Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পরীক্ষার মাঝেই খবর, নাম রয়েছে মেধা-তালিকায়

শুধু কাকদ্বীপের মাসুদই নয়, পরীক্ষার মাঝে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল জেনেছে আরও অনেকেই। 

হাসিমুখে: সহপাঠিনীর ভাল ফলের খবরে উচ্ছ্বাস। সোমবার, বিধাননগর গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

হাসিমুখে: সহপাঠিনীর ভাল ফলের খবরে উচ্ছ্বাস। সোমবার, বিধাননগর গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০২:২৯
Share: Save:

মনের মধ্যে চাপা দুশ্চিন্তা ছিলই। কিন্তু সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরে জয়েন্ট এন্ট্রান্স অ্যাডভান্স পরীক্ষার হলে ঢুকে সেই দুশ্চিন্তা উড়িয়ে প্রশ্নপত্রেই মন বসিয়েছিল সুন্দরবন আদর্শ বিদ্যামন্দিরের ছাত্র কাকদ্বীপের বাসিন্দা মাসুদ আখতার। সব কিছু ভুলে প্রথম অর্ধের পরীক্ষার পরে বাইরে বেরিয়েই ফের তার মনে পড়ে যায়, উচ্চ মাধ্যমিকের ফল বেরিয়েছে। তখনই মাসুদ দেখে, তার বাবা শহিদুল ইসলাম মণ্ডল পরীক্ষার হলের গেটের বাইরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বাবা বলেন, ‘‘তুই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছিস!’’

শুধু কাকদ্বীপের মাসুদই নয়, পরীক্ষার মাঝে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল জেনেছে আরও অনেকেই।

সোমবার সকালে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের ওই পরীক্ষাকেন্দ্রে জয়েন্ট অ্যাডভান্স দিতে এসেছিল বরাহনগর নরেন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দিরের ছাত্র বনহুগলির বাসিন্দা স্বর্ণজিৎ পোদ্দার, উত্তরপাড়া গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের ছাত্র বালির বাসিন্দা সৌতম ভট্টাচার্য, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের ছাত্র বেলঘরিয়ার বাসিন্দা স্বর্ণেন্দু পাল, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের আর এক ছাত্র গরফার বাসিন্দা মৌলিন্দু কুন্ডু, টাকি হাউস মাল্টিপারপাস গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী দমদম রোডের বাসিন্দা শ্রেয়াশ্রী সরকার, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র দুর্গানগরের বাসিন্দা সূর্যতপ বসুরাও। সকাল দশটার আগেই এ দিন পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে যায় ওরা। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হয় সকাল দশটায়। সকলে প্রথম অর্ধের পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে বাবা-মায়ের কাছে জানতে পারে সুখবর। শ্রেয়াশ্রী জানতে পারে, সে হয়েছে চতুর্থ, সূর্যতপ হয়েছে পঞ্চম এবং স্বর্ণজিৎ শোনে, ষষ্ঠ স্থান পেয়েছে সে। সৌতম পেয়েছে সপ্তম স্থান এবং মৌলিন্দু হয়েছে অষ্টম।

দু’ঘণ্টা বিশ্রাম, তার পরে দু’টো থেকে আবার দ্বিতীয় অর্ধের পরীক্ষা শুরু। তাই ভাল ফলের খবর পেলেও উদ্‌যাপনের সময় ছিল না কারও। পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে ফুটপাতে বসেই পরের পরীক্ষার পড়া সেরে নিচ্ছিল ওরা। তার মধ্যেই মাসুদ বলে, ‘‘মাধ্যমিকে আমি চতুর্থ হয়েছিলাম। এ বারও র‌্যাঙ্ক করব ভেবেছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় হব ভাবতে পারিনি।’’ মাসুদ জানায়, ভবিষ্যতে সে চিকিৎসক হতে চায়। বালির সৌতম ভট্টাচার্যের বাবা গৌতমবাবু বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম ছেলের সপ্তম হওয়ার খবরটা পরীক্ষার মাঝে দেব না। যদি পরের পরীক্ষার মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু ছেলেকে দেখে আর সুসংবাদটা না দিয়ে থাকতে পারলাম না। ওকে বলেই ফেললাম যে, ও সপ্তম হয়েছে।’’ বনহুগলির স্বর্ণজিৎ ফুটপাতে বসেই টিফিন খেতে খেতে বলে, ‘‘কী হবে এই নিয়ে একটু টেনশন ছিল। কিন্তু মন শান্ত করে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। হল থেকে বেরিয়ে যখন দেখলাম মা-বাবার মুখে একগাল হাসি, তখন নিশ্চিন্ত হলাম। বুঝলাম ভাল কিছু রেজাল্ট হয়েছে।’’ শ্রেয়াশী ও মৌলিন্দুর বাবারাও জানান, প্রথমে ভেবেছিলেন এই ভাল খবরটা পুরো পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে বিকেলে দেবেন। কিন্তু খবরটা আর চেপে রাখতে পারেননি।

দ্বিতীয় দফা পরীক্ষা দিতে ঢোকার আগে স্বর্ণজিৎ জানায়, ভবিষ্যতে সে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। পড়ার ফাঁকে সূর্যতপ জানাল, ভবিষ্যতে স্ট্যাটিসটিক্স নিয়ে পড়াশোনা করতে চায় সে।

এ দিন পাঁচ নম্বর সেক্টরের ওই পরীক্ষাকেন্দ্রে কয়েকশো ছাত্রছাত্রীর সিট পড়েছিল। তাদের বেশির ভাগই এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। স্বর্ণজিৎ, সৌতম, মৌলিন্দু, মাসুদেরা যে মেধা-তালিকায় স্থান পেয়েছে, তা জানতে পেরে যান অন্য পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকেরাও। পরীক্ষার মাঝে তাদের অভিনন্দনও জানিয়ে যান কেউ কেউ। কিন্তু ওদের অভিনন্দনে ভেসে যাওয়ার সময় কোথায়? আবার তো পরীক্ষা। দু’টো বাজার একটু আগেই গুটি গুটি পায়ে তারা ফের ঢুকে যায় পরীক্ষার হলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JEE Mains Higher Secondary Examination 2019 Student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE