বেআইনি পাসপোর্ট-চক্র নিয়ে তদন্ত চালিয়ে নতুন করে আরও ৬০টি ভুয়ো পাসপোর্টের সন্ধান পেলেন তদন্তকারীরা। সংশ্লিষ্ট পাসপোর্টগুলি তৈরি করা হয়েছে ভুয়ো নথি দিয়ে। এর মধ্যে ৩৩টি পাসপোর্ট আবেদনকারীদের দিয়ে দেওয়া হলেও বাকিগুলি দেওয়ার অপেক্ষায় ছিল বলে সূত্রের খবর। এক পুলিশকর্তা জানান, সপ্তাহখানেক আগে আঞ্চলিক পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের তরফে ওই ভুয়ো পাসপোর্ট সম্পর্কে লালবাজারে ফের জানানো হয়। যার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করে তদন্ত শুরু করেন কলকাতা পুলিশের আধিকারিকেরা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মাস চারেক আগে প্রথম ভুয়ো পাসপোর্ট-চক্রের সন্ধান মিলেছিল। ইতিমধ্যেই ওই চক্রের সাত জনকে গ্রেফতার করেছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের অনুমান, দ্বিতীয় বার ভুয়ো পাসপোর্টের খোঁজ পাওয়ার পিছনে হাত রয়েছে ওই একই চক্রের। এমনকি, এ বারও বাংলাদেশিদের এ রাজ্যে প্রবেশ করিয়ে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ভুয়ো নথি দিয়ে তৈরি করা ওই সব পাসপোর্ট। যা নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চলে গিয়েছেন ওই বাংলাদেশি নাগরিকেরা।
পুলিশ জানিয়েছে, এর আগে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতীয় বলে দেখিয়ে ১২১টি পাসপোর্ট তৈরি করেছিল চক্রটি। যার মধ্যে ৭০টিরও বেশি পাসপোর্ট দেওয়া হয়ে গিয়েছিল আঞ্চলিক পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের তরফে। বাকি প্রায় ৫০টি পাসপোর্ট তৈরির অপেক্ষায় ছিল। পুলিশের এক কর্তা জানান, নতুন করে ভুয়ো পাসপোর্ট সম্পর্কে যে তথ্য জানিয়েছেন আঞ্চলিক পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই সব পাসপোর্ট বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া, ওই পাসপোর্ট ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ‘লুক আউট’ নোটিসও জারি করা হতে পারে।
এ দিকে, দ্বিতীয় বার ভুয়ো পাসপোর্ট-চক্রের খবর সামনে আসতেই নথি যাচাইয়ে কড়াকড়ি শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। নতুন পাসপোর্টের আবেদন ও পাসপোর্ট নবীকরণের সময়ে জমা দেওয়া নথি বৈধ কিনা, যাচাই করতে প্রতিলিপি পাঠানো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট নথি প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের কাছে। উত্তর এলে তবেই যাচাইয়ের কাজ শেষ করে নথি পাঠানো হচ্ছে পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। পাশাপাশি, আবেদনকারীর বাড়ি গিয়ে সরেজমিনে নথি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আর তা করতে গিয়ে গত দু’মাসে সামনে এসেছে একের পর এক জাল জন্মের শংসাপত্র। যা পাসপোর্টের আবেদন বা নবীকরণের সময়ে জমা দেওয়া হয়েছিল।
লালবাজার সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত এমন ছ’টি ঘটনা সামনে এসেছে। যার ভিত্তিতে সিকিয়োরিটি কন্ট্রোল অফিসের গোয়েন্দাদের তরফে ভবানীপুর থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ওই ভুয়ো জন্মের শংসাপত্র দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করার অভিযোগে সম্প্রতি এক জনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, বিহার থেকে ওই ভুয়ো শংসাপত্র তৈরি করা হয়েছিল। এই চক্রে আরও কারা জড়িত, তা জানতে পৃথক ভাবে তদন্ত চলছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)