Advertisement
E-Paper

বেতন-জালিয়াতি, তদন্তের নির্দেশ

তাঁদের কেউ থাকেন দুবাইয়ে, কেউ আমেরিকায়। অথচ অল্পদিন আগেও সকলেই ছিলেন অধুনালুপ্ত রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। মাসে মাসে বেতনও হত তাঁদের।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৬ ০০:০০

তাঁদের কেউ থাকেন দুবাইয়ে, কেউ আমেরিকায়। অথচ অল্পদিন আগেও সকলেই ছিলেন অধুনালুপ্ত রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। মাসে মাসে বেতনও হত তাঁদের।

ওই পুরসভা ভেঙে দিয়ে বিধাননগর পুরনিগম তৈরি হওয়ার পরেও কয়েক মাস এটাই চলেছে। কারণ, ওই কর্মীদের মাইনে আগের মতোই হত ভাউচারে। তবে নতুন তৈরি বিধাননগর পুরনিগম সম্প্রতি অস্থায়ী কর্মীদের ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই দেখা গেল সেই বাবদ পুরনিগমের খরচ নেমে এসেছে অর্ধেকেরও কম। কারণ, কমে গিয়েছে কর্মীর সংখ্যা। দুবাই, আমেরিকায় বসে তো আর ব্যাঙ্কে বেতনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায় না!

ফলে এক লাফে অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা নেমে এসেছে ১১৩৪ থেকে ৩৫০-এ। আর তাতেই কার্যত এক জালিয়াতি চক্রের হদিস স্পষ্ট হয়েছে অধুনালুপ্ত রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার। বিধাননগর পুরনিগম হওয়ার আগে যে পুরসভা ছিল সিপিএমের হাতে। চেয়ারম্যান ছিলেন তাপস চট্টোপাধ্যায়। দল বদলে তৃণমূল হয়ে যিনি এখন বিধাননগর পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র।

মার্চ মাসে বিধাননগর পুরনিগম বিজ্ঞপ্তি জারি করে যে, অস্থায়ী কর্মীদের বেতন দেওয়া হবে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেবে নিগমই। কর্মীদের শুধু নিগমের সামনে হাজিরা দিয়ে নিজেদের উপস্থিতি প্রমাণ করতে হবে।

এর পরেই দেখা যায়, কর্মীদের সংখ্যা কমে এসেছে মাত্র সাড়ে তিনশোয়। নিগম সূত্রে খবর, মার্চে বিজ্ঞপ্তি জারির পরে এপ্রিল আর মে মাসে অস্থায়ী কর্মীদের বেতনও এক ধাক্কায় কমে যায় পঞ্চাশ শতাংশ। অবাক হয়ে যান অনেকেই। দেখা যায় মার্চ মাসে যেখানে বেতন বাবদ নিগমের খরচ হয়েছিল ৭০ লক্ষ টাকা, দু’মাসের ব্যবধানে তা নেমে এসেছে ৩০ লক্ষে। অথচ গত অক্টোবরে পুরনিগম গঠনের পর কোনও কর্মীকে ছাঁটাইও করা হয়নি। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করেন কর্তৃপক্ষ।

আধিকারিকেরাই জানান, কাগজপত্র খতিয়ে দেখা যায়, এমন অনেক কর্মীর নাম রয়েছে যাঁদের অস্তিত্ব নেই। অথচ মার্চ মাস পর্যন্ত সেই সব নামে বেতন তোলা হয়েছে। দেখা যায়, দুবাইতে ব্যবসা করেন এমন লোকের নাম রয়েছে অস্থায়ী কর্মীর তালিকায়। কসবার বাসিন্দা এক মহিলার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে যিনি বর্তমানে আমেরিকায় রয়েছেন। রয়েছে একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ৯৯ জন চালকের নাম। কেউ আবার বাসের ব্যবসায়ী। নিজের নামে রয়েছে ১২ থেকে ১৪টি বাসও। নিগম কর্তৃপক্ষের দাবি, আমেরিকার বাসিন্দা ওই মহিলা অস্থায়ী কর্মী হিসেবে অনলাইনে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে বিষয়টি নিগমকে জানানো হয়। এক অ্যাম্বুল্যান্স কর্মীর হদিস মিলেছে যিনি নিগমের কাছে জানিয়েছেন যে পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্স হলেও যেহেতু তিনি গাড়ির তেল ভরেন, অ্যাম্বুল্যান্সটি চালান ফলে তার ভাড়াও তিনিই নিয়ে যান।

ফলে ঠিক কত মাস ধরে কত টাকা এ ভাবে ভুয়ো অস্থায়ী কর্মীদের জন্য খরচ হয়েছে, তার হিসেব এখনও করে ওঠা যায়নি। নিগম সূত্রে খবর, গত অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত কার্যত ভুয়ো নামে কী করে টাকা বেরিয়ে গেল তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মেয়র পারিষদেরা।

অতীতে অস্থায়ী কর্মীদের নিয়োগ ও তাঁদের বেতন সংক্রান্ত নানান অনিয়ম ধরা পড়েছে কর্তৃপক্ষের নজরেও। এই ঘটনার তদন্ত করতে পুরসভার কমিশনার অলোকেশপ্রসাদ রায়ের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এই কমিটি গঠনের কথা স্বীকার করেছেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তও। তিনি বলেন ‘‘তদন্তের রিপোর্টে যদি এই অনিয়ম প্রমাণিত হয়, তবে যাঁরা টাকা দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ, যথোচিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারা, কী ভাবে, কাদের এই চাকরি দিয়েছিলেন, সে সবই তদন্তে আসবে।’’ বিধাননগর পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়োজনে সিআইডি তদন্তও চাওয়া হতে পারে।

তাপসবাবু অবশ্য জানান, এ নিয়ে কোনও তদন্ত কমিটি তৈরি করতে বলা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘অস্থায়ী কর্মীরা কে, কী ভাবে বেতন তোলেন, মেয়র পারিষদদের বৈঠকে পুর-কমিশনারকে সে বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর শাস্তি হবে।’’

Investigation Police Remunation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy