বিতর্কিত: কালিন্দীর এই রাস্তাতেই পার্কিংয়ের জন্য টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
পথ তুমি কার? এই প্রশ্নেই এখন বিতর্ক তৈরি হয়েছে কালিন্দীর একটি এলাকায়।
তথ্য জানার অধিকার আইনে করা প্রশ্নের উত্তরে পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রাস্তাটি জনসাধারণ ব্যবহার করেন এবং সেটির রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে বিদ্যুতের বিলের খরচ, সবটাই বহন করে পুরসভা। অথচ, সেই রাস্তাতেই পার্কিংয়ের অবৈধ ব্যবসা চালানোর অভিযোগ উঠল স্থানীয় একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, দক্ষিণ দমদম পুরসভার কোনও রকম অনুমতি ছাড়াই ওই ক্লাব রীতিমতো আবেদনপত্র জমা নিয়ে এই ব্যবসা করে চলেছে। মাসখানেক আগে অভিযোগ পেয়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর দক্ষিণ দমদম পুরসভাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল। কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, তার রিপোর্টও পাঠাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, স্থানীয় পুরসভা এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
ওই রাস্তাটি যে এলাকায়, সেই ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, ‘‘পুরসভার নয়, ওটা আবাসনের রাস্তা!’’ কিন্তু প্রশ্ন সেখানেও। আবাসনের রাস্তা হলে পুরসভা কী করে সেটির রক্ষণাবেক্ষণ করে বা বিদ্যুতের খরচ বহন করে? কাউন্সিলরের জবাব, ‘‘বাসিন্দাদের আবেদনের ভিত্তিতে কাজটা আমরা করে দিই।’’ প্রশ্ন উঠেছে, রাস্তাটি যদি আবাসনেরই হবে, তা হলে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সেটির ব্যাপারে পুরসভাকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল কেন?
কাউন্সিলরের বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও। সেখানকার প্রায় ২৫ বছরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ওই রাস্তার ধারে একাধিক আবাসন রয়েছে। প্রতিটির নাম, ঠিকানা আলাদা। ওই রাস্তা কোনও একটি আবাসনের হতে পারে না। তাই কাউন্সিলরের দাবি ঠিক নয়। ওই সমস্ত আবাসনের কয়েক জন আবাসিক মিলে একটি ক্লাব খুলে গত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
বছর কুড়ি আগে লেক টাউন থানার যশোর রোডের একটি জমি ভাগ ভাগ করে বিভিন্ন প্রোমোটারের কাছে বিক্রি করেছিলেন জমির মালিক। ওই সমস্ত প্লটে বিভিন্ন সংস্থা দশটি বহুতল তৈরি করে। ফ্ল্যাটের মোট সংখ্যাও একশোর উপরে। কিন্তু গাড়ি রাখার জায়গা প্রয়োজনের তুলনায় কম। অভিযোগ, এই সুযোগকেই কাজে লাগিয়েছেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। অভিযোগ, তাঁরা ‘সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট’-এ বছর কুড়ি আগে ‘কালিন্দী ৩৩৩ পল্লি সমন্বয় সমিতি’ নামে একটি ক্লাব তৈরি করেন। সেই ক্লাব ওই রাস্তায় গাড়ি রাখার বিনিময়ে বাসিন্দাদের কাছ থেকে মাসে আটশো টাকা করে নেয়। আর পুরোটাই হয় আবেদনপত্র জমা নিয়ে।
তবে এই গোটা পদ্ধতির বৈধতা নিয়েই সন্দিহান এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, পুরসভার রাস্তায় কোনও সমিতি পার্কিংয়ের জন্য টাকা আদায় করে কী ভাবে? এ বিষয়ে কাউন্সিলরের সুরেই ওই সমিতির সম্পাদক মনোজ মিত্র বলেন, ‘‘রাস্তাটি পুরসভার নয়, আবাসনের।’’
এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ, রাস্তাটির মুখে রীতিমতো গেট তৈরি করে ফেলেছে ওই সমিতি। নিরাপত্তারক্ষী দাঁড় করিয়ে সেই গেটে নাকি রাতে তালাও দেওয়া হয়। পুরসভার রাস্তা মানে তো সরকারি রাস্তা। সেই রাস্তায় কোনও সমিতি কী করে গেট বসায়, সে প্রশ্নও উঠেছে। অভিযোগ, ওই ক্লাবের কাজের বিরোধিতা করে অনেককেই আবার রোষের মুখে পড়তে হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy