Advertisement
E-Paper

রাত ২.৩৫: মোবাইলে কথা, ৩টে: ঘুম, আরজি করে মৃতা চিকিৎসকের জীবনের শেষ কয়েক ঘণ্টা কেমন ছিল?

বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ খাওয়াদাওয়া শেষে দায়িত্ব সহকর্মীদের বুঝিয়ে দিয়ে জুনিয়র চিকিৎসক চলে যান সেমিনার হলে। পড়াশোনা করতে করতে খানিক বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তার পর আরজি করে কী ঘটেছিল?

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০২৪ ২২:৩৮
আরজি কর হাসপাতাল।

আরজি কর হাসপাতাল। —প্রতীকী চিত্র।

রাত তখন ৩টে। বৃহস্পতিবার তখনও একটি কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়েছিলেন তিনি। তখনও ‘সব স্বাভাবিক’ ছিল। শুক্রবার সকালে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যু ঘিরে শোরগোল রাজ্য রাজনীতিতে। ঠিক তখনই ভিন্ন কারণে হুলস্থুল শুরু হয় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সেমিনার হলঘরে। নিম্নাঙ্গ অনাবৃত অবস্থায় মেলে এক জুনিয়র চিকিৎসকের দেহ। গত বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ষণ এবং মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে পর্যন্ত কী কী করেছিলেন ওই চিকিৎসক? পুলিশি তদন্তে উঠে এল তার কিছু তথ্য।

আরজি কর-কাণ্ডে তদন্তের জন্য সোমবার মোট সাত জন চিকিৎসককেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল লালবাজারে। এঁরা ঘটনার দিন ‘অন ডিউটি’ ছিলেন। এঁদের মধ্যে চার জন মৃতা জুনিয়র চিকিৎসকের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছিলেন। বাকি তিন জন ওই চার চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ওই দিন। প্রয়োজনে এঁদের আবার লালবাজারে ডাকা হতে পারে। পুলিশের একটি সূত্রে খবর, ঘটনার রাতে ১১টা নাগাদ খাওয়াদাওয়ার পর দায়িত্ব সহকর্মীদের বুঝিয়ে দিয়ে জুনিয়র চিকিৎসক চলে যান সেমিনার হলে। পড়াশোনা করতে করতে খানিক বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। রাত ২টো নাগাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু কথা বলতে সেমিনার হলে আসেন হাসপাতালের এক জন। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, দায়িত্বে থাকা আর এক চিকিৎসকের সঙ্গে ওই ব্যাপারে কথা বলতে বলে পড়াশোনা করতে থাকেন জুনিয়র চিকিৎসক। সেই কথার পর তিনি চলে যান।

তদন্তে উঠে আসে রাত ২টো নাগাদ একটি মেসেজ আসে নির্যাতিতার মোবাইলে। মেসেজটি করেছিলেন তাঁর এক পাড়াতুতো বোন। সঙ্গে সঙ্গে ‘রিপ্লাই’ করেননি ওই মেসেজের। ২টা ৩৫ মিনিটে মেসেজের জবাব দেন। অর্থাৎ, তখনও সব কিছু ‘স্বাভাবিক’ ছিল বলে ধরে নেওয়া যায়।

পুলিশ সূত্রে খবর, তার পর রাত ৩টে নাগাদ হাসপাতালের এক কর্মী হাসপাতালেরই কারও খোঁজে সেমিনার হলে গিয়েছিলেন। কিন্তু, সেখানে তাঁকে পাননি। তিনি দেখেন, লাল রঙের একটি কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে রয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসক। তিনি চলে যান। ধরে নেওয়া হচ্ছে, তার পরেই সেমিনার হলে ঢোকেন অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার।

সকালে যখন জুনিয়র চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়, তখন তাঁর গায়ে ওই লাল কম্বলটি ছিল না। গায়ে গোলাপি রঙের চুড়িদার ছিল। তবে নিম্নাঙ্গে কোনও পোশাক ছিল না। মুখের মাস্কটি দেহের খানিক দূরে পড়েছিল। মাথার কাছে ছিল ল্যাপটপ। সেটি বন্ধ ছিল। তার উপরে একটি ডায়েরি এবং মৃত চিকিৎসকের মোবাইল ফোনটি ছিল। তবে মাথার কাছে থাকা প্লাস্টিকের জলের বোতলটি বন্ধ অবস্থায় উল্টে পড়ে ছিল।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ওই সেমিনার হলঘরে রাতে যেতে হলে লিফ্‌ট ব্যবহার করতে হয়। লিফ্‌টের ঠিক উপরেই রয়েছে একটি সিসি ক্যামেরা। অর্থাৎ, সিভিক ভলান্টিয়ার ব্যতীত কেউ সেমিনার হলে ঢুকলে তাঁকে দেখা যেত। কিন্তু, কেউ আগে থেকে ওই সেমিনার হলে ঢুকে থাকলে? পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, ওই ঘরে মোট তিন জন রাতে যাওয়া-আসা করেছেন। তবে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অবিশ্বাসযোগ্য কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট কোনও কাজে গিয়েছেন এবং যাতায়াতের পথে কেউ না কেউ তাঁদের দেখেছেন।

অন্য দিকে, সোমবার আরজি কর-কাণ্ডের তদন্তের মোড় অন্য দিকে ঘোরার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ দাবি করছে, মৃতার শরীরের কোনও হাড় ভাঙা (ফ্র্যাকচার) নেই। যদিও শরীরের উপরিভাগে ক্ষত রয়েছে। প্রসঙ্গত, ঘটনার পরে প্রথম থেকেই কোনও কোনও মহল থেকে দাবি করা হচ্ছিল, মৃতার ‘পেলভিক বোন ’এবং ‘কলার বোন’ ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। যা থেকে বিভিন্ন তত্ত্ব তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু সেই তথ্য উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

RG Kar Medical Hospital Kolkata Police doctor death Investigation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy