Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ঝুলছেন মা, পাশে গলা কাটা শিশু

শুভজিতের বক্তব্য, বারবার বেল বাজিয়ে, দরজায় ধাক্কা দিয়েও ভিতর থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। শেষে দরজা ভেঙে তিনি ভিতরে ঢোকেন। দোতলায় উঠে দেখেন, শোয়ার ঘরে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে রয়েছেন সোমা। বিছানায় পড়ে একরত্তি অদিতির গলা কাটা দেহ।

বরাহনগরের সেই বাড়িতে পুলিশ। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

বরাহনগরের সেই বাড়িতে পুলিশ। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০১:০০
Share: Save:

বারবার ফোন করেও স্ত্রীকে না পেয়ে সময়ের অনেক আগেই অফিস থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন স্বামী। বন্ধ দরজা ভেঙেই ঘরে ঢোকেন। দোতলায় গিয়ে আবিষ্কার করেন স্ত্রীর ঝুলন্ত দেহ। পাশেই পড়ে ছিল তাঁর দেড় বছরের ছোট্ট মেয়ের গলা কাটা শরীর।

মঙ্গলবার দুপুরের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বরাহনগরের আর এন চ্যাটার্জি রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত মহিলার নাম সোমা ভৌমিক (২৮)। তাঁর মেয়ের নাম অদিতি ভৌমিক। এই ঘটনায় পুলিশ সোমার স্বামী শুভজিৎ ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। মেয়েকে খুন করে মায়ের আত্মহত্যা, নাকি দু’জনকেই খুন করা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। দেহ দু’টি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডি সি (‌জোন ২) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘আমরা সব দিকই খতিয়ে দেখছি। তদন্ত আরও এগোলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।’’

শুভজিৎ ওরফে সুজন কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। ২০০৮ সালে আলমবাজারের সোমার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। আর এন চ্যাটার্জি রোডে তাঁর দোতলা বাড়ি। সেই বাড়িতে স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে থাকতেন শুভজিৎ। তাঁর মা অসীমা ভৌমিক তেঘরিয়ার একটি ফ্ল্যাটে একা থাকেন। শুভজিতের এক দিদি থাকেন দিল্লিতে। পড়শিদের সঙ্গে তেমন মেলামেশা করতেন না তাঁরা কেউই। তবে স্বামী-স্ত্রীর যে প্রায়ই অশান্তি হত, তা জানতেন প্রতিবেশীরা।

ঠিক কী ঘটেছিল এ দিন? শুভজিৎ পুলিশকে জানিয়েছেন, এ দিন সকালে স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি হয়েছিল তাঁর। পরে তা মিটেও যায়। তিনি সকাল ন’টা নাগাদ কাজে বেরিয়ে যান। অফিসে পৌঁছে সোমাকে বারবার চেষ্টা করেও ফোনে না পেয়ে চিন্তা বাড়ে তাঁর। শেষে উদ্বেগে আর অফিসে বসে থাকতে পারেননি। বিকেল ৩টে নাগাদ বাড়ি ফিরে আসেন।

শুভজিতের বক্তব্য, বারবার বেল বাজিয়ে, দরজায় ধাক্কা দিয়েও ভিতর থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। শেষে দরজা ভেঙে তিনি ভিতরে ঢোকেন। দোতলায় উঠে দেখেন, শোয়ার ঘরে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে রয়েছেন সোমা। বিছানায় পড়ে একরত্তি অদিতির গলা কাটা দেহ। তাঁর কান্না আর চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা।

শুভজিতের ঘরে ঢুকে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন পড়শিরাও। তাঁদেরই এক জন গোপাল দে। তিনি বলেন, ‘‘বীভৎস দৃশ্য। ঘরে ঢোকার আগে এমন ঘটনার কথা কল্পনাও করতে পারিনি। কী করব, বুঝতে পারছিলাম না।’’ পরে পড়শিরাই অবশ্য বরাহনগর থানায় খবর দেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সোমার মানসিক সমস্যা ছিল বলে তাঁরা জানতেন। এর আগেও তিনি এক বার আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, সেই তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ আসার আগেই অবশ্য সোমার দেহ নামিয়ে ফেলা হয়। তারা গিয়ে দেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। আটক করা হয়

শুভজিৎকে। ওই ঘর থেকে বেশ কিছু জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে যে অস্ত্র দিয়ে অদিতির গলা কাটা হয়েছে, সেটির হদিস মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের এক আধিকারিক জানান, এই ঘটনায় বেশ কিছু বিষয় ভাবাচ্ছে তাঁদের। ফোনে সোমাকে না পেয়ে কেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন না শুভজিৎ? দরজা খোলা না পেয়ে কেন নিজেই তা ভেঙে ঘরে ঢুকলেন? দু’জনের মৃতদেহ দেখার আগে কেন শুভজিৎ পড়শিদের সাহায্য নিলেন না, তা বোধগম্য হচ্ছে না পুলিশের। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আপাতত সেই প্রশ্নগুলিরই জবাব খুঁজছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Baranagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE