Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Brigade Rally of Kolkata

ব্রিগেডমুখী জনতা না ভাসানের ভিড়? টুম্পা-ডান্সে বদলে যাওয়া ব্রিগেড দেখল রাজ্য

ডালা খুলে দিয়ে একাধিক লরিতে বসানো হাজার হাজার ওয়াটের ‘ডিজে বক্স’! তাতে তারস্বরে বাজছে সিপিএমের ‘টুম্পা’ গানের প্যারোডি!

উল্লাস: মিছিলে ‘টুম্পা’ গানের সঙ্গে চলছে নাচ। রবিবার, ধর্মতলায়।  ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

উল্লাস: মিছিলে ‘টুম্পা’ গানের সঙ্গে চলছে নাচ। রবিবার, ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২১ ০৬:৫১
Share: Save:

ডালা খুলে দিয়ে একাধিক লরিতে বসানো হাজার হাজার ওয়াটের ‘ডিজে বক্স’! তাতে তারস্বরে বাজছে সিপিএমের ‘টুম্পা’ গানের প্যারোডি! তেমনই একটি লরি ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেলের কাছাকাছি আসতেই পিছনে থাকা ‘ভাসান ডান্সে’ ব্যস্ত কয়েক জন শুয়ে পড়লেন রাস্তাতেই। থমকে গেল পিছনের মিছিল। সেখান থেকে আরও কয়েক জন ছুটে এসে মাটিতে শুয়ে পড়া যুবক-যুবতীদের দিকে ঝুঁকে পড়ে শুরু করলেন নাচ! উড়তে শুরু করল লাল আবির। সঙ্গে মুহুর্মুহু সিটি!

বাম-কংগ্রেসের ব্রিগেডমুখী জনতা? না কি, বাবুঘাটে ভাসান দিতে যাওয়া কোনও ভিড়?— হাতে দলীয় পতাকা বা পরনের পোশাকে রাজনৈতিক দলের চিহ্ন না থাকলে দেখে বোঝার উপায় ছিল না। যদিও কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, পালাবদলের এমনই নানা চিত্র ধরা পড়ল রবিবারের ব্রিগেড ঘিরে। এক কালে গণসঙ্গীত, রবীন্দ্রসঙ্গীত বা ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ গাইতে গাইতে ময়দানের দিকে যেতে দেখা যেত যে মিছিলকে, এ বার সেই মিছিলই ‘চরিত্র বদলে’ নাচল টুম্পা গানের প্যারোডির সঙ্গে। বদলে গেল দলের তরফে মিছিলে আগতদের বসিয়ে খাওয়ানোর রেওয়াজও। যদিও পার্ক সার্কাসের একটি আঞ্চলিক কমিটির তরফে শুধু ১৩০০ জনের জন্য ছোলার ডালের খিচুড়ি বানিয়ে আনা হয়েছিল বলে জানান সেখানকার এক বাম কর্মী। কেউ কেউ আবার রুটি-তরকারি বানিয়ে নিজেদের মতো
নিয়ে এসেছিলেন।

এ দিন মিছিলের সঙ্গে আসা উত্তর কলকাতার এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘ছাত্র রাজনীতির সময় থেকে শ্যামপুকুর বিধানসভা কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। আগে আমাদের আঞ্চলিক কমিটি থেকেই ব্রিগেডে আসা কর্মী-সমর্থকদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকত। পার্টি থেকে টাকা দিয়ে রান্না করানো হত অঞ্চলের কলেজ-স্কুলে। এ বার সে সব নেই। হবেই বা কী করে? দলও তো আর ক্ষমতায় নেই।’’ বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীও নিজের ব্রিগেড স্মৃতি প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আগে পার্টির তরফেই ব্রিগেডে রুটি খাওয়ানো হত। রুটি দিতে গিয়ে সেই প্রথম কোথা থেকে কোন ধরনের মানুষ আসেন, তা বুঝে নেওয়ার চেষ্টার শুরু। তবে এখন আর ও সব হয় না।’’ যাদবপুরের এক সিপিএম কর্মীর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘দল বেঁধে রাস্তায় বসিয়ে ডিম-ভাত খাওয়ানোর সংস্কৃতি যে আমরা ছেড়ে বেরোতে পেরেছি, এটাই তো বড় কথা!’’ এই স্বস্তি অবশ্য উধাও হয়ে যাচ্ছে গণসঙ্গীত ছেড়ে টুম্পার প্যারোডিতে ‘ভাসান নাচের’ প্রসঙ্গ উঠতেই।

ব্রিগেড শেষে শিয়ালদহের দিকে হেঁটেই ফিরছিলেন দত্তপুকুর থেকে আসা অশীতিপর সুকমল সরকার। তাঁর সামনে দিয়েই তারস্বরে বক্স বাজাতে বাজাতে ফিরছিল বাম কর্মী-সমর্থক বোঝাই একটি লরি। সাউন্ড বক্সে লাগানো দড়ি ধরে ঝুলতে ঝুলতে কয়েক জনকে প্যারোডির তালে বিপজ্জনক ভাবে কোমর দোলাতে দেখে সুকমলবাবু চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘‘আরে পড়ে যাবে তো! মিছিলের বক্তব্য শুনতে এসেছে, না নাচতে? সবই হল, কিন্তু টুম্পা ডান্সে এই বদলে যাওয়া ব্রিগেড দেখে মন ভরল না।’’

এ দিন ব্রিগেডে উপস্থিত বর্ষীয়ান চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার অবশ্য বললেন, ‘‘আমরা এক ধরনের গান শুনে বড় হয়েছি। তবে নতুন জিনিস তো আসবেই। গণসঙ্গীত একেবারে হয়নি, এটা ঠিক মনে হয় না। তা ছাড়া নতুন ওই গানটা যেমন বিনোদন দেয়, আবার ভাবায়ও। ফলে এতে আমি কোনও সমস্যা দেখি না।’’ কিন্তু যে কঠিন পরিস্থিতির কথা বলে বামেদের এ দিনের ব্রিগেডের ডাক, সেখানে এমন নাচ মানায়? টুম্পার প্যারোডি লেখক রাহুল পাল বললেন, ‘‘প্যারোডি হিট। মানুষ নিয়েছেন। এ বার প্যারোডি শুনে কে কী ভাবে নাচবেন সেটা বলতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPIM Brigade Rally of Kolkata Tumpa song
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE