Advertisement
E-Paper

‘হস্টেলের এই ঘরে আপনি আগে থাকুন স্যর’

মেডিক্যালের ইডেন হস্টেলের চারতলা বাড়ির মূল ফটকের সামনে আবর্জনা, কাদার স্তূপ। নীচের তলায় ভিজিটর্স রুম, ক্যান্টিনে ঘুরছে কুকুর, ইঁদুর। কুকুর, বিড়ালের লাফালাফির জেরে ছিঁড়ে গিয়েছে ভিজিটর্স রুমের সোফাও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০১:২৪
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাস। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাস। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

একটা রাত এই ঘরে আগে থাকুন স্যর। তার পর আমরাও থাকব!

ছাত্রদের মধ্যে থেকে দাবি উড়ে এল পরিদর্শকদের প্রতি।

হস্টেল না পাওয়া নিয়ে তোলপাড় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। শনিবার, ছাত্রদের অনশনের ১২তম দিনে অবশেষে হস্টেল পরিদর্শনের প্রয়োজনীয়তা বুঝে নড়ে বসলেন কর্তৃপক্ষ। কী ভাবে থাকেন ছাত্রেরা, ঘুরে দেখলেন কলেজের দুই শিক্ষক-চিকিৎসক। কয়েকটি ঘর ফাঁকা দেখে প্রশ্ন তুললেন, কেন সেখানে থাকছেন না ছাত্রেরা? ছাত্রেরা জানান, নীচের তলায় কুকুর-ইঁদুরের উৎপাতে থাকা যায় না। তাই রাতে দোতলায় অন্য ছাত্রদের ঘরে গিয়ে থাকতে বাধ্য হন তাঁরা। এর পরেই উড়ে এল ছাত্রদের সেই দাবি। পরিদর্শকদের দল অবশ্য সে সবে গুরুত্ব না দিয়েই বলে গেলেন, ‘এগুলো তো সব হস্টেলেই থাকে!’

মেডিক্যালের ইডেন হস্টেলের চারতলা বাড়ির মূল ফটকের সামনে আবর্জনা, কাদার স্তূপ। নীচের তলায় ভিজিটর্স রুম, ক্যান্টিনে ঘুরছে কুকুর, ইঁদুর। কুকুর, বিড়ালের লাফালাফির জেরে ছিঁড়ে গিয়েছে ভিজিটর্স রুমের সোফাও। দোতলায় উঠতেই দুর্গন্ধের জেরে শ্বাস নেওয়া দায়। বাথরুমে জমে জল। বারান্দাতেও ছড়িয়ে নোংরা। অধিকাংশ জানলাই ভাঙা, খোলা যায় না। যে ক’টি ঠিক রয়েছে, সেগুলিও খোলার উপায় নেই। কারণ, আবর্জনার দুর্গন্ধ। একই অবস্থা তিনতলায়। পরিদর্শকদের সঙ্গে বিল্ডিংয়ের চারতলায় উঠে দেখা গেল, সেখানকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। টিনের চালের নীচে সাদা টালি লাগানো হয়েছে। অধিকাংশ টালিই ঝুলছে। জলের ট্যাঙ্কের নীচে জল পড়ে জমে রয়েছে। টালি ভেঙে আহত হওয়ার আশঙ্কায় বন্ধুদের ঘরে থাকছেন সে তলের অধিকাংশ আবাসিক।

হস্টেলের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের প়ড়ুয়ারা। ১৬ জন পড়ুয়া অনশন করছেন। তাঁদের অভিযোগ, এমবিবিএস তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের অধিকাংশ প়ড়ুয়া ঘর পাননি। হস্টেলের বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। তাঁদের দাবি, আবেদন অনুযায়ী ঘর নির্ধারিত করুন কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এ দিন ইডেন হস্টেল পরিদর্শনে যান মেডিক্যালের অঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শিবাশিস ভট্টাচার্য ও নিউরো-মেডিসিনের প্রধান চিকিৎসক সন্দীপ পাল। তাঁরা দেখেন, নীচের তলার অধিকাংশ ঘরেই পড়ুয়াদের থাকার জায়গা নেই। কারণ, সেখানে কোথাও থাকেন ক্যান্টিনের কর্মী তো কোথাও হাসপাতালের অন্য কোনও কর্মী। ঘর ভাড়া বাবদ বেতন পাওয়া সত্ত্বেও কেন হস্টেলে তাঁদের থাকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে? উত্তর মেলেনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।

হস্টেলের একাধিক ঘরের শোচনীয় অবস্থার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা নিয়েও সরব হন পড়ুয়ারা। তাঁরা জানান, এমসিআই-এর নিয়ম অনুযায়ী, এক ঘরে তিন জন থাকবেন। কিন্তু ওই হস্টেলে এক ঘরে চার জন এমনকি, পাঁচ জন করেও থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, অনেক ঘরই বসবাসের অযোগ্য। পড়ুয়াদের অভিযোগ, বেশি সমস্যা হয় বর্ষায়। এক পড়ুয়ার বক্তব্য, ‘‘ডেঙ্গি রোগীদের চিকিৎসা করি। পরিচ্ছন্নতা নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছি। এ দিকে হস্টেলেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে থাকি। পরিচ্ছন্নতা কোথাও নেই! এ ভাবেই থাকতে বাধ্য হই।’’

কর্তৃপক্ষ যদিও হস্টেলের অবস্থা নিয়ে কথা বলতে নারাজ। এক কর্তা বলেন, ‘‘আপাতত ঘর নিয়ে সমস্যা মেটানো হোক। পরে পুনর্নির্মাণ নিয়ে আলোচনা হবে।’’ পড়ুয়াদের একাংশ জানাচ্ছেন, দীর্ঘ কয়েক বছর পরে কর্তৃপক্ষের তরফে হস্টেল পরিদর্শন হল। কী ভাবে তাঁরা থাকেন, সে দিকে কখনও কেউ নজরই দেন না!

Hostel Medical College Calcutta Hunger Strike
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy