Advertisement
E-Paper

কম্পন মৃদু হলেও জরুরি সেতুর পরীক্ষা

বুধবার ঘড়িতে তখন সকাল দশটা কুড়ি মিনিট। মৃদু কেঁপে উঠল এ শহরের মাটি। তারই সঙ্গে উঠে এল সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। জীর্ণ সেতুগুলি মৃদু ভূমিকম্পের ধকল নিতে পারবে তো? নাকি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে?

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২২

গত এক সপ্তাহ ধরে শহরের সেতুগুলির দুরবস্থার একের পর এক ছবিই প্রকট হয়ে উঠেছে। যার জেরে আতঙ্কিত শহরবাসী। এরই মাঝে বুধবারের ভূমিকম্পে আরও এক বার কেঁপে উঠল বাসিন্দাদের বুক।

বুধবার ঘড়িতে তখন সকাল দশটা কুড়ি মিনিট। মৃদু কেঁপে উঠল এ শহরের মাটি। তারই সঙ্গে উঠে এল সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। জীর্ণ সেতুগুলি মৃদু ভূমিকম্পের ধকল নিতে পারবে তো? নাকি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে? শহরের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, ভূমিকম্প হলে যে কম্পন হয়, তা রোধ করার প্রযুক্তি দিয়েই সেতুগুলি তৈরি হয়। তাই অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে দুর্বল কাঠামো হলে শরীরে যে কম্পনের কুপ্রভাব পড়তে পারে, তা-ও মানছেন তাঁদের একাংশ। তুলনায় এক ধাপ সতর্ক ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের অনেকেরই মত, ভূমিকম্পের মাত্রা যাই হোক, যেখানে কম্পন অনুভূত হয়েছে সেখানে সেতু থাকলে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সোমনাথ ঘোষের মতে, ‘‘কম্পনের মাত্রা কতটা, তার উপরে নির্ভর করছে সেতুর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। তবে সেতু জীর্ণ হলে অবশ্যই ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ জন্য নিয়মিত সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি।’’ সোমনাথবাবু জানান, ভারতে কম্পনের মাত্রা অনুযায়ী চারটি ‘সিসমিক জোন’ তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘জোন ওয়ান’ হল ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। কলকাতা ‘জোন থ্রি’-র মধ্যে পড়ে। তাই এ শহরের সেতুগুলির যখন সার্বিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তখন ভূমিকম্পের ধকল সহ্যের ক্ষমতাও দেখা জরুরি। সোমনাথবাবুর মতে, ‘‘ডিজিটাল স্ক্যানিং, আল্ট্রা সাউন্ড পালস্ ভেলোসিটি টেস্ট করলে এখন সেতুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়। ভূমিকম্পের পরে সতর্কতা হিসাবে সেতুর এই সব পরীক্ষা করলে ক্ষতি হল কি না তার কিছুটা আঁচ পাওয়া যায়।’’

কানপুর আইআইটি-র ডিপার্টমেন্ট অব আর্থ সায়েন্সের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ শান্তনু মিশ্রের মতে, ‘‘ভূমিকম্প হলে সব থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেতুর স্তম্ভে। কম্পনে স্তম্ভের কোনও অংশ বসে যেতে পারে। যা খালি চোখে দেখে বেশিরভাগ সময়ে বোঝা যায় না। স্তম্ভ বসে গেলে সেতুর কংক্রিটেও চিড় ধরে। তাই ভূমিকম্পের পরে নতুন এবং পুরনো যে কোনও সেতুর স্তম্ভ পরীক্ষা জরুরি। পাশাপাশি কংক্রিটেরও পরীক্ষা করার প্রয়োজন রয়েছে।’’

এ শহরের অধিকাংশ সেতু রক্ষণাবেক্ষণ করে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। ওই সংস্থার চিফ ইঞ্জিনিয়ার (সেতু ও রাস্তা) ভাস্কর মজুমদারের আশ্বাস, অযথা ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তিনি বলেন, ‘‘শহরে যত সেতু আছে সব ক’টি ভূমিকম্প রোধক প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি। দ্রুত সব সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও শুরু হবে। তখন আবার সব দিক খতিয়ে দেখা হবে।’’ ভাস্করবাবু জানান, ১৮৯৩ সালে তৈরি হয়েছিল ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড কোড’। সেখানেই লেখা আছে নির্মাণ কাজের সময়ে কী কী নিয়ম মানতে হবে। ভূমিকম্প রোধ করতে সেতুতে কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা-ও লেখা আছে। ৫০ বছরেরও বেশি পুরনো সেতু তৈরির সময়েও ভূমিকম্প রোধক প্রযুক্তি নেওয়া হয়েছিল বলেই তাঁর দাবি।

Check Up Earthquake Fly Over
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy