Advertisement
E-Paper

সঞ্চিতার মৃত্যু-তদন্ত আঁধারেই

সঞ্চিতার মৃত্যুর পরে বিধায়ক থেকে কাউন্সিলর, নেতা থেকে কর্মীরা যে ভাবে হাসপাতালে গিয়ে মর্গের অফিসে ঢুকে পড়েন, তাতে ময়না-তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেরই অভিযোগ, শেষকৃত্য দ্রুত সম্পন্ন করতেই রাতারাতি ময়না-তদন্ত শেষ করে ফেলা হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৪০
সঞ্চিতা দত্ত। নিজস্ব চিত্র

সঞ্চিতা দত্ত। নিজস্ব চিত্র

স্বামী দলবদল করতেই রাজনীতির দরজাটা খুলে গিয়েছিল তাঁর সামনে। বছর দুয়েক আগে বাইরের জগৎটার সঙ্গে অন্যরকম ভাবে পরিচয় হয় দক্ষিণ দমদমের সদ্যপ্রয়াত কাউন্সিলর সঞ্চিতা দত্তের। তাঁর ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, মিশুকে সঞ্চিতার গুণমুগ্ধের সংখ্যাও বাড়ে। পারিবারিক অশান্তি আগে থাকলেও তা জটিল হয় এর পরেই।

কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ বৃত্ত বা এলাকায় তাঁর মৃত্যু নিয়ে যতই আলোচনা হোক, ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও রহস্যের কূলকিনারা পায়নি পুলিশ। অন্তত, তদন্তে তেমন ইঙ্গিত মেলেনি। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশ এখন ময়না-তদন্তের রিপোর্টের দিকেই তাকিয়ে।

সঞ্চিতার মৃত্যুর পরে বিধায়ক থেকে কাউন্সিলর, নেতা থেকে কর্মীরা যে ভাবে হাসপাতালে গিয়ে মর্গের অফিসে ঢুকে পড়েন, তাতে ময়না-তদন্ত নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেরই অভিযোগ, শেষকৃত্য দ্রুত সম্পন্ন করতেই রাতারাতি ময়না-তদন্ত শেষ করে ফেলা হয়েছে। আর তাতেই তৈরি হয়েছে সন্দেহ।

ইতিমধ্যেই বিধাননগর পুলিশ দাবি করেছে, সঞ্চিতার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা তারা জানতে পারে আর জি কর হাসপাতাল থেকে। তারা পৌঁছনোর আগেই সঞ্চিতার দেহ ময়না-তদন্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাই পুলিশ দেহ দেখতে পায়নি। এমনকী, অনেক পরে ঘটনাস্থল পরীক্ষা করার সুযোগ পান তদন্তকারীরা।

পরিবর্তন: ধীরে ধীরে কি তাঁকে গ্রাস করছিল অবসাদ? পরিচিতদের দাবি, এ ভাবেই চেনা হাসি হারিয়ে যাচ্ছিল সঞ্চিতা দত্তের। নিজস্ব চিত্র

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ঘটনায় নানা অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। যদিও সরকারি ভাবে তাঁরা মুখ খোলেননি। তদন্ত নিয়ে সংশয় রয়েছে দক্ষিণ দমদম এলাকার বাসিন্দাদের মনেও। তাঁদের একাংশের মতে, সঞ্চিতা ও তাঁর পরিচিতদের মধ্যে অনেকেই অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাই কারও বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের হবে না, সেটাই স্বাভাবিক। তা হলে তদন্ত কি আদৌ ঠিক পথে এগোবে, প্রশ্ন তাঁদের।

স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর দুই আগে পুরভোটের সময়ে কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেন সঞ্চিতার স্বামী কৃষ্ণপদ দত্ত। সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে কৃষ্ণপদর প্রভাব ছিল যথেষ্ট। তৃণমূলে যোগদানের বিনিময়ে তাঁর স্ত্রী পুরভোটের টিকিট পান। কাউন্সিলর হতেই আলাদা পরিচিতি তৈরি হয় সঞ্চিতার। তাঁর বন্ধুরা অনেকেই জানিয়েছেন, স্ত্রীর পৃথক বৃত্ত নিয়ে সংসারে অশান্তির শুরু তার পর থেকেই। ঘনিষ্ঠদের কাছে স্বামীর বিরুদ্ধে একাধিক বার অভিযোগ করেছিলেন সঞ্চিতা।

সঞ্চিতার এক বন্ধু জানান, গত কয়েক মাসে পারিবারিক অশান্তি বাড়ছিল বলেও তাঁদের জানিয়েছিলেন তিনি। সেই অশান্তি পৌঁছয় দলের অন্দরেও। এক কাউন্সিলর জানিয়েছেন, বছরখানেক আগে সঞ্চিতা এক বিধায়ককে পুরো বিষয়টি জানান। সেই বিধায়ক কৃষ্ণপদ ও সঞ্চিতাকে ডেকে আপাত ‘মিটমাট’ করে দেন। কিন্তু অশান্তি যে মেটেনি, তার প্রমাণ মেলে কয়েক দিন পরেই। তাঁর ঘনিষ্ঠ ওই কাউন্সিলরকে সঞ্চিতা জানিয়েছিলেন, একই বিষয় বারবার আর কাকে বলবেন! এ ব্যাপারে কৃষ্ণপদবাবুকে ফোন করা হলে তিনি এ দিনও কথা বলতে চাননি।

তা হলে সঞ্চিতার মৃত্যুর তদন্তের কী হবে? বিধাননগরের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত যে ভাবে হয়, এ ক্ষেত্রেও তা-ই হচ্ছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

তৃণমূলের একাংশের অবশ্য দাবি, সঞ্চিতার পরিবারের তরফে অভিযোগ নেই। ওই কাউন্সিলরকে নিয়ে যে সব খবর ছড়িয়েছে, তা রটনা। এতে পরিবারের উপরে চাপ তৈরি হচ্ছে। যদিও এলাকাবাসীর একাংশের বক্তব্য, জনসংযোগ এবং পুর পরিষেবার নিরিখে অল্প দিনেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন ওই কাউন্সিলর। তাই কী ভাবে এই মৃত্যু, তা নিয়ে সকলের আগ্রহ থাকবেই।

Sanchita Dutta Death Unnatural Death Suicide Councillor TMC সঞ্চিতা দত্ত
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy