মাথার উপরে যেন সাক্ষাৎ মৃত্যু! বেআইনি ও বিপজ্জনক হোর্ডিংয়ে ছেয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বিধাননগরে।
হোর্ডিং ঝোলানোর জন্য তৈরি লোহার একটি দৈত্যাকার কাঠামো গত এক সপ্তাহ ধরে ঝুলছিল বাগুইআটি মোড়ের কাছে একটি বাড়ির মাথা থেকে। বিপদের আশঙ্কা আঁচ করে বিধাননগর পুরসভা সেটি কাটার কাজ শুরু করেছে এক সপ্তাহ আগে। এখনও অবশ্য পরিষ্কার নয়, কবে গোটা কাঠামোটি কেটে ফেলে জায়গাটি নিরাপদ করা সম্ভব হবে। পুরসভার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, লোহার ওই কাঠামো বেআইনি ভাবে বসানো হয়েছিল। যিনি বসিয়েছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশেও অভিযোগ দায়ের করা হবে। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় একটি অবৈধ কাঠামো এত দিন ধরে থেকে গেল কী করে? পুরসভার নজরদারি বলে কি কিছুই নেই?
লোহার ওই কাঠামো যেখানে ঝুলছে, বিপদ এড়াতে তার নীচে ভিআইপি রোডের একাংশ-সহ জায়গাটি ঘিরে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। হাইড্রা যন্ত্রের মাধ্যমে অনেক উঁচুতে উঠে লোহার কাঠামোটি কাটছেন পুরকর্মীরা। পুর আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, আচমকা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকায় খুব ধীরে ধীরে সেটি কাটতে হচ্ছে। স্থানীয় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ইন্দ্রনাথ বাগুই জানান, আরও দু’-তিন দিন লাগবে ওই লোহার কাঠামো কাটার কাজ শেষ করতে।
গত শনিবারের কালবৈশাখী ঝড়ে খানিকটা ভেঙে পড়ায় বিপজ্জনক ভাবে ঝুলতে থাকে ওই লোহার কাঠামো। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, অত বড় একটি অবৈধ কাঠামো দীর্ঘদিন ধরে সকলের চোখের সামনে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই রয়ে গেল কী ভাবে? কাউন্সিলর ইন্দ্রনাথের ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা বহু বার ওই কাঠামোর বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মালিকের দেখা মেলেনি। শনিবারের ওই ঘটনার পরে কোনও মতে হোর্ডিং সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা গিয়েছে। এই এলাকায় এই ধরনের সমস্ত হোর্ডিয়ের বৈধতা খতিয়ে দেখতে পুরসভার কাছে আবেদন জানিয়েছি।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অবশ্য বক্তব্য, ইন্দ্রনাথ কাউন্সিলর হওয়ার আগে থেকেই ওই কাঠামো রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ভিআইপি রোড সংলগ্ন বহু বাড়ির মাথাতেই এই ধরনের বিশাল লোহার কাঠামো রয়েছে। অথচ, প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব। বাগুইআটির ওই কাঠামো আচমকা ভেঙে পড়াতেই তা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে। রাজারহাট-গোপালপুর এলাকাতেও এই ধরনের কয়েকশো হোর্ডিং রয়েছে, যেগুলির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিকেরা।
বাগুইআটি উড়ালপুল কিংবা উল্টোডাঙা উড়ালপুলের উপর দিয়ে যাওয়ার সময়ে একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়বে, হোর্ডিংয়ের বড় বড় লোহার কাঠামোয় ছেয়ে গিয়েছে পুর এলাকা। রাজারহাট তো বটেই, বাদ যাচ্ছে না সল্টলেকের মতো এলাকাও। পুরসভা সূত্রের খবর, গোটা সল্টলেকে এমন কয়েকশো হোর্ডিং রয়েছে, যেগুলির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। যদিও বিধাননগর পুরসভা চলতি বছরের বাজেটে হোর্ডিং থেকে বিপুল অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে।
পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ‘‘নাগালের মধ্যে থাকা বহু হোর্ডিং ও কাঠামো সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বহুতল কিংবা উঁচু বাড়ির উপরের হোর্ডিং সরাতে গেলে সেখানে পুরসভার লোকজনকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।’’
বাগুইআটির অবৈধ লোহার কাঠামো কেন এত দিন কারও চোখে পড়েনি, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। তবে সেটি যে বেআইনি, তা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘লোহার কাঠামোটি দু’টি বাড়ির মাঝে ঝুলে থাকায় বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। হোর্ডিং নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করা হবে। খতিয়ে দেখা হবে, কতগুলি হোর্ডিংয়ের বৈধতা রয়েছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ওই বাড়ির মালিক বিবেকানন্দ বাগুইয়ের অবশ্য দাবি, হোর্ডিং সংস্থা তাঁকে বলেছিল, লোহার কাঠামো ও হোর্ডিং বসানোর প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমতি তারাই নেবে। তাই তিনি আর মাথা ঘামাননি। কিন্তু, অত বড় হোর্ডিং বসানোর আগে বাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছিলেন কি? বিবেকানন্দবাবুর জবাব, ‘‘সাত মাস আগে কাঠামোটা বসেছিল। পরীক্ষা করানো যে দরকার, তখন সেটা মাথায় আসেনি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।