বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিতে পরিকাঠামো থাকলে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যম আরও বেশি করে চালু করতে আগ্রহী কলকাতা জেলা শিক্ষা দফতর। অধিকাংশ বাংলা মাধ্যম স্কুলে যখন পড়ুয়া ক্রমেই কমছে,তখন এই পদ্ধতিতে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষা দফতরেরআধিকারিকেরা। তাঁদের দাবি, গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বাংলা মাধ্যম স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমও চালু হয়েছে। সেই স্কুলগুলিসফল ভাবে চলছে। পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়েছে।
যেমন, আগামী বছর থেকে শতাব্দীপ্রাচীন কলকাতার পার্ক ইনস্টিটিউশনে ইংরেজি মাধ্যম চালু হচ্ছে।স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, ‘‘আগামী বছর থেকে স্কুলেরপঞ্চম, ষষ্ঠ এবং একাদশ শ্রেণিতে ইংরেজি মাধ্যমে পঠনপাঠন চালু হচ্ছে। পরে আস্তেআস্তে সব ক্লাসেই ওই মাধ্যমে পঠনপাঠন হবে। আমাদের স্কুলে পর্যাপ্ত ক্লাসঘর এবং শিক্ষকও রয়েছেন। শিক্ষা দফতরেরপ্রতিনিধিরা স্কুল পরিদর্শন করে এখানে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যম চালুর অনুমতি দিয়েছেন।’’ সুপ্রিয় জানান, তাঁদের স্কুল চলতি বছরে ১০০ পূর্ণ করছে। সেই উপলক্ষে এমন উদ্যোগ।
গত কয়েক বছরে হিন্দু স্কুল, যাদবপুর বিদ্যাপীঠ, মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন (মেন) ফর গার্লস-সহ বেশ কিছু স্কুলে বাংলারপাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর অনুমতি মিলেছে। তবে ওই সব স্কুলে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। বাংলা মাধ্যমে যাঁরা পড়ান,তাঁরাই ইংরেজি মাধ্যমে পড়াচ্ছেন। ওই সব স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ইংরেজি মাধ্যমে পড়ায় পড়ুয়াদের যথেষ্ট আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগ স্কুলেই ইংরেজিমাধ্যমে পড়ুয়ার আসন পূর্ণ হয়ে যায়। যেমন যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্য বলেন, ‘‘আমাদের ইংরেজি মাধ্যমে খুব চাহিদা। ইংরেজি মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণিতে ২৫টি আসন। তার জন্য প্রায় ৫০০ জন আবেদন করেছে।’’
শিক্ষা দফতরের এক কর্তার মতে, কলকাতার সরকারি, সরকার পোষিত বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্তস্কুলগুলিতে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর জন্য শিক্ষকের অভাব হবে না। কারণ, কলকাতার বহু স্কুলেইপড়ুয়ার তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চল থেকে বহু শিক্ষক বদলি নিয়ে কলকাতায় চলেএসেছেন। ফলে কলকাতার অনেক স্কুলেই শিক্ষক ও পড়ুয়ার অনুপাত ঠিক নেই। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো শুরু হলে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়লে ওই স্কুলগুলিতে শিক্ষক ও পড়ুয়ার অনুপাত অনেকটা ঠিক হবে।
তবে বাংলা মাধ্যম স্কুলের ওই শিক্ষকেরা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে পারবেন কিনা, সেই প্রশ্নও থাকছে। যদিও শিক্ষা দফতরের কর্তাদের মতে, বহু শিক্ষকই রয়েছেন, যাঁরা স্নাতক বা স্নাতকোত্তর স্তরে তাঁদের বিষয় নিয়ে ইংরেজিতেই পড়েছেন।সুতরাং তাঁদের দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া, এমনও অনেক শিক্ষক আছেন, যাঁরা ছাত্রজীবনে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে এখন সরকারি স্কুলে চাকরি করেন। তাঁরা তো পড়াতে পারবেনই। শিক্ষা দফতর আরও জানাচ্ছে, যে সব স্কুল হিন্দিভাষী এলাকায় রয়েছে, সেখানে বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়ুয়া কমছে। সেই সব স্কুলে ইংরেজি মাধ্যম চালু হলে পড়ুয়া সংখ্যা বাড়তে পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)