ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে জগিং। সঙ্গে একটু ঝুঁকে যদি প্লাস্টিক কুড়িয়ে নেওয়া যায়, মন্দ কী!
প্লগিং— অর্থাৎ, জগিং করতে করতে রাস্তার নোংরা, বিশেষ করে প্লাস্টিক কুড়িয়ে নেওয়া। দৌড়নোর সময় ঝোঁকার ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি যেমন ব্যয় হবে, তেমনই রাস্তা সাফসুতরোও থাকবে। সুইডেনের ওই ধারণা জগিংয়ের চিরাচরিত প্রথাকেই ভেঙেচুরে দিয়েছে। দেশ-বিদেশের ফিটনেস ক্লাবগুলি এর চর্চায় মশগুল। কারণ, প্লগিংয়ে এক দিকে শারীরচর্চা রয়েছে। তেমনই রয়েছে এলাকা পরিষ্কার রাখতে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। ত্রিচি পুরসভা ইতিমধ্যে প্লগিং নিয়ে বিশেষ প্রচার শুরু করেছে। কলকাতার ফিটনেস ক্লাবগুলির মধ্যেও এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সম্প্রতি।
এমনিতে শহরের একাধিক ফিটনেস ক্লাবের কর্তা বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন। শহরের অন্যতম নামকরা ফিটনেস ক্লাবের কর্তা গগন সচদেব বলেন, ‘‘মোটামুটি দু’কিলোমিটার জগিং করতে হবে। প্রতি কিলোমিটারে যদি দশ বার করেও ঝোঁকা যায়, তা হলে ক্যালরি অনেকটাই খরচ হবে। বিদেশে লক্ষ্য করেছি, অনেক ফিটনেস ক্লাবই প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে এই প্লগিং ধারণা চালু করেছে। এ ব্যাপারে পুরসভা এগিয়ে এলে খুবই ভাল। ফিটনেস ক্লাবগুলোও এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে।’’
প্লগিং নিয়ে একই সুর আর এক ফিটনেস ক্লাবের টেকনিক্যাল হেড রূপম চক্রবর্তীর গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘দৌড়নোর সময় নিয়ম মেনে ঝুঁকলে লোয়ার ব্যাক, কোমর ও পিঠ শক্তিশালী হয়। সেই এক্সারসাইজ করতে করতে যদি প্লাস্টিক কুড়নো যায়, তা হলে মন্দ কী!’’
কিন্তু কলকাতায় প্লগিং কতটা সম্ভব, সে প্রশ্নও উঠছে। ফিটনেস ক্লাবের কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, প্লগিং করতে গেলে রাস্তাঘাট, বিশেষত ফুটপাতের অবস্থা ভাল থাকা দরকার। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতেই করুণ অবস্থা ফুটপাতের। শহরের এক নামকরা ফিটনেস ক্লাবের কর্তার কথায়, ‘‘শহরের ফুটপাতের যা অবস্থা, তাতে ভাল ভাবে হাঁটাই মুশকিল। সেখানে জগিং করতে করতে প্লাস্টিক কুড়িয়ে নেওয়া কতটা সম্ভব, তা দেখতে হবে।’’ আর এক ফিটনেস ক্লাবের কর্তার সতর্কবাণী, ‘‘হঠাৎ করে দৌড়তে দৌড়তে কিন্তু ঝোঁকা উচিত নয়। তা হলে চোট লাগতে পারে। বিশেষ করে এবড়ো-খেবড়ো জায়গায়। কিন্তু শহরের অধিকাংশ রাস্তার অবস্থাই তেমন ভাল নয়। তাই এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’’
জগিংয়ের সময় প্লাস্টিক কুড়নোতে কোনও আপত্তি নেই বলে জানাচ্ছেন পঁচিশ বছরের অনুপম দত্ত। লেক টাউনের বাসিন্দা অনুপম নিয়মিত জিমে যান। তাঁর কথায়, ‘‘ভাল ব্যাপার তো! শুধু জগিং করতে অনেক সময়েই একঘেয়ে লাগে। কিন্তু এতে একটু নতুনত্ব রয়েছে।’’ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত, বছর পঁয়ত্রিশের শ্রাবণী মিত্র আবার বলছেন, ‘‘ওয়েবসাইটে দু’একবার প্লগিং বিষয়ে পড়েছি। ব্যাপারটা অন্যরকম। এখানে চালু হলে তো ভালই।’’
তবে প্লাস্টিক নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হলেও প্লগিং নিয়ে আপাতত তাঁদের কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানাচ্ছেন পুর কর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, পুরসভা এ ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে কিছু করবে না। কোনও ক্লাব অথবা সংস্থার তরফে প্রস্তাব এলে তখন এ বিষয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘শুধু তো প্রচার করলেই হবে না। এক বার প্লগিং চালু হলে তা ধারাবাহিক ভাবে চালু রাখা যাবে কি না, সেটা দেখতে হবে। না হলে তো সমালোচনা শুরু হবে।’’
মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দারের আবার দাবি, ‘‘কলকাতায় পুরকর্মীরা তো সকালেই রাস্তা পরিষ্কার করে দেন। তাই নোংরা থাকে না। তাছাড়া দৌড়নোর সঙ্গে সঙ্গে প্লাস্টিক তোলার মতো মানসিকতা শহরবাসীর রয়েছে কি না, তাও দেখতে হবে। সেখানে প্লগিং কি খুব একটা ফলপ্রসূ হবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy