Advertisement
১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Blood Exchange Transfusion

দূষিত রক্ত বদলে বালিকার প্রাণ বাঁচাল হাসপাতাল

ওষুধ দিয়ে ফলাফল পেতে যেমন অনেকটা দেরি হয়ে যাবে, তেমনই অন্য ক্ষতির আশঙ্কা করে চিকিৎসকেরা তার শরীরের দূষিত রক্ত বদলানোর সিদ্ধান্ত নেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৫৭
Share: Save:

তীব্র জ্বরে আক্রান্ত চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া বালিকা। কার্যত সংজ্ঞাহীন অবস্থায় কাটছিল এক-একটি দিন। এমতাবস্থায় দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সকলেই প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। শেষে ‘ব্লাড এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন’ পদ্ধতিতে ১০ বছরের ওই বালিকার প্রাণ বাঁচাল পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ (আইসিএইচ)।

পার্ক সার্কাসেরই বাসিন্দা ওই বালিকা ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। আইসিএইচ-এ তার চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, “মশাবাহিত এই রোগের ঠিক চিকিৎসা না হলে প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সাধারণ ম্যালেরিয়ার পাশাপাশি ২০-৩০ শতাংশকে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়।” সূত্রের খবর, ওই বালিকা কার্যত মৃত্যুর মুখে চলে গিয়েছিল। শুধু ওষুধ দিয়ে ফলাফল পেতে যেমন অনেকটা দেরি হয়ে যাবে, তেমনই অন্য ক্ষতির আশঙ্কা করে চিকিৎসকেরা তার শরীরের দূষিত রক্ত বদলানোর সিদ্ধান্ত নেন। আর তাতেই উল্লেখযোগ্য সাড়া মিলেছে বলে জানাচ্ছেন প্রভাসপ্রসূনবাবু।

গত ১৬ অক্টোবর তীব্র জ্বরে আক্রান্ত হয় ওই বালিকা। কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যায়। কাউকে ঠিক মতো চিনতেও পারছিল না সে। ডেঙ্গি বলে সন্দেহ করে প্রথমে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। পরীক্ষায় জানা যায়, ওই বালিকা ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত। কিন্তু ওই হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক আইসিইউ না থাকায় তাকে বাইপাসের ধারে আর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেও তার অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। গত ২০ অক্টোবর বালিকার পরিজনেরা তাকে নিয়ে আসেন আইসিএইচ-এ। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, মেয়েটিকে যখন ভর্তি করা হয়, তখন তার জ্ঞান ছিল না। প্রায় কোমায় আচ্ছন্ন ছিল বলা চলে। দেখা যায়, তার যকৃৎ, ফুসফুস, কিডনি-সহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে সে জন্ডিসে আক্রান্ত। প্রথমে মেয়েটিকে ম্যালেরিয়ার ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ক্ষেত্রে যতটা সময় লাগবে, তাতে তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। আইসিএইচ-এর শিশুরোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওষুধ দিয়ে সুস্থ করতে যে সময় লাগত, তাতে বালিকার মস্তিষ্কেরক্তক্ষরণ শুরু হওয়ার আশঙ্কাও ছিল। তাই বেশি ঝুঁকি নিতে চাননি তাঁরা।

সমস্ত দিক বিশ্লেষণ করে শেষে চিকিৎসকেরা ‘ব্লাড এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন’ পদ্ধতি প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই বালিকার রক্তে পরজীবীর মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। শিশুরোগ চিকিৎসক কৌশিক মল্লিক জানাচ্ছেন, বালিকার ধমনী থেকে একটি চ্যানেলের মাধ্যমে দূষিত রক্ত বার করা হয়। আর ‘সেন্ট্রাল লাইন’ চ্যানেল দিয়ে শুদ্ধ রক্ত প্রবেশ করানো হয়। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে ৭৫০ মিলিলিটার রক্ত বার করা ও প্রবেশ করানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এই পদ্ধতিতে চিকিৎসার পরে ওই বালিকাকে ম্যালেরিয়ার ওষুধও দেওয়া হয়। তাতেই এখন সে মশাবাহিত ওই রোগ থেকে পুরোপুরি মুক্ত। মঙ্গলবার তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Mosquito
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy