Advertisement
১১ জুন ২০২৪
Coronavirus

থানায় থানায় বাড়ছে করোনা, অপরাধ দমন নিয়ে প্রশ্ন

প্রাক্তন পুলিশকর্তা থেকে আইনজীবীদের বড় অংশের দাবি, কোনও থানার বাইরে ‘করোনা জ়োন’ লিখে দিলে এমনিই সেখানে গিয়ে অভিযোগ করতে ভয় পাবেন মানুষ।

দীর্ঘ অপেক্ষার পরে থানা চত্বরে আলাদা করে বসে মহিলার অভিযোগ লিখছেন এক পুলিশকর্মী। বুধবার, কসবা থানায়। নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘ অপেক্ষার পরে থানা চত্বরে আলাদা করে বসে মহিলার অভিযোগ লিখছেন এক পুলিশকর্মী। বুধবার, কসবা থানায়। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০ ০৪:১২
Share: Save:

কোনও থানায় দু’জন পুলিশকর্মী ছাড়া বাকিরা করোনায় আক্রান্ত। কোথাও আবার থানার ২৩ জন আক্রান্ত হওয়ার পরে কাজ চালানোর জন্য অন্য থানা থেকে পাঁচ জনকে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও তিন জন সংক্রমিত হয়েছেন। থানার বাইরে কাগজে লিখে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে, ‘এটি করোনা জ়োন!’ কাজ চালাবেন কী করে, সেটাই ভেবে উঠতে পারছেন না এখনও পর্যন্ত সুস্থ থাকা পুলিশকর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে শহরের অপরাধ মোকাবিলা কোন পথে চলবে, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

প্রাক্তন পুলিশকর্তা থেকে আইনজীবীদের বড় অংশের দাবি, কোনও থানার বাইরে ‘করোনা জ়োন’ লিখে দিলে এমনিই সেখানে গিয়ে অভিযোগ করতে ভয় পাবেন মানুষ। তা ছাড়া করোনার জন্য যদি কোনও থানায় পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী না-থাকেন, তা হলে সেখানে পৌঁছেও কার কাছে অভিযোগ করা যাবে? তাঁরা বলছেন, ‘‘এর জেরে অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়তে বাধ্য।’’

করোনা সংক্রমণে ইতিমধ্যেই জেরবার কসবা থানা। বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মূল ভবন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পার্কিং স্পেসে বসছেন ডিউটি অফিসার। দীর্ঘক্ষণ ওই থানার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অমিতকুমার মণ্ডল নামে এক জন জানালেন, বছরখানেক আগে তমলুক আদালতে চাকরি পেয়েছেন তিনি। তবে পুলিশি যাচাইয়ের কাগজ এখনও না-পাওয়ায় এ দিন থানায় এসেছেন। অমিতের দাবি, সকালে এক বার এলে তাঁকে বলে দেওয়া হয়, ‘‘থানা এখনও খোলেনি। পরে আসুন।’’ ফের বেলা ১২টায় এসে সাড়ে তিনটে পর্যন্ত অপেক্ষা করে ফিরে যাওয়ার পথে তিনি বললেন, ‘‘করোনায় কোনও কাজ হচ্ছে না বলে ফিরিয়ে দিল।’’

থানা চত্বরেই দাঁড়ানো আর এক মহিলা বলেন, ‘‘থানা থেকে বলা হচ্ছে, অভিযোগ নেওয়ার লোক নেই। একান্ত বাধ্য না-হলে তো আসতাম না।’’ কী ব্যাপার? ওই মহিলা বলেন, ‘‘সামান্য ভুলত্রুটি হলেই শ্বশুর-শাশুড়ি মারেন। এত দিন সহ্য করেছি। আর থাকতে না-পেরে এসেছি।’’ দীর্ঘ অপেক্ষার পরে অবশ্য মহিলার অভিযোগ শোনে পুলিশ।

দক্ষিণ প্রান্তেরই বেহালা থানায় প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সেখান থেকে প্রায় ছুটে বেরিয়ে এ দিন এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘আমাদের এলাকার এক জন পুরসভাকে না জানিয়ে জলের পাইপের কাজ করাচ্ছেন। বরো অফিস থেকে অভিযোগপত্র লিখে আমায় দিয়ে থানায় পাঠাল। বহুক্ষণ বসিয়ে রাখার পরে এক অফিসার বললেন, ইমেল করে দিন। থানায় সবাই করোনা আক্রান্ত।’’ বেলেঘাটার এক বাসিন্দার আবার অভিযোগ, নিজের মোবাইল হারানোর অভিযোগ করতে তিন দিন ধরে থানায় ঘুরছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বারই পুলিশ বলছে, মোবাইল আগে না আমাদের প্রাণ! থানার পাঁচ জনের করোনা হয়েছে। পরে আসুন।’’

আরও পড়ুন: রোগীকে ‘হেনস্থা’, বিধি না মানার পাল্টা অভিযোগ

আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাধ্য না-হলে কেউ থানায় যান না। তার মধ্যে এখন এমন পরিস্থিতি, যেখানে আদালতও বন্ধ। মানুষ তা হলে যাবেন কোথায়?’’ তাঁর দাবি, ‘‘প্রায়ই শোনা যায়, পুলিশ অভিযোগ নিতে চাইছে না। দেখতে হবে, করোনা যেন দায় এড়ানোর হাতিয়ার না-হয়।’’ লালবাজারের তরফে এ প্রসঙ্গে কেউ কিছু বলতে চাননি। মন্তব্য করতে চাননি পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। তবে যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘পুলিশ সব রকম ভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা করছে।’’

যদিও তুষার তালুকদার, প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রাক্তন পুলিশকর্তারা মনে করছেন, এমন চলতে থাকলে নথিভুক্ত না-হওয়া অপরাধ বাড়বে। প্রসূনবাবু আরও বলেন, ‘‘পুলিশকে দিয়ে যদি অন্য হাজারো কাজ করানো হয়, এ রকমই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE