কাতারে কাতারে: ময়দান মেট্রো স্টেশন। শনিবার, বড়দিনের সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।
বড়দিনের সন্ধ্যায় ভিড় নিয়ন্ত্রণে মেট্রোর পক্ষ থেকে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তাল কাটল কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয়ের ‘অভাবে’। স্রোতের মতো ভিড় আছড়ে পড়ল ময়দান, পার্ক স্ট্রিট, এসপ্লানেড এবং রবীন্দ্র সদন স্টেশনে। এর মধ্যে ভিড় সামলাতে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে সব চেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় ময়দান স্টেশনে। প্ল্যাটফর্মে মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ের কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কয়েক বার মেট্রো স্টেশনের প্রবেশপথ বন্ধ করে দিতে হয়। ভিড় সরলে ফের যাত্রীদের ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
তবে শুধু মেট্রো স্টেশনই নয়, শনিবার সন্ধ্যায় শহরের বিভিন্ন জায়গায় উপচে পড়া ভিড়ের চোটে কার্যত থমকে গিয়েছিল যান চলাচল। জওহরলাল নেহরু রোড, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড, শেক্সপিয়র সরণি, পার্ক সার্কাস সাতমাথার মোড়— সবই ছিল যানজটে রুদ্ধ। মেট্রো এবং সরকারি-বেসরকারি বাস ছাড়া যাত্রীদের অন্যত্র যাওয়ার কোনও অবলম্বন চোখে পড়েনি। তীব্র যানজটের কারণে অ্যাপ-ক্যাব পেতেও ব্যর্থ হন অনেকে।
সমস্যার শুরু পুলিশের পক্ষ থেকে পার্ক স্ট্রিটকে একমুখী রাস্তা হিসাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পর থেকেই। শনিবার সন্ধ্যা নামতেই পার্ক স্ট্রিটকে কেন্দ্র করে ভিড় জমে। রাত আটটা বাজার আগেই পার্ক স্ট্রিট, মির্জা গালিব স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিটে থিকথিক করতে দেখা গিয়েছে কালো মাথা। পুলিশের পক্ষ থেকে পার্ক স্ট্রিট, মির্জা গালিব স্ট্রিট দিয়ে জনতাকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও ওই রাস্তা ধরে ফেরার সুযোগ ছিল না।
এমনকি, সেই ভিড়কে মল্লিকবাজারের দিকেও যেতে দেওয়া হয়নি।
তার বদলে অ্যালেন পার্ক সংলগ্ন ক্যামাক স্ট্রিট দিয়ে মিডলটন রো-এর দিকে ভিড়কে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ফলত, ওই রাস্তা দিয়ে আসা ভিড় স্রোতের মতো আছড়ে পড়েছে জীবনদীপ সংলগ্ন ময়দান মেট্রো স্টেশনের প্রবেশপথে। অন্য দিকে, ক্যামাক স্ট্রিট দিয়ে আসা ভিড় শেক্সপিয়র সরণি, রবীন্দ্র সদন এবং জওহরলাল নেহরু রোডে আসায় সেখানেও তীব্র যানজট হয়। তবে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, পার্ক স্ট্রিটে উৎসবমুখী জনতার ভিড় যাতে অন্য রাস্তায়ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তার জন্যই পার্ক স্ট্রিট একমুখী রাখা হয়েছিল।
মেট্রোর পক্ষে ভিড় সামলাতে পার্ক স্ট্রিটে মেট্রো ভবন সংলগ্ন স্টেশনের গেটটি যাত্রীদের প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। মির্জা গালিব স্ট্রিট সংলগ্ন গেট এবং রাস্তার অপর প্রান্তের গেট নির্দিষ্ট করা ছিল যাত্রীদের বেরোনোর জন্য। কিন্তু পার্ক স্ট্রিট একমুখী করে দেওয়ায় সেই পরিকল্পনা কাজে আসেনি। ময়দান স্টেশনে ঢুকতে না পারা যাত্রীদের একাংশ জওহরলাল নেহরু রোড ধরে হেঁটে এসে পার্ক স্ট্রিটে মেট্রোয় ওঠার চেষ্টা করেছেন। শনিবার মেট্রোয় মোট যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষ ৩৩ হাজারের কাছাকাছি। যার মধ্যে স্মার্ট কার্ডের যাত্রী ২ লক্ষ ২৫ হাজারের কাছাকাছি। টোকেনের যাত্রী ছিলেন দু’লক্ষের বেশি। ওই ভিড় সামলাতে পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন চারটি স্টেশনে প্রবল চাপ তৈরি হয়।
মেট্রো রেলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, ‘‘ভিড়ের চাপ এত ছিল যে ময়দান এবং পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে ঢোকার গেট মাঝেমধ্যে বন্ধ রেখে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে। একাধিক ট্রেনকে বেশি সময় দাঁড়াতে হয়েছে। প্ল্যাটফর্ম খালি হওয়ার পরে ট্রেন ছেড়েছে।’’
মেট্রো সূত্রের খবর, ভিড় সামলাতে শনিবার ২৩০টি ট্রেনের সঙ্গে অতিরিক্ত ছ’টি ট্রেন চালাতে হয়। দমদম থেকে ৫৯ হাজার, এসপ্লানেড থেকে ৪১ হাজার এবং রবীন্দ্র সদন থেকে ৩৩ হাজার যাত্রী টিকিট কেটেছেন। তবে, এই তথ্য যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশের খতিয়ান। যে সব যাত্রী পার্ক স্ট্রিট ও সংলগ্ন চারটি স্টেশনে নেমেছেন, সেই সংখ্যা অনেক বেশি। মেট্রোকর্তাদের দাবি, সময় মতো পদক্ষেপ না করলে ভিড়ের চাপে সমস্যা আরও বাড়তে পারত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy