Advertisement
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পোড়া বাগড়ির সামনে ‘অবৈধ’ বিক্রি বাজির

পুলিশি নজরদারি এবং দমকলের ছাড়পত্র-বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রকরমিয়ে বাজির ব্যবসা চলছে সেখানে। 

বিকিকিনি: পোড়া বাগড়ি মার্কেটের সামনেই চলছে বাজি বিক্রি। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বিকিকিনি: পোড়া বাগড়ি মার্কেটের সামনেই চলছে বাজি বিক্রি। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা 
শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৮ ০১:০৬
Share: Save:

ডালার দোসর বাজি!

বাগড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ডালার ভূমিকা এখনও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। তবু বেশ কিছু দিন হল ওই বাজার চত্বরে ফিরে এসেছে ডালার ব্যবসা। কালীপুজো এবং দীপাবলির মরসুমে সেই ডালা হয়ে উঠেছে আরও ‘বিপজ্জনক’। পুলিশি নজরদারি এবং দমকলের ছাড়পত্র-বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রকরমিয়ে বাজির ব্যবসা চলছে সেখানে।

ক্যানিং স্ট্রিটে কালীপুজো এবং দীপাবলির বাজার দীর্ঘদিনের। রবিবার সেই চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, পোড়া বাগড়ি মার্কেটের সামনের অংশ নীল রঙের টিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আর তার সামনেই ডালা সাজিয়ে বসে ব্যবসায়ীরা। খেলনা বন্দুক, টেডি বেয়ার, সাউন্ড বক্স, ঘর সাজানোর আলোর উপকরণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সে সব ডালায় দেদার বিকোচ্ছে বাজি। বাগড়ি মার্কেটের উল্টো দিকের ফুটপাতে মেহতা বিল্ডিংয়ের সামনেও একই রকম ডালার ভিড়। অবস্থা এমনই যে, ফুটপাতের বিদ্যুতের তারের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ছোট আলোর একাধিক চেন। জ্বলন্ত অবস্থায় সেই আলোর চেনই দেখানো হচ্ছে ক্রেতাদের। দেখে বোঝার উপায় নেই, গত সেপ্টেম্বরে এই রাস্তাই সাক্ষী থেকেছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের।

এক ডালার ব্যবসায়ী জানালেন, গত শুক্রবার থেকেই বাজি কেনার ভিড় হচ্ছে সেখানে। ডালার পাশাপাশি ব্যাগে করে বাগনান এবং নুঙ্গি থেকেও বাজি নিয়ে এসে বাগড়ি মার্কেটের সামনে বিক্রি করছেন বেশ কয়েক জন। তাঁদেরই মধ্যে এক জন মহম্মদ শামিম বলেন, ‘‘প্রতি বছর কালীপুজোর সময়ে বাজি নিয়ে এখানে চলে আসি। দু’দিন প্রচুর বিক্রি হয়।’’ মহম্মদ জাহিদ নামের এক যুবক আবার চেঁচাচ্ছেন, এমন কোনও বাজি নেই যা তাঁর কাছে পাওয়া যাবে না। তিনি বলছেন, ‘‘আওয়াজ কিংবা আলো— যা চাইবেন আমার কাছে পাবেন।’’ ওই ব্যক্তি জানালেন, রাতে এই ডালাতেই বাজি বেঁধে রেখে যান ব্যবসায়ীরা।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বাগড়ি মার্কেটে। ছ’তলা বহুতলের বেশির ভাগ অংশই পুড়ে যায়। দমকলের ১০টি ইঞ্জিন একটানা কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় অন্তত ১০০ কোটি টাকার সামগ্রী। প্রাথমিক ভাবে সেই সময়ে মনে করা হয়, বাজারের সামনের ফুটপাতের ডালা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তার পরেও কি হুঁশ ফেরেনি কারও? স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এখনও রাতে এই সব ডালাতেই বাজির মতো দাহ্যবস্তু রেখে যান ব্যবসায়ীরা! মহম্মদ মুর্তাজা নামে এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘ডালা ছেড়ে যাব কোথায়? আগে মার্কেটের সামনের ফুটপাতে বসতাম। এখন রাস্তায় নেমে আসতে হয়েছে।’’

যদিও এ ভাবে বাজি বিক্রি একেবারেই বেআইনি বলে জানাচ্ছেন বাজি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। টালা পার্ক বাজি বাজারের সভাপতি সঞ্জয়কুমার দত্ত যেমন জানালেন, বাজি বাজার করতে গেলে নির্দিষ্ট অগ্নিবিধি মানা বাধ্যতামূলক। এর জন্য দমকল এবং পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হয়। ক্যানিং স্ট্রিটে বাজি বিক্রির এ রকম কোনও অনুমতিই নেই। সঞ্জয়বাবুর কথায়, ‘‘বাজি বাজারের অনুমতি পাওয়ার ক্ষেত্রে মূল মানদণ্ড হল নিরাপত্তা। ক্যানিং স্ট্রিটে ফুটপাতে ডালায় যে দোকান বসে, তা একেবারেই বেআইনি।’’ বাগড়ি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির তরফে আশুতোষ সিংহ বলেন, ‘‘আমরা বারবার বলেও ডালা তোলাতে পারিনি। পুলিশই এ বার দেখুক।’’

এলাকাটি হেয়ার স্ট্রিট থানার অন্তর্গত। থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বিষয়টি শুনে শুধু বলেন, ‘‘দেখছি।’’ চোখের সামনেই বাজি বিক্রি হচ্ছে দেখেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এখনও? এ প্রশ্ন শুনেই ফোন কেটে দেন ওই আধিকারিক। ডিসি সেন্ট্রাল শুভঙ্কর সিংহ সরকারও বললেন, ‘‘দেখছি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এত দিনেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি? উত্তর মেলেনি ডিসি-র কাছেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Market Firecracker Illegal Bagri MArket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy