Advertisement
E-Paper

‘আমরা দুঃখ পেয়েছি’, কুণালের সঙ্গে নারায়ণের সাক্ষাৎ নিয়ে ‘ক্ষুণ্ণ’ জুনিয়র ডাক্তারেরা, এল বিবৃতিও

নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কুণাল ঘোষের বৈঠককে ভাল চোখে দেখছেন না আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারেরা। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরসের তরফে এ প্রসঙ্গে একটি বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে শুক্রবার।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ১২:৪১
(বাঁ দিকে) কুণাল ঘোষ এবং চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার আসফাকুল্লা নাইয়া (ইনসেটে)।

(বাঁ দিকে) কুণাল ঘোষ এবং চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তার আসফাকুল্লা নাইয়া (ইনসেটে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ নিয়ে ‘ক্ষুণ্ণ’ জুনিয়র ডাক্তারেরা। শুক্রবার সকালে এমনটাই জানালেন ত‌াঁদের আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ আসফাকুল্লা নাইয়া। তিনি জানিয়েছেন, নারায়ণ তাঁদের সিনিয়র। কুণালের সঙ্গে কেন তিনি বৈঠক করলেন, তা জানা নেই। তবে এতে তাঁরা দুঃখ পেয়েছেন। কুণালের সঙ্গে কথা বলে জুনিয়র ডাক্তারদের সমস্যাগুলির কোনও সুরাহা হবে না বলেই মনে করেন তাঁরা।

আসফাকুল্লা বলেন, ‘‘আমরা ক্ষুণ্ণ। কেন উনি কুণালের সঙ্গে দেখা করলেন, জানি না। আমরা এর প্রতিবাদ করছি না। তবে আমরা দুঃখ পেয়েছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে দেখা করে কথা বললে আমাদের সমস্যার সমাধান হলেও হতে পারে। কিন্তু কুণাল ঘোষের সঙ্গে কথা বলে এর কোনও সমাধান হবে বলে আমাদের মনে হয় না।’’

আন্দোলন প্রসঙ্গে আসফাকুল্লা আরও বলেন, ‘‘আমরা জানি, সব যুদ্ধে জেতা যায় না। কিন্তু রণাঙ্গনে সক্রিয় থাকতে হয়। তার ফলেই ইতিমধ্যে অনেক কাজও হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার এই আন্দোলনের ফলেই হয়েছে।’’

নারায়ণের সঙ্গে কুণালের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে একটি বিবৃতিও দিয়েছে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস (জেপিডি)। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধি কি না, আমরা জানি না। ব্যক্তিগত এক্তিয়ারে তিনি কারও সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার এবং জনগণের এই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে দৌত্যের অধিকার তাঁকে কেউ দেননি। তিনি এমন এক জনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যিনি প্রতিনিয়ত এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের অতি কদর্য ভাষায় আক্রমণ করছেন। আমরা মনে করি, নারায়ণবাবু আন্দোলনে পরিপন্থী ভূমিকা পালন করছেন। তাঁর এই আচরণকে আমরা সমর্থন করছি না।’’ জেপিডি-র মতো অন্যান্য চিকিৎসক সংগঠনেরও একই মত।

ফেডারেশন অফ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (এফইএমএ) বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও অনুমোদিত প্রতিনিধি নন। এফইএমএ-র আলোচনা এবং সহযোগিতার প্রক্রিয়ার সঙ্গেও তিনি যুক্ত নন। উনি নিজ দায়িত্বে যে বৈঠক করেছেন, তা এফইএমএ-র মতামতকে ব্য়ক্ত করে না। বিচারের দাবিতে এই আন্দোলনকে ছোট করার কোনও আচরণকে আমরা স্বাগত জানাতে পারছি না। জুনিয়র ডাক্তারদের ১০ দফা দাবির সঙ্গে আমরা একমত।’’

সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের তরফে চিকিৎসক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুণাল ঘোষের বৈঠকে আন্দোলন নিয়ে কোনও কথা হয়ে থাকলে তা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। যে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত, সেই দলের বিষয়। আন্দোলনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। আন্দোলনে যুক্ত ডাক্তারদের সংগঠনের কেউ নন নারায়ণবাবু। কোনও আঁতাত হয়ে থাকলে তা অনভিপ্রেত।’’

আরজি কর-কাণ্ডের পর জুনিয়র ডাক্তারেরা যে আন্দোলন শুরু করেছেন, প্রথম থেকেই সেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন নারায়ণ। তিনি বামপন্থী মনোভাবাপন্ন। সিঁথির মোড় এলাকায় দিনের পর দিন প্রতিবাদ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। মানববন্ধন থেকে শুরু করে রাতদখল, প্রথম সারিতেই বরাবর দেখা গিয়েছে এই চিকিৎসক ‘নেতা’কে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি আচমকা দেখা করেন কুণালের সঙ্গে। বেশ কিছু ক্ষণ একান্তে দু’জনের বৈঠক হয়। ধর্মতলার যেখানে অবস্থান করছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা, তার এক কিলোমিটারের মধ্যে নারায়ণ-কুণাল বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে নারায়ণ বলেন, ‘‘আমি এক জন নাগরিক। আমি এক জন চিকিৎসক। কুণাল ঘোষও এক জন নাগরিক এবং সাংবাদিক। আমরা দেখা করেছি, কথা বলেছি। আগেও আমাদের পরিচয় হয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের সঙ্গে কথা বলিনি আমি।’’ তবে কী নিয়ে কথা হয়েছে, সে ব্যাপারে দু’জনের কেউই মুখ মুখ খোলেননি। পরে নারায়ণ সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। তাতে লেখেন, ‘‘জুনিয়রদের ভালর জন্য যা করার, করেছি। আমি প্রথমে মানুষ, তার পরে ডাক্তার, তার পরে আমার রাজনৈতিক সত্তা।’’

নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্ট।

নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্ট।

তাতেও অবশ্য চর্চা থামেনি। রাতে একটি ভিডিয়োবার্তায় নারায়ণ বলেন, ‘‘আদালতে মামলা চলছে। তা সময়সাপেক্ষ। এই পরিস্থিতিতে আলোচনার টেবিলে বিষয়টিকে আনা যায় কি না, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের ব্যক্তির কাছে যাতে বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই কারণেই আমি গিয়েছিলাম।’’ তবে জল্পনা সহজে থামছে না। এই বৈঠককে যে ভাল চোখে দেখা হচ্ছে না, ডাক্তারদের তরফে তা স্পষ্ট করে দেওয়া হল।

Kunal Ghosh Narayan Banerjee Junior Doctor Junior Doctors RG Kar Protest Hunger strike
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy