Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সেন্টারের আয়া নিলেও থানায় জানান, সতর্কবার্তা পুলিশের

মায়ের মৃত্যুর পরে বৃদ্ধ বাবাকে এক আয়ার দায়িত্বে রেখে স্কুলে যেতেন পেশায় শিক্ষিকা, মানিকতলার শিল্পী রায়। এক বিকেলে বাড়ি ফিরে দেখেন, ঘরের দরজা হাট করে খোলা। বাবা ঘুমিয়ে এবং বাড়িতে আয়া নেই।

দেবাশিস দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৬ ০০:১২
Share: Save:

মায়ের মৃত্যুর পরে বৃদ্ধ বাবাকে এক আয়ার দায়িত্বে রেখে স্কুলে যেতেন পেশায় শিক্ষিকা, মানিকতলার শিল্পী রায়। এক বিকেলে বাড়ি ফিরে দেখেন, ঘরের দরজা হাট করে খোলা। বাবা ঘুমিয়ে এবং বাড়িতে আয়া নেই। পরে নজরে আসে, আলমারির তালা ভাঙা। কয়েকটি দামি শাড়ি, সোনার গয়না ও নগদ কয়েক হাজার টাকা উধাও।

শিল্পীদেবীর মতোই অফিস থেকে এক দিন নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাড়ি ফিরে চক্ষু চড়কগাছ সল্টলেকের রীতা বর্মণের। শোওয়ার ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। ভিতরে তাঁর আড়াই বছরের মেয়ে একা। আর বসার ঘরে এক ব্যক্তির সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ অবস্থায়’ সেই আয়া চড়া ভল্যুমে টেলিভিশন চালিয়ে দেখছেন। হাতেনাতে ধরা পড়ার পর সেই আয়া জানান, রোজ দুপুরে রীতাদেবীর আড়াই বছরের মেয়েকে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তিনি ও তাঁর বন্ধু এ ভাবেই সময় কাটাতেন।

শিল্পী রায়, রীতা বর্মণ তাঁদের বাড়িতে পরিচারিকা রেখেছিলেন আয়া সেন্টার থেকে। এখন যা অবস্থা, শহর বা তার আশপাশে ছোট পরিবারে যেখানে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কর্মরত, বাড়ির ছোট বা বৃদ্ধদের দেখভালের জন্য বেশির ভাগই নির্ভরশীল পরিচারিকার উপর। ২৪ ঘণ্টা বা স্থায়ী পরিচারিকা অনেকেরই নেই। আবার সে রকম অনেকে রাখতে চান না ছোট ফ্ল্যাটে স্থান সঙ্কুলানের অভাবের কারণে কিংবা স্থায়ী পরিচারিকার জন্য পোশাক, বোনাস, খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্ব নেবেন না বলে।

কিন্তু আয়া সেন্টার থেকে আয়া রেখে বহু মানুষই এটা ভেবে নিশ্চিন্ত থাকেন যে, পরিচারিকাদের ঠিকুজি-কোষ্ঠী সমস্ত ওই সেন্টারে জমা থাকে। তাই কোনও অপরাধ করে সেন্টারের আয়াদের পার
পেয়ে যাওয়া বা বেপাত্তা হওয়া মুশকিল। অনেকে ভাবেন যে, সেন্টারে সব তথ্য জমা থাকে বলে সেখানকার আয়া দুষ্কর্ম করতেই সাহস পাবেন না।

আর এখানেই মস্ত বড় ভুল বলে জানাচ্ছে পুলিশ। সম্প্রতি গড়িয়ায় বাসন্তী বসু নামে এক বৃদ্ধাকে মাদক খাইয়ে বেহুঁশ করে তাঁর গয়নাগাঁটি ও আলমারি থেকে নগদ কয়েক হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয় এক আয়া। সেন্টারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই আয়া নিজের সম্পর্কে যে সব নথি দিয়েছিল, সেগুলো উল্টোপাল্টা। কেবল ছবি ছাড়া ওই আয়া সম্পর্কে আর কোনও সঠিক তথ্য নেই।

এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, এক জন আয়া টানা বারো ঘণ্টা কাজের জন্য আড়াইশো-তিনশো টাকা পান। যা থেকে নিয়োগকারী সংস্থা পনরো থেকে কুড়ি টাকা কেটে রেখে দেয়। ওই পুলিশ অফিসারের কথায়, ‘‘এটুকু রোজগার যেখানে, সেখানে বহু সেন্টারই আয়াদের ব্যাপারে তথ্য নেওয়ার পর সেই তথ্য যাচাই করে দেখার ব্যাপারে উদাসীন। তাই, আয়া সেন্টারগুলোর উপরে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে থাকা যাবে না।’’

বালিগঞ্জের একটি আয়া সেন্টারের কর্ণধার বলেন, ‘‘এগারো বছর ধরে কাজ করছি। এখন এখানে যাঁরা কাজ নিতে আসেন, তাঁদের সচিত্র পরিচয়পত্রের ফোটোকপি, দু’কপি ছবি, যাঁর সূত্রে এখানে এসেছেন, তাঁর ও নিজের মোবাইল নম্বর জমা রাখতে হয়।’’ কিন্তু গড়িয়ার ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, ওই আয়া ২০০০ সালের ভোটার আইডি কার্ডের প্রতিলিপি জমা করেছিলেন। ১৬ বছর পর সেই ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে পুলিশ দেখেছে, মহিলা ছ’বছর আগেই সেই ঠিকানা ছেড়ে দিয়েছেন।

তা হলে উপায়? পুলিশের যুক্তি, সেন্টার থেকে আয়া নিলেও স্থানীয় থানা থেকে এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট ফর্ম সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে।

গোয়েন্দাপ্রধান দেবাশিস বড়াল বলেন, ‘‘এই ধরনের বিপদ এড়াতে সার্ভেন্টস প্রোফাইল ফর্ম পূরণ করে অবশ্যই নিকটবর্তী থানায় জমা দিন। নাগরিকদের কাছে এটাই আমাদের আবেদন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police security information
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE