Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

রিপোর্ট জমা পড়ল কি না, জানা গেল না ৭৪ দিনেও

ধোঁয়াশা কাটল না মৃত্যুর চার মাস পরেও। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২০ ০৬:১৮
Share: Save:

ধোঁয়াশা কাটল না মৃত্যুর চার মাস পরেও।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিঁথি থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, পুলিশি অত্যাচারের কারণেই মৃত্যু। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায়। ৩১ মার্চের মধ্যে সেই রিপোর্ট জমা পড়ার কথা ছিল। কলকাতা পুলিশের দাবি, তারা রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ তো দূরের কথা, নির্ধারিত সময়ের ৭৪ দিন (আড়াই মাস) পরেও আদৌ রিপোর্টটি তাঁরা পেয়েছেন কি না, পেলেও তার কী অবস্থা, সে বিষয়েই নিশ্চিত হতে পারছেন না কমিশনের কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এত দিন লকডাউন চলার ফলে কোন রিপোর্টের কী অবস্থা, তা চটজলদি বলা সম্ভব নয়।

যদিও পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর মতো অভিযোগের রিপোর্টের ক্ষেত্রে লকডাউন কোনও যুক্তি হতে পারে না বলে মনে করছেন অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। যেখানে গোটা পৃথিবীতেই সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ চালু রয়েছে, সেখানে এই বিষয়টি লকডাউনের কারণে আটকে থাকার কথা নয়। এক মানবাধিকার কর্মীর কথায়, ‘‘পুলিশি অত্যাচারে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে আমেরিকায় কী হচ্ছে, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেখানেও লকডাউন রয়েছে। সেই বিক্ষোভ ঠিক কী ভুল, সেটা পরের প্রশ্ন। হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগের সব সময়েই বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে। সেখানে লকডাউন কোনও যুক্তি নয়।’’ সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুর মতো অভিযোগের ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ দায়বদ্ধতা থাকে। সেই দায়বদ্ধতা পালন করতে পারলে সাধারণ মানুষের মনে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে আস্থা জন্মায়। না হলে কমিশনের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘লকডাউনের সঙ্গে রিপোর্ট জমা পড়েছে কি পড়েনি তার তো সম্পর্ক নেই। এর জন্য আড়াই মাস লাগে না!’’

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) মুরলীধর শর্মার বক্তব্য, ‘‘৩১ মার্চের মধ্যে রিপোর্ট চেয়েছিল কমিশন। আমরা সেই মতোই রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ মানবাধিকার কমিশনের সদস্য তথা রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অফিস তো পুরোপুরি চালু হয়নি। তাই এখনই এ বিষয়ে বলা সম্ভব নয়। সোমবার খোঁজ নিয়ে জানাব।’’

মানবাধিকার কমিশন সূত্রের খবর, ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যে ‘কাস্টডিয়াল ডেথ’ বা হেফাজতে অভিযুক্ত/অপরাধীদের মৃত্যুর ঘটনা ছিল ৬২টি। যদিও ‘কাস্টডিয়াল ডেথ’-এর ক্ষেত্রে কমিশন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে যে পদক্ষেপ করেছে, তার সর্বশেষ উল্লেখ

রয়েছে গত বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। অন্তত কমিশনের ওয়েবসাইট তেমনটাই বলছে। অর্থাৎ, লকডাউন হওয়ার আগেই ওয়েবসাইটে হেফাজতে মৃত্যু সংক্রান্ত ঘটনার আপডেট দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। যদিও কমিশনের কর্তাদের একাংশ এ ক্ষেত্রেও লকডাউনের যুক্তি দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখার পরই একসঙ্গে অনেক তথ্য ওয়েবসাইটে জানিয়ে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হত না, যদি না লকডাউন পর্ব শুরু হত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Dead Body police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE