গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়ার একের পর এক ঘটনা ঘটলেও জাল লাগিয়ে বিদ্যাসাগর সেতুর উপরে বাড়তি ভার চাপাতে রাজি নন এইচআরবিসি কর্তৃপক্ষ। ফাইল ছবি।
গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়ার একের পর এক ঘটনা ঘটলেও জাল লাগিয়ে বিদ্যাসাগর সেতুর উপরে বাড়তি ভার চাপাতে রাজি নন ‘হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স’ (এইচআরবিসি) কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, ঝাঁপ দেওয়ার প্রবণতা আটকাতে সেতুতে রেলিং বসানো হয়েছে। এর উপরে আবার জাল বসালে সেতুর উপরে চাপ বাড়বে। তাতে সেতুর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এইচআরবিসি-র চেয়ারম্যান তথা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার জানান, সেতুর রেলিংয়ে গ্রিল বসানোর কাজ শেষ হয়নি। তবে, ঝাঁপ আটকাতে পুলিশকে আরও বেশি সক্রিয় হতেই হবে। তিনি বলেন, ‘‘জাল লাগিয়ে কোনও ভাবেই সেতুর ওজন আর বাড়ানো যাবে না। এক মানুষ সমান রেলিং রয়েছে। এর উপরে জাল লাগালে সৌন্দর্যায়ন তো নষ্ট হবেই, সেতুরও বিপদ বাড়বে।’’
কল্যাণ এ দিন কলকাতা পুলিশের ওই এলাকার আধিকারিকদের একাংশের বিরুদ্ধেই কার্যত তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি ঘন ঘন ওই সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করি। দেখি, তরুণ-তরুণীরা অবাধে সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমার প্রশ্ন, পুলিশ কী করে এটা হতে দিচ্ছে? আজ কেউ এসে ঘুরে বেড়াবেন, কাল কেউ এসে ঝাঁপ দেবেন! এইচআরবিসি-কে তার দায় নিতে হবে কেন? আমি পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের বিষয়টি জানাব।’’ এইচআরবিসি সূত্রের খবর, বিদ্যাসাগর সেতুর ভালই বয়স হয়েছে। আগামী ২০-২৫ বছর ওই সেতুকে মজবুত রাখতে ইতিমধ্যেই নীচের অংশে কাজ শুরু হয়েছে। তাই নতুন করে জাল বসানো সম্ভব নয়।
পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিকের যদিও দাবি, ‘‘এক বছর আগে জাল লাগানোর আর্জি জানিয়ে আমরা যখন চিঠি দিয়েছিলাম, তখন এইচআরবিসি বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলেছিল।’’ যদিও চেয়ারম্যানের বক্তব্য নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁর ব্যাখ্যা, অনেকেই গাড়ি কিংবা বাইক নিয়ে সেতুতে ওঠার পরে সেখানে নেমে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের একার পক্ষে কতটা নজরদারি চালানো সম্ভব? যাঁরা ঝাঁপ দিয়েছেন, সকলেই বাইক নিয়ে এসে সেতুতে সেটি রেখে, তার পরে ঝাঁপ দিয়েছেন। কেউ আবার গাড়ি দাঁড় করিয়ে নেমে পড়েছেন।’’ তবে, সেতুর মাঝখানে পুলিশ গাড়ি দাঁড়াতে দেবে কেন, উঠেছে সেই প্রশ্নও। যদিও ওই পুলিশকর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘অনেক সময়ে গাড়ির চালককে জরুরি প্রয়োজন আছে বলে যাত্রীরা নেমে যান। কিন্তু, পুলিশ দেখতে পেলে ব্যবস্থা নেয়।’’
উল্লেখ্য, গত ২০ দিনে বিদ্যাসাগর সেতু থেকে দু’জন ঝাঁপ দিয়েছেন। ঝাঁপ দেওয়ার আগে তাঁরা নিজেদের মোটরবাইক সেতুর উপরে রেখে ভিডিয়ো কলে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথাও বলেন। পুলিশ চাইছে, রেলিংয়ের পরিবর্তে সেখানে জাল লাগানো হোক। তা হলে কেউ ঝাঁপ দেওয়ার জন্য উপরে উঠতে পারবেন না। কিন্তু, জালের ভার বহনের ক্ষমতা বিদ্যাসাগর সেতুর নেই বলেই এইচআরবিসি-র দাবি।
পুরনো মেট্রোয় সম্ভব না-হলেও আত্মহত্যা ঠেকাতে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় স্ক্রিন ডোর বসানো হয়েছে। এখন পুলিশ ও এইচআরবিসি মিলে তেমনই কোনও উপায় বিদ্যাসাগর সেতুর ক্ষেত্রে বার করতে পারে কি না, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy