স্কুলগুলিতে উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব। ফলে, মাধ্যমিকে ভাল ফল
করেও উচ্চ মাধ্যমিকে নিজের পছন্দ মতো বিষয় নিতে পারছে না বহু পড়ুয়া।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে স্কুলগুলিতে ভর্তি প্রক্রিয়া প্রায় শেষের পথে। প্রধান শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, পছন্দ মতো বিষয় নিয়ে
ভর্তি হতে না পারার সমস্যা বেশি গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বহু স্কুলে কলা, বিজ্ঞান বা বাণিজ্য শাখায় কোনও শিক্ষকই নেই। ইংরেজির মতো
আবশ্যিক বিষয় পড়ানোর মতো শিক্ষকও অমিল। এর ফলে বহু পড়ুয়া তাদের মনের মতো বিষয় নিতে পারছে না।
অনেক পড়ুয়াকে চলে যেতে হচ্ছে শহরের স্কুলে। কিন্তু গ্রাম থেকে শহরের স্কুলে গিয়ে পড়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই তাদের অনেকেরই।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকার কুমিরমারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রণয় মণ্ডল বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এক জনও স্থায়ী শিক্ষক নেই। তা সত্ত্বেও এ বার আমাদের স্কুল থেকে মধুমিতা সাউ নামে
এক ছাত্রী কলা বিভাগে ৯২.২ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। তার বিষয় ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, সংস্কৃত।’’ প্রণয় জানান, মধুমিতার ভাল ফল দেখে অনেকেই উচ্চ মাধ্যমিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন নিয়ে পড়তে চাইছে। কিন্তু ওই বিষয়গুলির কোনওটিরই শিক্ষক নেই।
নদিয়ার গাইনপাড়া পল্লি সম্মিলনী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শম্ভু
ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে রসায়ন এবং অঙ্কের শিক্ষক নেই। তাই এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় পড়ুয়া ভর্তি করতে পারছি
না। অথচ, বহু পড়ুয়া বিজ্ঞান শাখায় পড়তে আগ্রহী। স্কুলের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, স্কুলের তহবিল থেকে টাকা খরচ করে
আংশিক সময়ের শিক্ষকও নিতে পারব না।’’
‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন
মাইতির মতে, ‘‘একাদশে উঠে বহু পড়ুয়াই তাদের স্বপ্নের কেরিয়ার তৈরি করতে গিয়ে এ ভাবে বাধা পাচ্ছে। পছন্দ মতো বিষয় নিতে না পেরে স্কুলে যে বিষয়ের শিক্ষক আছেন, সেই বিষয় নিয়ে ভর্তি হতে হচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের অবস্থাই সব চেয়ে করুণ। সকলের পক্ষে তো হাজার হাজার টাকা খরচ করে শহরে গিয়ে পড়া সম্ভব নয়।’’
কেন এই দুরবস্থা? অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা শিক্ষক নেতা নবকুমার কর্মকারের মতে, ‘‘উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে গ্রামের শিক্ষকেরা শহরে চলে যাওয়ায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক-সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে।’’
যদিও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়েছে, যত দিন না শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে, তত দিন তারা একটি নতুন পদ্ধতিতে স্কুলগুলিতে পড়াশোনা চালানোর কথা ভেবেছে। সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অনেক সময়ে দেখা যায়, কোনও একটি স্কুলে যে বিষয়ের শিক্ষক আছেন, সেই স্কুলের আশপাশে অন্য স্কুলগুলিতে ওই বিষয়ের শিক্ষক নেই। এ ক্ষেত্রে যে স্কুলে শিক্ষক নেই, সেই স্কুলের পড়ুয়ারা যে স্কুলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক আছেন, সেখানে গিয়ে পড়ে আসবে।’’ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কর্তাদের কথায়, মৌখিক ভাবে নির্দেশ নয়, এই পদ্ধতিতে পড়ানোর জন্য বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)