Advertisement
E-Paper

মেয়েকে নিয়ে পুড়ে মৃত বধূ, সন্দেহ আত্মহত্যা

অয়নদের ঘরের পাশেই তাঁর ছোট কাকার ফ্ল্যাট। ওই যুবকের কাকিমা জানান, কয়েক দিন আগেই বড় মেয়ে অরিত্রিকাকে স্কুলে ভর্তি করেছেন পিঙ্কি। এ দিন তাকে স্কুলে দিয়ে এসে ছোট মেয়েকে স্নান করান পিঙ্কি

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৫০
দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ডোনা ও জিয়াংসির।

দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ডোনা ও জিয়াংসির।

চার বছরের মেয়েকে স্কুলে দিয়ে ফিরেছিলেন মা। বাড়ি এসে এক বছর দু’মাসের মেয়েকে স্নান করিয়ে মুখে চিনি দিয়ে শুইয়ে রেখেছিলেন বিছানায়। কিছু ক্ষণ পরে মেয়েকে খাওয়াবেন বলে ভাতও মেখে রেখেছিলেন ওই গৃহবধূ। এই পর্যন্ত সবই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু বুধবার সকালে আচমকাই ওই গৃহবধূর আর্ত চিৎকার এবং ঘরের জানলা দিয়ে গলগল করে বেরোনো কালো ধোঁয়াই সব ওলটপালট করে দিল।

অগ্নিদগ্ধ মা-মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা লড়াইয়ের পরে মৃত্যু হল দু’জনেরই। প্রাথমিক তদন্তে পারিবারিক অশান্তির জেরে আত্মহত্যা বলেই অনুমান পুলিশের। বরাহনগরের অক্ষয়কুমার মুখার্জি লেনের এই ঘটনায় প্রতিবেশীদের একাংশের অভিযোগ, নিত্যদিন ওই পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকত। একই দাবি করেছেন ওই গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকেরাও।

পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ চারতলা আবাসনের একতলার ফ্ল্যাট থেকে অগ্নিদগ্ধ পিঙ্কি রায় (২৬) ওরফে ডোনা ও তাঁর কন্যাসন্তান জিয়াংসিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাত দুটো নাগাদ মৃত্যু হয় পিঙ্কির। এসএসকেএমে রাত আড়াইটে নাগাদ মারা যায় জিয়াংসি। বৃহস্পতিবার দু’জনেরই দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে।

বরাহনগরের ওই এলাকার দীর্ঘ দিনের বাসিন্দা অসীম রায়। সাত বছর আগে তাঁর ছেলে অয়নকে ভালবেসে বিয়ে করেন বনহুগলি জিএস-২ এলাকার বাসিন্দা রবি চন্দের মেয়ে পিঙ্কি। রাজাবাজারে অয়নদের আনাজের ব্যবসা। এ দিন দেখা যায়, অয়নদের ফ্ল্যাটে তালা। রান্নাঘরের জানলায় কালো ধোঁয়ার দাগ। পাশেই অয়নদের শোয়ার ঘরের জানলা। খাটে পাতা তোশকের একাংশ পুড়ে গিয়েছে। তার উপরে একটি বঁটি।

অয়নদের ঘরের পাশেই তাঁর ছোট কাকার ফ্ল্যাট। ওই যুবকের কাকিমা জানান, কয়েক দিন আগেই বড় মেয়ে অরিত্রিকাকে স্কুলে ভর্তি করেছেন পিঙ্কি। এ দিন তাকে স্কুলে দিয়ে এসে ছোট মেয়েকে স্নান করান পিঙ্কি। তার জন্য ভাতও মাখেন। কাকিমা দাবি করেন, সাড়ে ১১টা নাগাদ পিঙ্কির শাশুড়ি দীপাদেবী ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আচমকাই ওই গৃহবধূর চিৎকারে স্থানীয় কয়েক জন গিয়ে দেখেন, ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। বারবার ধাক্কা দেওয়ায় পিঙ্কিই তা খুলে দেন। দেখা যায়, খাটে অগ্নিদগ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে জিয়াংসি। সারা গায়ে আগুন নিয়ে ছটফট করছেন পিঙ্কি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাকিমা বলেন, ‘‘পিঙ্কিকে বোঝাতাম। কিন্তু বুঝল না মেয়েটা।’’

মর্মান্তিক: এ ভাবেই পুড়েছে খাটের তোশক।

পিঙ্কির বাপের বাড়িতে পিসি শ্যামা দে বলেন, ‘‘সবে মেয়েটা কলেজে ভর্তি হয়েছিল। তাই আমরা বিয়েতে রাজি ছিলাম না। বিয়ের পর থেকেই শুরু হল অশান্তি।’’ তিনি আরও জানান, বিয়ের পরেই রাগ করে প্রায় ছ’মাস বাপের বাড়িতে ছিলেন ওই তরুণী। পরে অয়ন নিয়ে যান। সেই সময়ে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পেলেও তা ছেড়ে দিতে হয় পিঙ্কিকে। মাঝেমধ্যেই অশান্তির জেরে বাপের বাড়ি চলে আসতেন ওই তরুণী। এক প্রতিবেশী জানান, বাপের বাড়ি থেকে মাত্র দু’মাস আগেই ফিরেছিলেন পিঙ্কি। গত রবিবার থেকে লাগাতার অশান্তি চলছিল।

পিঙ্কির বোন জয়িতা চন্দের অভিযোগ, ঘটনার পরেও অয়নদের বাড়ি থেকে কিছুই জানানো হয়নি। পিঙ্কির এক কাকা অক্ষয়কুমার মুখার্জি লেনেই লটারির টিকিট বেচেন। ওই দিন তিনি দেখেন, অগ্নিদগ্ধ একটি বাচ্চাকে নিয়ে লোকজন ছোটাছুটি করছে। পরে জানতে পারেন কী ঘটেছে। পিঙ্কির এক দিদি রিঙ্কি বলেন, ‘‘সোমবার রাতে আমায় ফোন করে বোন বলল, ‘দিদি আর পারছি না। কিছু একটা কর। আমায় নিয়ে চল।’’’

—নিজস্ব চিত্র।

Suicide আত্মহত্যা Girl Woman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy