Advertisement
E-Paper

নিয়মের ফাঁক গলেই কি বেহিসেবি মদ

সম্প্রতি কেষ্টপুরে পাওয়া গিয়েছে ইন্ডিগোর বিমানসেবিকা ক্লারা খোঙসিটের দেহ। এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, এই ঘটনার আগে আকণ্ঠ মদ্যপান করেছিলেন ক্লারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৭ ০৮:৪০
তদন্ত: ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

তদন্ত: ঘটনাস্থলে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

প্রতি বার বিমানে ওঠার আগেই ‘ব্রেথ অ্যানালাইজার’ পরীক্ষা হয়। সেখানে পাস করতে পারলে তবেই বিমানে উঠতে পারেন পাইলট ও বিমানসেবিকারা।

ভারতের আকাশে বিমান পরিবহণের যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে, সেই ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর নিয়ম অনুযায়ী, উড়ান ছাড়ার ১২ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত একেবারেই মদ খাওয়া যাবে না। যার অর্থ, শনিবার সকাল ১০টায় যদি বিমান ছাড়ার কথা হয়, তা হলে ওই বিমানের পাইলট ও বিমানসেবিকারা শুক্রবার রাত ১০টার পরে আর মদ্যপান করতে পারবেন না।

সম্প্রতি কেষ্টপুরে পাওয়া গিয়েছে ইন্ডিগোর বিমানসেবিকা ক্লারা খোঙসিটের দেহ। এই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, এই ঘটনার আগে আকণ্ঠ মদ্যপান করেছিলেন ক্লারা। তাঁর সঙ্গী অন্য সংস্থার বিমানসেবিকা ইবলিম ননগ্রামও যে বেহিসেবি মদ্যপান করেছিলেন, তদন্তে নেমে তেমনটাও জানতে পেরেছে পুলিশ। কিন্তু তদন্তে এমনটা জানাজানি হতেই প্রশ্ন উঠেছে, যাঁরা নিয়মিত বিমান সংস্থান হয়ে আকাশে ওড়েন, তাঁরা কি এ ভাবে বেহিসেবি মদ্যপান করতে পারেন, যার পরে হুঁশ থাকে না তাঁদের?

‘কলকাতায় এয়ারলাইন্স অপারেটিং কমিটি’-র চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সর্বেশ গুপ্ত জেট এয়ারওয়েজের পাইলট এবং নিয়মিত বিমান নিয়ে উড়ে বেড়ান। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রের নিয়ম ১২ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত মদ খাওয়া যাবে না। আমাদের ক্ষেত্রে সেই সময়সীমা ১৮ ঘণ্টা। অনেক বিমানসংস্থায় সেটি ১৬ ঘণ্টার কাছাকাছি।’’

প্রতিটি বিমানসংস্থায় উড়ানের আগে নিজস্ব চিকিৎসক এই পরীক্ষা করেন। এমনই এক বিমান সংস্থার চিকিৎসক জানিয়েছেন, ওই ব্রেথ অ্যানালাইজার পরীক্ষায় রেজাল্ট ০০০ আসতেই হবে। ০০১ এলেও উড়তে অনুমতি দেওয়া হয় না পাইলট বা বিমানসেবিকাদের। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অনেক সময়েই বিমানসেবিকা বা পাইলটের মুখে ওই মেশিন ধরে পরীক্ষার সময়ে রেজাল্ট ০০১, ০০২, ০০৩ পর্যন্ত চলে আসে। তেমন অবস্থায় সাধারণত তাঁদের ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় দেওয়া হয়।’’ নিজেদের মতো করে ‘তৈরি’ হয়ে ফের পরীক্ষায় বসতে পারেন তাঁরা।

যেমন বিভিন্ন বিমান সংস্থায় যুক্ত কর্মীদের থেকে জানান যায়, রেজাল্ট ০০০ না এলে পাইলট বা বিমানসেবিকাদের কেউ ‘মাউথ ফ্রেশনার’, কেউ আফটার শেভ লোশন ব্যবহার করার যুক্তি দেন। ওই ১৫-২০ মিনিট তাঁদের জল দিয়ে মুখ ধুয়ে, চা-কফি খেয়ে আবার পরীক্ষা করার জন্য বলা হয়। দ্বিতীয় বারের এই পরীক্ষাতেও যদি সফল না হতে পারেন সংশ্লিষ্ট পাইলট বা বিমানসেবিকা, তা হলে তিন মাসের জন্য তাঁকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়। নিয়মটা এমনই কড়া।

ডিজিসিএ-র নিয়ম অনুযায়ী, এক বার তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড হওয়ার পরে কোনও পাইলট বা বিমানসেবিকা একই কারণে দ্বিতীয় বার ধরা পড়লে বা পরীক্ষায় ফেল করলে শাস্তির মেয়াদ বেড়ে তিন বছর হয়ে যায়। তৃতীয় বার ধরা পড়লে তা বেড়ে পাঁচ বছর হয়।

এত কড়াকড়ির পরেও কেন এই বেপরোয়া মদ্যপান? কারণ, নিয়মেরও ফাঁক আছে। সেই ফাঁক গলেই অনেকে ‘অনিয়মের’ মদ্যপানে মেতে ওঠেন।

কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রবণতা একেবারে কমবয়সী বিমানসেবিকাদের মধ্যেই বেশি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানসংস্থার এক কর্তার কথায়, মাঝেমধ্যেই ভোরের উড়ান ধরার সময়ে বিমানসেবিকাদের ক্ষেত্রে প্রথম বার ওই পরীক্ষায় রেজাল্ট ঠিক আসে না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরাও অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন। ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে তাঁরা চা-কফি খেয়ে আবার পরীক্ষায় বসে পড়েন। যদি দেখেন কিছুতেই ‘ম্যানেজ’ করা যাচ্ছে না, তখন সে দিনের মতো ‘অসুস্থ’ বলে ছুটিও নিয়ে নেন।

ক্যাপ্টেন সর্বেশ গুপ্ত Illegal Liquor Air Hostess Khongsit Clara Bansha Rai
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy