E-Paper

শিল্পক্ষেত্রে জল দূষণ রুখতে যাদবপুরের প্রকল্প, সহায়তায় প্রাক্তনী

শিল্পক্ষেত্রে জ়িরো লিকুইড ডিসচার্জ (জেডএলডি) নীতির গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। এর মানে ছোট-বড় শিল্পের দূষিত জল এক ফোঁটাও কোনও জলাশয়ে মেশা ঠেকাতে হবে।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:২০
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। — ফাইল চিত্র।

দেশে-বিদেশে শিল্পের বর্জ‍্য জল শোধন এবং জলাশয় সুরক্ষার কাজেই জীবনের বড় অংশ কাটিয়ে কিছু কথা ভাবছিলেন কৃতী ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মুখোপাধ‍্যায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৯৬৭ সালের প্রাক্তনী, সানফ্রান্সিসকোবাসী প্রবীণ স্বপ্ন দেখেন, তাঁর নিজের দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সচেতনতার এই ফলিত প্রয়োগে শামিল করতে হবে।

সেই ভাবনার বীজ অভিনব প্রকল্পের আকার নিয়েছে। শিল্পক্ষেত্রে জলদূষণ সঙ্কটে যা সুস্থায়ী উন্নত সমাধানের দরজা খুলছে। দেবাশিস এবং গ্লোবাল যাদবপুর ইউনিভার্সিটি অ‍্যালুমনি ফাউন্ডেশনের (জিজেইউএএফ) প্রেসিডেন্ট রঞ্জিত চক্রবর্তীরা চাননি, আরও একটি গবেষণাপত্রের প্রকাশ হোক। ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে হাতেকলমে কাজ করে তরুণ ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর বা খাস শিল্পজগতের পেশাদারদের মাধ‍্যমে জলের সচেতন ব‍্যবহার এবং পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠাই এখন তাঁদের উদ্দেশ্য।

এ দেশেও শিল্পক্ষেত্রে জ়িরো লিকুইড ডিসচার্জ (জেডএলডি) নীতির গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। এর মানে ছোট-বড় শিল্পের দূষিত জল এক ফোঁটাও কোনও জলাশয়ে মেশা ঠেকাতে হবে। দূষিত জল শোধনের পরে তা ধোয়াধুয়ি, আগুন নেভানো, গাড়ি ধোয়া, জমিতে জল সিঞ্চন বা বাগান করা, চাষবাসেও কাজে লাগে। এই লক্ষ‍্যটি সামনে রেখেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাঙ্গন এবং পেশাদার শিল্পজগতের মধ‍্যে গাঁটছড়ার পথে হাঁটছে যাদবপুরের নতুন প্রকল্প। এর পৃষ্ঠপোষকতায় সারা বিশ্বে ছড়ানো যাদবপুরের প্রাক্তনীদের ফাউন্ডেশন বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজে়র মতো বিভাগগুলির সঙ্গে সমন্বয় রাখছে।

প্রাক্তনীদের সঙ্গে নিয়ে নানা উদ্ভাবনী প্রকল্পের উদ্গাতা, যাদবপুরের সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্তের মতে, “ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্পজগতকে কোনও শিক্ষাক্রমের শরিক করে তোলার দিক দিয়েও যাদবপুরের এই প্রকল্প দেশে বিরল। নিছকই ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্টার্নের কাজ নয়। জেএলডি-র সার্থক রূপায়ণে এই কোর্সে সরাসরি শিক্ষার্থীদের ক্লাসঘর হয়ে উঠেছে ইন্ডাস্ট্রি। দুর্গাপুর, বার্নপুরে স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (সেল) সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটি নতুন পাঠ‍্যক্রম চালু হচ্ছে।”

যাদবপুরে ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের অধ‍্যাপক পঙ্কজকুমার রায় উদ‍্যোগটির মুখ‍্য সমন্বয়ক। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভাগীয় প্রধান অনুপম দেব সরকার, স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়ের অধ্যাপক জয়দীপ মুখোপাধ‍্যায়, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপিকা রঞ্জনা দাসও বিষয়টির পরিচালনায়। পঙ্কজ বলছিলেন, “গোড়ায় আট মাসের কোর্সে দশ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে আমরা এগোতে চাই। সিভিল, কেমিক্যাল থেকে এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ়, বায়োটেকনোলজি, রসায়নের স্নাতকোত্তররাও এতে সুযোগ পাবেন। প্রথম তিন মাস ক্লাস করার পরে সেলের কারখানায় চার মাসের হাতেকলমে শিক্ষাপর্ব। শেষ এক মাস রিপোর্ট লেখা, মূল‍্যায়নের পরে মিলবে শংসাপত্র।”

জিজেইউএএফের তরফে প্রথমে প্রকল্পটির তিন বছরে ৬০ হাজার ডলারের খরচ ধরে এগোনো হচ্ছে। এর মধ‍্যে শিক্ষার্থীদের মাসে মাসে বৃত্তিও দেওয়া হবে। মোট ব‍্যয়ভারের মধ্যে ৫৪ হাজার ডলার দেবাশিস বহন করছেন। সাধারণত, শিল্পক্ষেত্রে ব‍্যবহৃত জলের শতকরা ৮০ ভাগই বর্জ্য হয়। জেডএলডির প্রয়োগের দক্ষতা পেশাগত পরিসরে শিক্ষার্থীদের মোক্ষম হাতিয়ার হবে বলে মত যাদবপুর কর্তৃপক্ষের। আগামী বছরের গোড়ায় এই পাঠ চালু করার লক্ষ্যে তাঁরা এগোচ্ছেন। জিজেইউএএফ-এর প্রেসিডেন্ট রঞ্জিতের মতে, “পরিবেশ রক্ষায় শিক্ষাঙ্গন ও শিল্পক্ষেত্রের সমন্বয় মডেল হিসেবে এমন কোর্স সম্ভাবনাময়। পরিবেশ রক্ষার নিয়ামক সংস্থাগুলির কাছেও এর গুরুত্ব মেলে ধরব।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pollution Water pollution

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy