ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের (আইএসআই) একটি ছাত্রাবাসে ঘৃণার বার্তা ছড়ানোর পিছনে যারাই থাকুক, বঙ্গ রেনেসাঁসের ইতিহাস-বিজড়িত, ঐতিহ্যশালী এই প্রতিষ্ঠানের ভিতরে সদর্থক বার্তা মেলে ধরতে তৎপর ছাত্র, গবেষক, শিক্ষকেরাই। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, হস্টেলে একটি গোষ্ঠীকে নিশানা করে উস্কানির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ যা-ই পদক্ষেপ করুন, আগে তৎপর হতে হবে আইএসআই-এর সঙ্গে জড়িত সমাজকে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের তরফে নিন্দাসূচক বিবৃতি প্রকাশের পরে, শুক্রবার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র, গবেষকদের বড় অংশকে এই সদর্থক প্রয়াসে শামিল হতে দেখা গেল।
এ দিন বিকেলে দল বেঁধে আইএসআই-এর অন্দরের প্রায় সব শ্রেণির প্রতিনিধিরা সি ভি রমন হলে জড়ো হন। যেখানে যেখানে বিদ্বেষমূলক কটূক্তি লেখা হয়েছিল, সেখানেই কিছু পোস্টারে তাঁরা নিজেদের হাতে সদর্থক বার্তা সাঁটেন। জনৈক গবেষক ছাত্র বলেন, “আইএসআই-এর ছাত্র, গবেষকদের মধ্যে ৮-১০ শতাংশ মুসলিম শিক্ষার্থী আছেন। তাঁরা যাতে এক ফোঁটা দ্বিধা, উৎকণ্ঠায় না ভোগেন, সেটা সুনিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।” মুসলিম সতীর্থদের আস্থা সুদৃঢ় করতেই এর পরে কিছু পোস্টার তৈরি করা হয়েছে। মুসলিম-বিদ্বেষী ঘৃণা-বার্তার বদলে কোথাও কোথাও সংবিধানের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদের সারমর্ম লেখা হয়। যাতে স্পষ্ট বলা হচ্ছে, সংবিধানের চোখে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ নির্বিশেষে সবাই সমান। একটি ডাস্টবিনের গায়ে মুসলিমদের বিষয়ে অপমানসূচক মন্তব্য লেখা হয়েছিল। সেখানে এ দিন পাল্টা পোস্টার দিয়ে লেখা হয়েছে, ‘আপনার ধর্মীয় গোঁড়ামির জঞ্জাল এখানে ফেলুন।’
১৯৫৯ সালে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুদেরআলোচনার ভিত্তিতে যে কেন্দ্রীয় আইএসআই আইন তৈরি হয়, তার কিছু শর্তও প্রতিষ্ঠানের আদর্শে আঘাতের চেষ্টার মধ্যে মনে করান শিক্ষক, গবেষক, পড়ুয়ারা। আইএসআই-এ স্বাধীন, স্বকীয় সমিতি গড়ার সময়ে যা বলা হয়েছিল, তার কিছু অংশও এ দিন পোস্টারে লেখা হয়েছে আইএসআই-এর অন্দরে। তাতে বলা আছে, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা রাষ্ট্রীয় পরিচয় আইএসআই-এর অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পদে বাধা হতে পারে না। সুতরাং, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই আইএসআই-এ স্বাগত।
ঘটনাচক্রে, ১৯৫৯-এর আইএসআই বিল বাতিল করে প্রতিষ্ঠানের খোলনলচে পাল্টানোর চেষ্টা নিয়ে সারা দেশের শিক্ষক, বিজ্ঞানী মহলে এখন আশঙ্কার সুর। আইএসআই-এর শিক্ষকদের বড় অংশও প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্রীয়হস্তক্ষেপ নিয়ে চিন্তায়। এই আবহে ঘৃণা-বার্তা ছড়ানোর ঘটনাটি অনেকেরই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের এক অধ্যাপক বললেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার প্রস্তাবিত নতুন বিলটিতে আইএসআই-এর এত দিনের মৌলিক আদর্শ কত দূর রক্ষা করা যাবে, তা নিয়েওসংশয় আছে। নতুন বিলে আইএসআই-এর ভিতরের শিক্ষক, আধিকারিকদের অধিকারও অনেক সঙ্কুচিত হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ভবিষ্যতে এই ধরনের উস্কানির চেষ্টা হলে তা রুখতে এখানকার শিক্ষক, আধিকারিকদের কতটা ক্ষমতা থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)