গ্যারাজ) যদি উপচানো গামলার চেহারা নেয়, পূর্ব রেলের লাইন অনেক জায়গাতেই টইটম্বুর কড়াই। যা পরিস্থিতি, পুরনো একটি যাত্রী-বাসে অফিস বসিয়ে কাজ চালু রেখেছেন এয়ার ইন্ডিয়ার হ্যাঙারের ইঞ্জিনিয়ারেরা। জল থইথই হ্যাঙারে বিমানের যন্ত্র সারাই করে কলকাতা থেকে বিমান চলাচল এখনও জারি রয়েছে। কিন্তু রেললাইনে জল জমে সিগন্যালিংয়ের ত্রুটিতে শুক্রবার সকালে দফায় দফায় বিপর্যস্ত হল ট্রেন চলাচল।

হ্যাঙারে এয়ার ইন্ডিয়ার ইঞ্জিনিয়ারদের অফিস আপাতত জলের তলায়। তিন দিনের বৃষ্টিতে ১৪ থেকে ১৮ নম্বর হ্যাঙার জুড়ে বিস্তীর্ণ এলাকার ৯০ শতাংশেই জল। সেখানে আছে বেশ কয়েকটি বিমান। জেট-এর একটি বিমান সারানো চলছে। এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘কিছু যন্ত্রপাতি টেবিলে, উঁচু তাকে তুলে রাখা হচ্ছে। কিন্তু, এত যন্ত্র থাকে যে পুরোটা এ ভাবে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না।’’

হ্যাঙারে প্রতি শিফ্‌টে ইঞ্জিনিয়ার-কর্মী মিলিয়ে থাকেন প্রায় ৩০ জন। তাঁরা বাড়ি থেকে নিয়ে আসছেন চামড়ার জুতো। পায়ে থাকছে হাওয়াই। হ্যাঙারে পৌঁছে প্যান্ট গুটিয়ে নেমে পড়ছেন কাজে। টেবিলে বসে, চেয়ারের উপরে পা তুলে কাজ চলছে। আর মাঝেমধ্যেই নোংরা জল ঠেলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টিতে জল হাঁটুর কাছাকাছি উঠে গিয়েছে। এ দিন সকাল থেকে আর অফিসে ঢুকতে না পারায় একটি পুরনো যাত্রী-বাসে অস্থায়ী অফিস বানানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে এক ইঞ্জিনিয়ার বলছিলেন, ‘‘এক হ্যাঙার থেকে অন্য হ্যাঙারে মারুতি ভ্যানে যাতায়াত করি। সকাল থেকে কয়েকটি হ্যাঙারে সেই ভ্যানও জল ঠেলে ঢুকতে পারছে না।’’

ওড়ার আগে প্রতিটি বিমানকে পরীক্ষা করে এই ইঞ্জিনিয়ারেরা শংসাপত্র দিলেই তা উড়তে পারে। এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘খালি পায়ে, রবারের জুতো পরে কাজ করছি। আর যাত্রীদের কাছে বিমানে যাওয়ার সময়ে পা মুছে চামড়ার জুতো-মোজা পরে নিতে হচ্ছে।’’

কলকাতা বিমানবন্দরের হ্যাঙারে জল জমা নতুন নয়। এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, বহু বার কর্তৃপক্ষকে বলেও লাভ হয়নি। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পরামর্শদাতা কমিটির সর্বভারতীয় চেয়ারম্যান, তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘গত দু’দিন একটু বেশিই বৃষ্টি হয়েছে। আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দিয়ে নিকাশির পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু তা কার্যকর করা যায়নি। এ বারও বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করব।’’ বিমানবন্দরের অধিকর্তা অনিল শর্মা জানান, দু’দিন ধরে পাম্প বসিয়েও লাভ হচ্ছে না। জল পাম্প করে যে নালা দিয়ে বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, সেখান থেকে তা ফিরে আসছে। নিকাশি ব্যবস্থার সমাধানই এখন প্রধান কাজ। পূর্ত দফতর ও আশপাশের পুরসভাদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’

তবে এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়া অন্য সংস্থার হ্যাঙারে জল জমে না। তাদের ইঞ্জিনিয়ারদের অফিস ঝকঝকে টার্মিনালের ভিতরে। আর, এয়ার ইন্ডিয়ার অবস্থা ক্রমেই সঙ্গীন হচ্ছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, বিমানবন্দরের পাঁচিল লাগোয়া রাজারহাটে নতুন নির্মাণের কারণে জমির উচ্চতা বেড়ে গিয়েছে। আর হ্যাঙারের পাশে দু’বছর আগে তৈরি নয়া টার্মিনালও উঁচু। সব মিলিয়ে হ্যাঙার এলাকা এখন গামলার মতো নিচু হয়ে গিয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থা কার্যত নেই।

তথৈবচ অবস্থা রেললাইনেরও। শিয়ালদহের বিভিন্ন শাখায় এ দিন ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা ও কলকাতা স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় লাইনে জল জমে সিগন্যাল ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ে। বাতিল হয় ৬০টি লোকাল ও দু’টি এক্সপ্রেস ট্রেন। পূর্ব রেল সূত্রের খবর, বারুইপুর, লক্ষ্মীকান্তপুর শাখায় বাতিল করতে হয়েছে ৪০টি লোকাল ট্রেন। মেন লাইনে কাঁকিনাড়া থেকে নৈহাটি পর্যন্ত ২০টি লোকাল ট্রেন বাতিল হয়েছে। কলকাতা স্টেশন থেকে বাতিল হয়েছে লালগোলা ও হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেস। কয়েকটি এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ার সময়ও বদলাতে হয়েছে।

লাইনে জল দাঁড়ানোয় চক্ররেল চলেছে মাঝেরহাট থেকে বি বা দী বাগ পর্যন্ত। পূর্ব রেলের মুখপাত্র রবি মহাপাত্রের অবশ্য দাবি, ‘‘রেললাইন আগের থেকে উঁচু হয়েছে। কিন্তু টানা তিন-চার দিন বৃষ্টিতে মানুষের ভোগান্তি রোখা পুরোটা সম্ভব হচ্ছে না।’’

plane service rain rail line Dum dum airport Sougata Roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy