Advertisement
০২ মে ২০২৪
Illegal Parking

পুজোর মুখে শহর জুড়ে অবৈধ পার্কিং, চলছে ইচ্ছে মতো টাকা তোলা

নাগরিকদের অনেকেরই অভিযোগ, সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট বা হাতিবাগান এলাকায় ভিড়ের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেআইনি ভাবে পার্কিং করানো ও তা থেকে অতিরিক্ত টাকা তোলা।

An image of Taxi

ধর্মতলায় একটি হোটেলের সামনে যাত্রী তুলতে দাঁড়িয়ে ট্যাক্সি।  ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৯
Share: Save:

নির্দিষ্ট তালিকা বা ‘রেট চার্ট’ মেনে ফি আদায়ের বালাই নেই। যেমন খুশি টাকা আদায় করাটাই যেন দস্তুর! দুর্গাপুজো যত এগিয়ে আসছে, শহরের বিভিন্ন বাজার এলাকায় ইচ্ছেমতো পার্কিং-ফি আদায়ের ঘটনাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। সেই সঙ্গেই বাড়ছে বেআইনি পার্কিং ও যানজট। অনলাইনের বদলে নগদেই দেদার পার্কিং-ফি নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ। নগদে বেশি টাকা তোলা নিয়ে প্রশ্ন করলেই পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কেউ উত্তর দিচ্ছেন, ‘‘পুজোর আগে এখন ক’দিন এ ভাবেই চলবে।’’ কেউ আবার শুনিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘বেশি নিয়ম দেখালে দু’কিলোমিটার দূরে গিয়ে গাড়ি রেখে হেঁটে আসতে হবে।’’

নাগরিকদের অনেকেরই অভিযোগ, সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট বা হাতিবাগান এলাকায় ভিড়ের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বেআইনি ভাবে পার্কিং করানো ও তা থেকে অতিরিক্ত টাকা তোলা। বাদ যাচ্ছে না উত্তর ও দক্ষিণের একাধিক শপিং মল সংলগ্ন এলাকাও। পুরসভা নির্ধারিত পার্কিং লটে সরকারি রেট চার্টে উল্লিখিত অঙ্কের চেয়ে প্রতি ঘণ্টায় ২০ বা ৩০ টাকা বেশি আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এমনকি, রাজনৈতিক ‘দাদাদের’ মদতে যত্রতত্র বেআইনি পার্কিং লট গছিয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ।

সম্প্রতি নিউ মার্কেট চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, ছুটির দিন হওয়ায় সেখানে কার্যত তিল ধারণেরও জায়গা নেই। জওহরলাল নেহরু রোডের একাংশে পুরসভার পার্কিং লট থাকলেও অন্য দিকেও পর পর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা রয়েছে। দু’পাশে সারিবদ্ধ গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় মাঝের সঙ্গীর্ণ অংশ দিয়ে এগোনোই মুশকিল। এই যানজটের রেশ চলে গিয়েছে পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত। নিউ মার্কেট সংলগ্ন পুরসভা নির্ধারিত পার্কিং লটে গাড়ি রাখতে ঘণ্টা প্রতি কত দিতে হবে? জানতে চাইতেই দায়িত্বপ্রাপ্ত এক যুবক বলে দিলেন, ‘‘গাড়ি কখন রাখবেন, তার উপরে রেট নির্ভর করছে। দুপুরের দিকে চার চাকার জন্য ঘণ্টায় ৫০-৬০ নিচ্ছি। তবে, বিকেলের দিকে গাড়ির চাপ বাড়লে সেটাও বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছুটির দিনে আরও বেশি।’’ অনলাইন নয়, সবটাই নগদে নেওয়া হচ্ছে বলে নিজেই জানালেন তিনি।

একই অবস্থা গড়িয়াহাট চত্বরেও। পার্কিংয়ের জন্য কেউ গাড়ি রাখতে এলে আগেই শুনিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ‘‘ফি কিন্তু বেশি লাগবে। রাখলে রাখুন, না হলে তাড়াতাড়ি ফাঁকা করুন।’’ সেখানে স্থানীয় ‘দাদাদের’ মদতে আশপাশে একাধিক বেআইনি পার্কিং গজিয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ। হাতিবাগানে গাড়ি একটু থামতেই এক ‘দাদা’ এগিয়ে এলেন। কিছু বলার আগেই প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘‘গাড়ি রাখবেন? আমাদের সঙ্গে আসুন, একটু কমসম করে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। কোনও ঝামেলায় পড়তে হবে না।’’ শুধু এই সমস্ত বাজার এলাকা নয়, শপিং মল সংলগ্ন এলাকাতেও বেআইনি পার্কিং চলছে রমরমিয়ে। দক্ষিণ কলকাতার প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি শপিং মল সংলগ্ন এলাকায় দেদার বেআইনি পার্কিংয়ের দেখা মিলেছে। যার জেরে যানজটও বাড়ছে। নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশের মদতেই বেআইনি পার্কিং চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।

কলকাতা পুরসভার কর্তারা অবশ্য বেআইনি পার্কিংয়ের দায় নিজেদের ঘাড়ে নিতে রাজি নন। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘পার্কিং নিয়ে পুরসভার তরফে নির্দিষ্ট গাইডলাইন দেওয়া আছে। পুলিশকেও বেআইনি পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি আমরা।’’ কিন্তু নগদে লেনদেন চলছে কেন? পুরসভার রেট চার্টই বা মানা হচ্ছে না কেন? ওই কর্তার উত্তর, ‘‘অভিযোগ অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।’’ কলকাতা পুলিশের এক কর্তা যদিও বললেন, ‘‘বেআইনি পার্কিং রুখতে এবং যান চলাচল সচল রাখতে বাজার এলাকাগুলিতে পুলিশ থাকছে। ছুটির দিনে তাঁদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বিধি ভাঙার ঘটনা চোখে পড়লেই আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ব্যবস্থা আর কবে নেওয়া হবে বা আদৌ নেওয়া হবে কি? এ প্রশ্নের কোনও উত্তর অবশ্য মেলে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Parking Durga Puja 2023 Dharmatala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE