Advertisement
E-Paper

‘আচ্ছা, ও তো আর নেই! আমি কেন বেঁচে গেলাম?’

এখন খানিকটা ঠিক আছি। তবে শরীরের এক দিক পুরো অসাড়। ডান কানে ভাল শুনতে পাচ্ছি না। সকাল থেকে মা-বাবাকে দেখলেই অজয়ের কথা জানতে চেয়েছি। ওরা শুধু বলেছে, ‘‘আর ভেবে লাভ নেই। অজয় যেখানেই থাকুক, ভাল থাকবে।’’

মনীষা মল্লিক

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৩:২৯
মর্মান্তিক: শনিবার বিকেলে ময়দানে বেড়াতে গিয়ে নিজস্বী তুলেছিলেন মনীষা ও অজয়। তার কিছু পরেই ঘটে দুর্ঘটনা।

মর্মান্তিক: শনিবার বিকেলে ময়দানে বেড়াতে গিয়ে নিজস্বী তুলেছিলেন মনীষা ও অজয়। তার কিছু পরেই ঘটে দুর্ঘটনা।

এক হাতে ছাতা আর অন্য হাতে আমাকে আঁকড়ে ধরেছিল। তখন খুব বাজ পড়ছে। বাজ-এ আমার বরাবরই ভয়। আমিও যত শক্ত করে পারি, ওর হাতটা খামচে ধরেছিলাম। হঠাৎ যে কী হল! বিকট আওয়াজের সঙ্গে চোখ ঝলসে দেওয়া আলো। আমাদের সব স্বপ্ন শেষ করে দিল। আচ্ছা, ও তো আর নেই! আমি কেন বেঁচে গেলাম? আমাকেও কেন নিয়ে গেল না?

অজয়কে দু’বছর ধরে চিনি। আলাপ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই ও আমায় বিয়ের প্রস্তাব দেয়। স্পষ্ট বলে দিয়েছিলাম, বাড়িতে জানাও। তা হলে রাজি আছি। সময় না নিয়েই ও বাড়িতে বলে দেয়। গত ফেব্রুয়ারিতেই আমাদের দুই বাড়ির কথা হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতেই বিয়ে। দিন-ক্ষণ ঠিক হওয়ার কথা ছিল এর মধ্যেই। আর কেউ এ সব নিয়ে কথা বলবে না। ঘুরতে বেরোনোর জন্যও আর কেউ বলবে না আমায়!

রোজকার মতো শনিবার বিকেলে বেরোনোর কথা ঠিক হয় আমাদের। ভেবেছিলাম, রাখি উৎসবের জন্য কেনাকাটা করব। তা ছাড়া অজয়কে আমি বহু দিন আগে বলেছিলাম, একটা লহেঙ্গা কিনতে চাই। ও বলল, ‘‘তুমি লহেঙ্গার কথা বলছিলে, কিনে নিও।’’ অজয় বলে, ওর বোনের জন্যও লহেঙ্গা নেওয়া যেতে পারে। তবে সে সব আর কেনা হয়নি। তার আগেই তো...!

দুপুর থেকেই মনে হচ্ছিল বৃষ্টি হবে। লাল ছাতাটা সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিলাম। প্রথমে ময়দানে কিছুটা সময় কাটিয়ে মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে সেনোটাফের সামনে দিয়ে হাঁটছিলাম। আমায় আইসক্রিম খাইয়েছিল। কেনাকাটার পরে রাতে খাওয়া-দাওয়া করে ফেরার কথা ছিল। হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টি নামল। দু’জনেই সেনোটাফের সামনেটায় গিয়ে দাঁড়ালাম। ছাতার নীচে কোনও মতে। বৃষ্টির সঙ্গে তখন একের পর এক বাজ পড়া শুরু করেছে। ভয়ে ওকে আঁকড়ে ধরে ছিলাম। হঠাৎ প্রবল আলোয় চোখ ঝলসে গেল। সঙ্গে বিকট আওয়াজ। আর কিচ্ছু মনে নেই।

রবিবার হাসপাতালে মনীষা (ডান দিকে)। ছবি: নিজস্ব চিত্র ও নীলোৎপল বিশ্বাস

এক বার জ্ঞান ফিরতে দেখলাম, আমার থুতনি দিয়ে রক্ত পড়ছে। পাশেই পড়ে রয়েছে অজয়। গায়ে জোর নেই যে ওকে ডাকব। দেখলাম, ভিড় করে লোকজন আমাদের দেখছে। ও নড়ছেও না!

আরও পড়ুন: ‘এ ভাবে প্রাণটা চলে গেল?’, ডুকরে উঠলেন মনীষার মা

পরে দেখি, হাসপাতালে শুয়ে আছি। আমার থেকে ফোন নম্বর নিয়ে পুলিশ বাড়িতে খবর দেয়। জানতে চায়, কী করে এ রকম হল! পরে মা এসে বলল, ‘‘অজয় আর নেই।’’

এখন খানিকটা ঠিক আছি। তবে শরীরের এক দিক পুরো অসাড়। ডান কানে ভাল শুনতে পাচ্ছি না। সকাল থেকে মা-বাবাকে দেখলেই অজয়ের কথা জানতে চেয়েছি। ওরা শুধু বলেছে, ‘‘আর ভেবে লাভ নেই। অজয় যেখানেই থাকুক, ভাল থাকবে।’’

না ভেবে পারি? ওর সঙ্গে থাকব বলেই তো কত কী ভেবে ফেলেছিলাম। সেই ভাবনাগুলোর এ বার কী হবে...?

Thunder strike Boy Girl
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy