পুজোর মরশুমে বেআইনি নির্মাণে বাড়তি নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের পদস্থ ইঞ্জিনিয়াররা আলোচনা করেন। এর পর ডিজি (বিল্ডিং) অনিন্দ্য কারফর্মা বলেন, ‘‘পুজোর ছুটিতে পুরসভা বন্ধ থাকলেও কন্ট্রোল রুম খোলা থাকবে। কোথাও বেআইনি নির্মাণের খবর পেলে তারা বিল্ডিং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের জানাবে।’’
বছরের যে কোনও সময়ের তুলনায় পুজোয় পুরসভা বেশি দিন বন্ধ থাকায় অনেকেই ইচ্ছেমত নির্মাণের সুযোগ নেন। ডিজি (বিল্ডিং) স্বীকার করেন, এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি তিলজলা-তপসিয়া-ট্যাঙরা, গার্ডেনরিচ-তারাতলা এবং বড়বাজার এলাকায়। তাই এ বারও এই সব বরো-র এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের বেআইনি নির্মাণের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বছর তিন আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের অনিয়মের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর পর ওই বিভাগের উপর মহলে রদবদল হয়। বিল্ডিং বিভাগের পদস্থ এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ সরকারিভাবে যা-ই বলুন, এই বিভাগ তাতে বিন্দুমাত্র দুর্নীতিমুক্ত হয়নি। রাজনৈতিক অঙ্গুলিহেলনে বেআইনি বাড়ি তৈরি চলছে, বরং আগের চেয়ে বেড়েছে।’’ ওই ইঞ্জিনিয়ারের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়ে পুর-অফিসাররা পুরস্কারের বদলে উপরওয়ালাদের তিরস্কার পেয়েছেন। এর পর কেউ সহজে নির্মাণকাজের আইনি বৈধতা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না।
অনেক ক্ষেত্রে বেআইনি বাড়ি তৈরি করে জরিমানা দিয়ে নির্মাতা পার পেয়ে যেতেন। এ কারণে ২০১৩-১৪ অর্থবর্ষে পুরসভা কেবল জরিমানা বাবদ ৫৫ কোটি টাকা আয় করে। অভিযোগ, এ রকম অনেক ক্ষেত্রে নির্মাতাদের সঙ্গে একশ্রেণির পুর-ইঞ্জিনিয়ারের আঁতাত ছিল। কিন্তু ২০১৪-র মার্চে দিল্লি হাইকোর্টে বিচারপতি দুরেজ আহমেদ এবং বিচারপতি সঞ্জীব সচদেবের বেঞ্চ ওই শহরে একটি মামলার প্রেক্ষিতে জরিমানা দিয়ে বেআইনি নির্মাণকে আইনসিদ্ধ করার প্রথা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এর পর কলকাতা হাইকোর্টেও এ রকম আইনি নির্দেশ আসে। হাইকোর্টের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে পুরসভা আপিল করে হেরে যায়। বৃহস্পতিবার ডিজি (বিল্ডিং) এ কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘এর পর জরিমানা দিয়ে বেআইনি নির্মাণকে আইনসিদ্ধ করা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’
কর্তৃপক্ষ অবশ্য স্বীকার করেছেন, পুজোয় বেআইনি নির্মাণ ভাঙা যাবে না। কারণ, এই সময়টায় পুলিশি সহযোগিতা একেবারেই মেলে না। বেআইনি নির্মাণের যে দু’টি অভিযোগ বেশি আসে, তা হল অনুমোদিত আয়তনের চেয়ে বেশি আয়তন তৈরি, গাড়ি রাখার আবশ্যিক স্থানকে বানিজ্যিক কারণে চড়া দরে বিক্রি করা প্রভৃতি।
কলকাতায় এক বছরে বেআইনি ক’টি বাড়ি ভাঙতে পেরেছে পুরসভা? ডিজি (বিল্ডিং) বলেন, ‘‘আমরা প্রথমেই না ভেঙে পুর-আইন মোতাবেক নোটিশ দিই। এই ফাঁকে অভিযুক্ত ট্রাইব্যুনালে চলে যান। সেখানে বছরের পর বছর বিষয়টি ঝুলে থাকে।’’ গোটা শহরে এ রকম বিচারাধীন অনেক বাড়ির নির্মাণকাজ আটকে আছে বলে পুরসভার দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy