Advertisement
E-Paper

আবার ঘেরাওয়ের জাঁতাকলে যাদবপুর

হাজার চেষ্টাতেও ঘেরাও-অবস্থান থেকে শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ঘেরাও করে রাখা হয় সেখানকার প্রশাসনিক ভবনে। কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকেন। গত বছর যাদবপুরেই উপাচার্য, রেজিস্ট্রার-সহ বেশ কয়েক জন কর্তাকে একটানা ৫২ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। এ দিনের ঘেরাও গভীর রাত পর্যন্ত গড়ানোয় আগের বছরের ঘটনারই পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছিল শিক্ষাজগৎ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫৯
ঘেরাও উপাচার্য। মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

ঘেরাও উপাচার্য। মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

হাজার চেষ্টাতেও ঘেরাও-অবস্থান থেকে শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে ঘেরাও করে রাখা হয় সেখানকার প্রশাসনিক ভবনে। কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডাকেন।

গত বছর যাদবপুরেই উপাচার্য, রেজিস্ট্রার-সহ বেশ কয়েক জন কর্তাকে একটানা ৫২ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। এ দিনের ঘেরাও গভীর রাত পর্যন্ত গড়ানোয় আগের বছরের ঘটনারই পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছিল শিক্ষাজগৎ। শেষ পর্যন্ত রাত ২টো নাগাদ অন্য কিছু শিক্ষকের মধ্যস্থতায় ঘেরাও ওঠে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, ঘেরাও হটাতে পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করেছে। পুলিশ মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, কোনও রকম বলপ্রয়োগ ছাড়াই তারা উপাচার্য এবং অন্যদের বার করে নিয়ে এসেছে।

তার আগে দুপুর থেকেই উত্তেজনা চলছিল ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ইতিহাস বিভাগের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির তদন্ত ঠিকঠাক হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে দুপুর থেকে এক দল পড়ুয়া অরবিন্দ ভবনের সামনে বসে পড়েন। তাঁদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি (আইসিসি)-র দুই সদস্যাকে সরিয়ে অন্য দু’জনকে নিতে হবে। কারণ, ওই দুই সদস্যা শ্লীলতাহানির ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে অভিযোগকারিণী ছাত্রীকে বেশ কিছু অস্বস্তিকর প্রশ্ন করেন। পরে ছাত্রীটি তদন্ত কমিটির ওই দুই সদস্যার বিরুদ্ধেই বিধাননগর দক্ষিণ থানায় অভিযোগ করেন। এর পরে তদন্ত কমিটিতে ওই দু’জনের থাকার অধিকার থাকতে পারে না বলে মনে করেন ছাত্রছাত্রীরা।

বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের আরও অভিযোগ, ওই তদন্ত কমিটি নিয়ম মেনে গড়া হয়নি। কমিটিতে এক তৃণমূল নেতার মেয়েকে রাখা হয়েছে। তা ছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে এক জন আইন বিশেষজ্ঞ বা মনোবিদকে রাখতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সদস্য করা হয়েছে হাসপাতালের এক আধিকারিককে। তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট নন বলে জানান বিক্ষোভকারীরা। তাই সোমবার ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ছাত্র সংসদ ‘ফেটসু’-র পক্ষ থেকে উপাচার্যকে ঘেরাও করা হয়েছিল। উপাচার্য তাঁদের দাবি মানেন কি না, মঙ্গলবার তারই অপেক্ষায় ছিলেন পড়ুয়ারা। কিন্তু সন্ধ্যায় উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকের পরে ছাত্রছাত্রীদের জানান, তাঁরা এত দিন ধরে তদন্ত কমিটি নিয়ে যে-দাবি জানিয়ে আসছেন, তা মানা হবে না। কেন মানা হবে না, তার ব্যাখ্যাও দেন কর্তৃপক্ষ। তাঁরা জানান, আইন মেনেই তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। বরং ছাত্রছাত্রীরা নতুন যে-দু’জনকে ওই কমিটিতে রাখতে বলছেন, তাঁদের রাখলেই আইন লঙ্ঘন করা হবে।

পড়ুয়াদের দাবি না-মানার কথা জানিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নতুন একটি ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ বা আচরণবিধি জারি করে বলা হয়, ক্যাম্পাসে নজরদারির জন্য নতুন দল গড়া করা হবে। শুনেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন পড়ুয়ারা। তাঁদের অবস্থান বদলে যায় ঘেরাওয়ে। যোগ দেন প্রতিষ্ঠানের সব শাখার ছাত্রছাত্রীরা। তাঁরা জানান, এই আন্দোলনে কোনও ধরনের রাজনৈতিক রং নেই।

এরই মধ্যে এক দল শিক্ষাকর্মী ঘেরাওয়ের মধ্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোতে গেলে পড়ুয়ারা তাঁদের বাধা দেন বলে অভিযোগ। কর্মীদের পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়ায় বচসা বাধে। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তোলে। উপাচার্য ফোন করে পুলিশ ডাকেন।

পুলিশ দেখে ঘেরাওয়ে বসে থাকা পড়ুয়ারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তৃণমূল বাইরে থেকে লাঠি হাতে গুন্ডা এনে তাঁদের উপরে হামলা চালিয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা তার পরেই প্রশাসনিক ভবনের গেট আটকে দেন। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এ দিকে, অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারাও ঘটনাস্থলে হাজির হন। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা ঘেরাওয়ে বসা ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে এসেছেন। চলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাও। উপাচার্য জানিয়ে দেন, ঘেরাও না-তুললে তিনি পড়ুয়াদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করবেন না। মিটমাটের জন্য কিছু শিক্ষক রাতে কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়াদের মধ্যে মধ্যস্থতা শুরু করেন।

গত বছর ৫২ ঘণ্টা ঘেরাওয়ের ঘটনায় পুলিশ ডাকার প্রয়োজন হয়নি। তা হলে এ দিনের ঘটনায় কেন পুলিশ ডাকা হল, সেই প্রশ্ন ওঠে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতেই পুলিশ ডাকা হয়েছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, “কর্তৃপক্ষই আমাদের ডেকেছেন।”

ঘেরাওয়ের নিন্দা করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি এখনও মনে করি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘেরাও-আন্দোলন ঠিক পথ নয়।” তাঁর বক্তব্য, কোনও দাবি থাকলে ছাত্রছাত্রীরা তা নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতেন। তাতেও কাজ না-হলে তাঁরা শিক্ষাসচিবের সঙ্গে দেখা করে সব জানাতে পারতেন। মন্ত্রী জানিয়ে দেন, আচরণবিধির ব্যাপারে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্তই সমর্থন করবেন। সেই সঙ্গেই তাঁর আশ্বাস, “ছাত্রছাত্রীরা ঠিক কী চাইছেন, তা আমি জানি না। বুধবার খোঁজখবর নেব।”

jadavpur gherao history department student molestation vice chancellor gherao kolkata news online kolkata news police attacked jadavpur university
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy