E-Paper

ছোট্ট তুষিণই যেন হারানো সন্তান, নতুন জীবন শুরু দম্পতির

হাজারো শারীরিক বাধা পেরিয়ে সন্তানহারা বছর ৪৪-এর মহিলা জন্ম দিলেন পুত্রসন্তানের। ছেলে কোলে মা একটাই কথা বলেছিলেন, ‘‘কে বলে তুই হারিয়ে গিয়েছিস?’’

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৪৯
ছোট্ট তুষিণকে কোলে নিয়ে অনামিকা ঘোষ।

ছোট্ট তুষিণকে কোলে নিয়ে অনামিকা ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

২০২৪-এর ৬ মে। ঘড়িতে রাত দেড়টা। প্রবল ঝড়বৃষ্টির মধ্যে রেল পুলিশের থেকে আসা একটি ফোনে জীবনটা ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল মানিকতলার ঘোষ দম্পতির। রাত পর্যন্ত যাঁর অপেক্ষায় ছিলেন, ২৪ বছরের সেই ছেলের দেহ মিলেছিল পাতিপুকুরে, রেললাইনের ধারে। তার পর থেকে থমকে যেতে বসা জীবনে ওই দম্পতি আবারও বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন গত ২৩ অক্টোবর সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট থেকে।

হাজারো শারীরিক বাধা পেরিয়ে সন্তানহারা বছর ৪৪-এর মহিলা জন্ম দিলেন পুত্রসন্তানের। ছেলে কোলে মা একটাই কথা বলেছিলেন, ‘‘কে বলে তুই হারিয়ে গিয়েছিস?’’ সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে বাবা বলছেন, ‘‘ওর কানটা পুরো বড় ছেলের মতো।’’ আর তাঁদের আবারও অপত্য স্নেহের ভাগীদার করে তোলা, স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শুধু চিকিৎসা নয়, হতাশায় চলে যাওয়া দম্পতিকে নতুন আশার আলো দেখানোর চেষ্টা করছিলাম।’’

ছোট্ট তুষিণের কচি আঙুলগুলি ধরে তাঁদের জীবনে তৈরি হওয়া শূন্যস্থানই যেন এখন পূরণ করছেন খোকন ঘোষ ও অনামিকা ঘোষ। তবে, আবারও সন্তান-সুখের পথ সুগম ছিল না বলেই জানাচ্ছেন ওই দম্পতি। একমাত্র সন্তান অনিকেতের মৃত্যুর পরে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় অনামিকার। অনেক চিকিৎসার পরে সুস্থ হলেও ধরা পড়ে, জরায়ুতে টিউমার। খোকন বলেন, ‘‘জরায়ু বাদ দিলে আর সন্তান ধারণ সম্ভব হবে না জেনে আমরা আবারও অবসাদে চলে যাচ্ছিলাম।’’ আচমকাই এক দিন অনামিকার জরায়ু থেকে প্রবল রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায় তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে অভিনিবেশ ওই মহিলাকে পরীক্ষার পাশাপাশি জানতে পারেন, তাঁর প্রথম সন্তানের মৃত্যুর ঘটনার কথা। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সব শুনে মনে হয়েছিল, ওই দম্পতির জীবনে আবারও আনন্দ আনতে পারে একটি সন্তান। তাই বার বার ওই মহিলার কাউন্সেলিং করি।’’ মণিপাল হাসপাতালে শুরু হয় অনামিকার চিকিৎসা। আবারও তিনি মা হতে পারবেন, এই ভরসা জোগান অভিনিবেশ। তিনি জানান, প্রথমে ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে জরায়ুর টিউমার বাদ দিয়ে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা হয়। এর পরে ওই মহিলা যাতে গর্ভধারণ করতে পারেন, তার চিকিৎসা শুরু হয়।

তবে গর্ভবতী হওয়ার পরে অনামিকাকে পরীক্ষায় দেখা যায়, ‘প্লাসেন্টা প্রিভিয়া’ (গর্ভফুল জরায়ুর একেবারে নীচে নেমে গিয়েছে), পেটে জল বেশি, বাচ্চার অবস্থান কিছুটা বাঁকা এবং উচ্চ রক্তচাপ, হাই সুগারের মতো সমস্যা তৈরি হয়েছে। অভিনিবেশ বলেন, ‘‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ৩২ সপ্তাহে সিজ়ার করা হবে। সেই মতো গর্ভস্থ শিশুর ফুসফুস, মস্তিষ্ক ঠিক মতো তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়।’’ গত ২৩ অক্টোবর সুস্থ ছেলের জন্ম দেন অনামিকা।

আত্মজকে সামলানোর চরম ব্যস্ততার মাঝে এখনও খোকন-অনামিকার মনে উঁকি দেন অনিকেত। স্নাতক হওয়ার পরে বাবার সঙ্গেই ব্যবসা সামলাতেন তিনি। খোকন বলেন, ‘‘বড্ড চাপা স্বভাবের ছিল। বান্ধবীর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। আর ফেরেনি।’’ যদিওসদ্যোজাতকে বুকে নিয়ে অনামিকা বলছেন, ‘‘আমার রনিই তো তুষিণ হয়ে ফিরে এসেছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Patipukur Medical

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy