এখন শুধু থেমে নেই চন্দননগরেই। কলকাতাতেও বিভিন্ন সর্বজনীন পুজোর ভিড়ে ক্রমশই বাড়ছে জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, শহরে ২০১২ সালে সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা ছিল ৪১২, ২০১৩ সালে ৪৩৭, ২০১৪ সালে ৫১৪। আর এ বছর শনিবার পর্যন্ত ৫৬০টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে।
দুর্গাপুজো-কালীপুজোর সঙ্গে সঙ্গে গত দু’বছরে শহরে গণেশ, জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
সমাজতত্ত্ববিদ থেকে অর্থনীতিবিদ সকলেই একমত, পুজোপার্বণের হিড়িক বাড়ার নেপথ্যে রয়েছে বেকারত্ব। রাজ্যে বড় শিল্প নেই। শিল্পপতিরা রাজ্য ছেড়ে বিদায় নিচ্ছেন। অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের পর্যবেক্ষণ, ‘‘রাজ্যে বেকারত্ব বেড়ে চলেছে। এ রাজ্যে কাজ নেই। যুবকেরা তাই বেশি করে পুজোয় ঝুঁকছেন।’’ সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্রেরও একই ব্যাখ্যা। তাঁর কথায়, ‘‘বাঙালির হুজুগে স্বভাব চিরকালের। সেটা আলাদা মাত্রা নিয়েছে। এখন রাজ্যে কাজকর্ম নেই। কলকারখানা বন্ধ হওয়ার মুখে। তাই রাজ্যের বেকাররা পুজোর দিকে বেশি ঝুঁকছেন।’’
তবে, গণেশপুজো থেকে শুরু করে জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যাবৃদ্ধির পিছনে বাঙালির মননের পরিবর্তনও অন্যতম বড় একটা কারণ বলে মনে করছেন সমাজতত্ত্বের শিক্ষকরা। গণেশপুজো মানেই মহারাষ্ট্র, গুজরাত- এমনটাই জানতেন আমবাঙালি। কিন্তু ইদানীং কলকাতা-সহ শহরতলির একাধিক জায়গায় গণেশপুজো দেখা যাচ্ছে।
সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্রের ব্যাখ্যা, ‘‘গণেশ সম্পদের প্রতীক। আগে বাঙালির সম্পদ বাড়ানো নিয়ে ততটা তাগিদ ছিল না। এখন সেই তাগিদটা আসাতেই গণেশপুজোর চল বেড়েছে কলকাতায়। এটা বাঙালির মানসিকতার পরিবর্তনের একটা অন্যতম দিক।’’ সেই সঙ্গে, অন্য কোনও জায়গায় যা কিছু জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, সেটাকে নিজের করে নেওয়ার একটা নতুন ধরনের তাগিদ এখন কলকাতার যুবক সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। গণেশ-জগদ্ধাত্রী পুজোর রমরমার পিছনেও এই কারণটাকে দেখছেন সমাজতত্ত্বের শিক্ষকেরা।
সর্বজনীন পুজোর বাড়বাড়ন্ত কর্মসংস্থানের নতুন দিশা দেখাচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজতত্ত্ববিদ রামানুজ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘পুজোর সংখ্যা বাড়ায় অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। বাণিজ্যের সুযোগ বাড়ছে।’’ অর্থনীতিবিদ অভিরূপবাবুও জানাচ্ছেন, জাঁকজমক করে বিভিন্ন পুজো হচ্ছে। কাজ পাচ্ছেন অনেকে।
পুজোর সংখ্যা বাড়ায় খুশি কুমোরটুলি পাড়াও। কুমোরটুলি প্রগতিশীল মৃৎশিল্প ও সাজশিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক অপূর্ব পাল বলেন, ‘‘গত বছরের তুলনায় এ বার অতিরিক্ত প্রায় ১০০ জগদ্ধাত্রী প্রতিমা তৈরির বায়না এসেছে।’’ পটুয়াপাড়ার শিল্পী মিন্টু পাল বলেন, ‘‘গত বছর ১৮টি জগদ্ধাত্রী ঠাকুর গড়েছিলাম। এ বার ২৫টির অর্ডার পেয়েছি।’’
দক্ষিণের তুলনায় উত্তর কলকাতায় জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা বেশি। শুধুমাত্র বাগবাজার, কুমোরটুলি, শ্যামবাজার এলাকা জগদ্ধাত্রী পুজোর সময়ে ‘মিনি চন্দননগর’-এর চেহারা নেয়। কলকাতায় জগদ্ধাত্রী পুজোটা মূলত এক দিনেরই। চন্দননগরে সেখানে চার দিনের পুজো। কলকাতায় নবমীর দিনটিতে জগদ্ধাত্রী পুজো পালিত হয়। এ বার জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হচ্ছে ১৮ নভেম্বর। চলবে ২১ তারিখ পর্যন্ত। চন্দননগর ছাড়াও নদিয়ার কৃষ্ণনগর, হুগলির রিষড়া, ভদ্রেশ্বর, হুগলি ও বৈঁচির জগদ্ধাত্রী পুজো বিখ্যাত।
উত্তর কলকাতার রাজবল্লভপাড়া সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোর মূল আয়োজক কলকাতা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ মিত্র। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘গত দু’বছরে কালীপুজোর পরে জগদ্ধাত্রী পুজো পালনটা শহর কলকাতায় একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু শ্যামপুকুর থানা এলাকায় গত দু’বছরে ৩০-৪০টি জগদ্ধাত্রী পুজো হচ্ছে।’’
শিয়ালদহের জে এম এম (জাস্টিস মন্মথ মুখার্জি) রোড আবাসিকবৃন্দ পরিচালিত জগদ্ধাত্রী পুজো এ বার ১৫ বছরে পা দিল। পুজো কমিটির সম্পাদক অশোককুমার বসাকের কথায়, ‘‘২০০০ সালে শিয়ালদহ পূরবী সিনেমাহল লাগোয়া এলাকায় একমাত্র আমরাই জগদ্ধাত্রী পুজো করতাম। এখন এই এলাকায় ২০টি পুজো হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy