Advertisement
E-Paper

জরুরি রোগীর পরিবারকে বুঝিয়ে বলাও

ক্যানসার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, আধুনিক ক্যানসার চিকিৎসার প্রধান দিক হল রোগী ও তাঁর পরিজনদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা। অনেক সময়ে সেটা ঠিক মতো হয় না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৩১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু আধঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় রোগীর। এর পরে চিকিৎসকের উপরে হামলা এবং হাসপাতালের ওয়ার্ড ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে। চিকিৎসায় গাফিলতির পাল্টা অভিযোগ তোলেন পরিজনেরাও।

সোমবার চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে ওই রোগীমৃত্যুর ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে ক্যানসার আক্রান্তের শারীরিক অবস্থা কিংবা চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে কতটা বিশদে বোঝানো হয় পরিজনদের?

ক্যানসার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, আধুনিক ক্যানসার চিকিৎসার প্রধান দিক হল রোগী ও তাঁর পরিজনদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা। অনেক সময়ে সেটা ঠিক মতো হয় না। যেমন, সোমবার হাজরার ওই ক্যানসার হাসপাতালে মৃত গোপাল কয়ালের পরিবারের সদস্যেরা জানিয়েছেন, মাস তিনেক আগে তাঁরা জানতে পারেন টালিগঞ্জের বাসিন্দা বছর তেত্রিশের ওই যুবক ক্যানসারে আক্রান্ত। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। ট্র্যাকিওস্টোমি (গলার নীচে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছিদ্র করে দেওয়া, যাতে শ্বাস নিতে অসুবিধা না হয়।) করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু জিভে ক্যানসারের জন্য হঠাৎ শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা হতে পারে সেটা তাঁরা জানতেন না। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, রোগীর পরিজনদের কি চিকিৎসকেরা কিছুই জানাননি? কারণ, চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জিভের ক্যানসারে আক্রান্তের চিকিৎসায় ট্র্যাকিওস্টোমি জরুরি। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা এড়াতেই এটা দ্রুত করতে হয়। জরুরি বিভাগে ভর্তির দশ মিনিটে মধ্যে সেটা সম্ভব নয়। অন্তত ঘণ্টা ছয়েক সময় দিতে হয়।

চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সরকারি হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসকের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাই তাঁদের মানসিক অবস্থা সামলানোর জন্য যে সময় দেওয়া দরকার, তা অধিকাংশ সময় চিকিৎসকেরা দিতে পারেন না। যার জেরে নানা সমস্যা তৈরি হয়।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসক সুপর্ণা ঘোষ বলেন, ক্যানসার নির্ণয়ের পরীক্ষা করানোর পরামর্শ শুনেই রোগীর পরিজনেরা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পাশাপাশি এটাও মাথায় রাখতে হবে যে অন্য রোগের তুলনায় ক্যানসার নিয়ে মানুষের মনে আতঙ্ক বেশি। ফলে চিকিৎসকদের দায়িত্বও অনেকটাই বেশি। সীমিত পরিকাঠামো সত্ত্বেও আমাদের রোগীর বাড়ির লোকেদের জায়গায় নিজেদের রেখে পরিস্থিতি বিচার করতে হবে।’’

‘‘কিন্তু সরকারি হাসপাতালের স্বল্প পরিকাঠামোয় রোগী পিছু কতটা সময় দেওয়া সম্ভব?’’— প্রশ্ন তুলছেন আর জি করের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালে এক জন চিকিৎসক ১০ মিনিটের বেশি সময় দিতে পারেন না। কারণ, রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা খুব কম।’’ তাঁর প্রশ্ন, রোগীর পরিজন বলতে কী বোঝায়! ‘‘যে কোনও সরকারি হাসপাতালে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে ফি-দিন নতুন পরিজন আসেন। প্রতি দিন নতুন মানুষকে কাউন্সেলিং করা যায় না।’’

ক্যানসার চিকিৎসক সোমনাথ সরকারেরও মত, ‘‘ফি-দিন রোগীর সঙ্গে তাঁর পরিজন বদলে গেলে কাজটা মুশকিল হয়ে যায়। পরিবারকেও সেটা মনে রাখতে হবে।’’ ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ক্যানসারে আক্রান্ত, এটা কেউ মানতে চান না। পরিবারও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে। কিন্তু চিকিৎসকের ধৈর্য্যের সঙ্গে বোঝানো জরুরি। রোগীর অবস্থা খারাপ হলে, পরিষ্কার ভাবে পরিজনদের জানানো দরকার।’’

Treatment Cancer Doctors Patients Negligence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy