ফিরে দেখা: ইমরান খানকে নিয়ে স্মৃতিচারণায় কিশোর ভিমানি
আড়াই দশক আগের সেই দিনটাই কি তাড়া করে গেল বৃষ্টিভেজা কলকাতাকে?
বৃহস্পতিবার পাক প্রধানমন্ত্রীর কুর্সির দৌড়ে ‘বন্ধু’র লড়াই টিভি-তে দেখতে দেখতে আর এক পুরনো টক্করের কথা ভাবছিলেন কিশোর ভিমানি। এমসিজি-র ভিআইপি বক্সে সস্ত্রীক বসে ম্যাচের টানাপড়েনেও প্রিয় দল পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জয় নিয়ে একফোঁটা সন্দেহ ছিল না তাঁর। ক’দিন আগে পাক অধিনায়ক ইমরান খানই তো বন্ধু ধারাভাষ্যকারকে অন্তরঙ্গ আড্ডায় বলেন, প্রথমে রান কম উঠলেও ইনজ়ামাম-আক্রমদের টেক্কাতেই শেষ করে দেব ইংল্যান্ডকে। সানি পার্কের বহুতলে এই দুপুরেই টিভিমুখী কিশোর আত্মবিশ্বাসী, ম্যাজিক ফিগারের কম হলেও ধরার মতো হাত ঠিকই পেয়ে যাবেন পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ক্রিকেট অধিনায়ক।
১৯৮৪-তে ইডেনে ঐতিহাসিক ডবল উইকেট ক্রিকেট খেলতে এসে সানিপার্কের এই ফ্ল্যাটেই জমেছিল ইমরান, ভিভ রিচার্ডস, গার্নার, ওয়েস হল, জ়াহির আব্বাসদের সান্ধ্য-মজলিস। ’৭৮-’৭৯-র ভারত-পাক টেস্ট সিরিজ়ের
সময়ে ভিমানিরা অবশ্য লাউডন স্ট্রিটবাসী। গুয়াহাটির পথে কিশোরের এক ডাকে তাঁর বাড়ির আসরে ইমরান, জ়াহির, ওয়াসিম বারি, ওয়াসিম রাজা, মুদস্সরা মিলে নরক গুলজার। মুম্বইয়ে পরমেশ্বর গোদরেজের পার্টির বিদেশি মদ, জাপানের কোবে বিফ, তাইল্যান্ডের বিচিত্র ফল নেই তো কুছ পরোয়া নেই। বন্ধুতা ও আন্তরিকতার মেজাজে আলাদা ভাবে দাগ কাটত কলকাতাই। টলিউডের নায়িকাদেরও গুণমুগ্ধ ছিলেন পাক ক্রিকেটাররা। চিৎপুরের রয়্যালের বিরিয়ানি ও মাটন চাঁপ পাহাড়ের মতো উঁচু হয়ে থাকত ইমরানের প্লেটে। পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা বলতেন, এমন স্বাদ লাহৌর-করাচিতেও মেলা ভার।
এই ক্রিকেট-তারকা ইমরান খানের সৌজন্যেই পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড় নিয়ে গভীর মনোযোগী কলকাতা। ইডেনে বিসিসিআই-এর প্ল্যাটিনাম জুবিলি ম্যাচে অতিথি ইমরানের ম্যানেজার বিশ্বরূপ দে, তাজবেঙ্গলে বহুবার ইমরানের আপ্যায়নের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক মধুরিমা সিংহের মতো অনেকেই পাকভোটের আমেজে মত্ত। ‘‘স্কুলে পড়ার সময়ে ইমরানকে নিয়ে পাগল ছিলাম! ’৭৯-র সিরিজ়ের সময়ে ওবেরয় গ্র্যান্ডে ঢুকে ইমরানের অটোগ্রাফও আদায় করে ছাড়ি।’’— বলছিলেন মধুরিমা। ইমরানদের বিশ্বকাপজয়ের বছরেও ভারত ছিটকে যাওয়ার পরে এশীয় দল হিসেবে পাকিস্তানের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন এ দেশের অনেকেই। ভাল খেলার টানে বা উপমহাদেশীয় আবেগে পাকিস্তানকে সমর্থন তখন অপরাধ বলে ধরা হত না। কলকাতার কাছে ইমরান খান এমনই এক বিস্মৃত অধ্যায়ের নামও বটে।
ইমরানের দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খানের অভিযোগের জবাবে সংবাদমাধ্যমে বন্ধুর হয়েই ব্যাট ধরেছিলেন কিশোর ভিমানি। নিজে দেখেছেন, ইমরানের প্রাক্তন বান্ধবী এমা সার্জেন্টের কাছে শুনেওছেন খাঁটি ভদ্রলোক ইমরান খানের কথা। তাঁর বিশ্বাস, ‘‘স্বভাব-নেতা ইমরান কখনও কারও হাতের পুতুল হবেন না। আবার কৌশলী রাজনীতিবিদ হয়েও অক্রিকেটীয় কিছু কখনওই করবে না আমার বন্ধু।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy