Advertisement
E-Paper

বছরভর ব্যস্ত সায়েন্স সিটির মশা দমনে যায়ইনি পুরসভা

যেখানে রাজভবন বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, পুরসভার মশাদমন বাহিনী যায় সর্বত্র। সেখানে সায়েন্স সিটির ক্ষেত্রে এই উদাসীনতা কেন?

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২৯
সায়েন্স সিটিতে ঢোকার মুখে রাখা বিশালাকার টবগুলিতে আগাছার জঙ্গল। নিজস্ব চিত্র

সায়েন্স সিটিতে ঢোকার মুখে রাখা বিশালাকার টবগুলিতে আগাছার জঙ্গল। নিজস্ব চিত্র

কেন্দ্রীয় সংস্থাই হোক বা রাজ্য সরকারের এলাকাই হোক, কলকাতা পুরসভার মশা দমন বাহিনী সমস্ত জায়গাতেই পরিদর্শনে যায়। কোথাও কোনও মশার আঁতুড়ঘর রয়েছে কি না, থাকলে তা দ্রুত ধ্বংস করে। কিন্তু সেই তালিকায় ব্যতিক্রমী সংযোজন হল সায়েন্স সিটি! প্রতিদিন সেখানে প্রচুর লোকের সমাগম হয়। একাধিক জলাশয়ও রয়েছে সেখানে। অথচ গত এক বছরের একটি দিনও সেখানে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা যাননি। এমনটাই জানাচ্ছেন সায়েন্স সিটি কর্তৃপক্ষ।

উল্টো দিকে স্থানীয় কাউন্সিলরের দাবি, ভেক্টর কন্ট্রোল দল গেলেও সায়েন্স সিটিতে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ফলে মশা দমন প্রসঙ্গে দু’পক্ষের তরজা শুরু হয়েছে। যদিও এ নিয়ে সরাসরি বিতর্কে যেতে নারাজ সায়েন্স সিটি কর্তৃপক্ষ। সায়েন্স সিটির অধিকর্তা শুভব্রত চৌধুরী বলেন, ‘‘আমাদের মতো করে মশা দমনের কর্মসূচি চালাচ্ছি। কিন্তু গত এক বছরে পুরসভার কোনও দল সায়েন্স সিটি পরিদর্শনে আসেনি।’’

যেখানে রাজভবন বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, পুরসভার মশাদমন বাহিনী যায় সর্বত্র। সেখানে সায়েন্স সিটির ক্ষেত্রে এই উদাসীনতা কেন? সায়েন্স সিটির এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘হয়তো পুরসভার আমাদের উপরে ভরসা রয়েছে যে আমরা সামলে নিতে পারব। তাই তারা আসে না।’’ পাশাপাশি ওই কর্তা স্বীকার করে নিচ্ছেন, মশার আঁতুড়ঘর কোথায়, তা চিহ্নিত ও ধ্বংস করতে বিশেষজ্ঞ দলের পরামর্শের দরকার হয়। সেই পরিকাঠামো কলকাতা পুরসভার রয়েছে। কিন্তু গত এক বছরে তাদের দেখা না পেয়ে সায়েন্স সিটির তরফে পতঙ্গবিদদের নিয়ে নিজস্ব একটি দলও তৈরি করা হচ্ছে, যাঁদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাওয়া যাবে। মশা দমনে শুধু প্রশাসনের উপরে ভরসা না করে এর আগেই অবশ্য ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ ডেঙ্গির জন্য বিশেষ নির্দেশ জারি করেছেন।

ভৌগোলিক ভাবে সায়েন্স সিটি পুরসভার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড ও সাত নম্বর বরোর অন্তর্গত। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফৈয়াজ আহমেদ খানের আবার দাবি, সায়েন্স সিটির নিরাপত্তারক্ষীরাই মশা দমনের অভিযানে যাওয়া দলকে ভিতরে ঢুকতে বাধা দেন। সে ক্ষেত্রে তাঁরা কী করবেন? ফৈয়াজের কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট সময় অন্তর সায়েন্স সিটির নিরাপত্তারক্ষী পাল্টে যায়। সেখানে ঢুকতে গেলে বাধা পেতে হয়। আমাদের না ডাকলে ঢুকব কী করে?’’ সাত নম্বর বরোর চেয়ারম্যান জীবন সাহারও বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার বা সরকারি কোনও জায়গাতেই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পুরসভার কর্মীরা ঢুকতে পারেন না। জীবনবাবুর কথায়, ‘‘সায়েন্স সিটির কী অবস্থা, সেটা দেখা পুরসভার আওতার বাইরে।’’

যদিও পুর আইনে স্পষ্ট বলা আছে, যদি কোনও এলাকাকে মশার সম্ভাব্য আঁতুড়ঘর মনে করে পুরসভা, সে কেন্দ্রীয় হোক বা রাজ্য সরকারেরই হোক না কেন, সেখানে পুর কর্মীরা ঢুকতেই পারেন। ৪৯৬এ নোটিসও ধরাতে পারেন (পুর এলাকার মধ্যে কোথাও জল বা জঞ্জাল জমিয়ে রাখলে এই আইনে সংশ্লিষ্ট মালিককে সতর্ক করে পুরসভা)। কারণ, কোনও জায়গায় মশার আঁতুড়ঘর তৈরি হলে শুধু সংশ্লিষ্ট এলাকারই ক্ষতি তা নয়, নাগরিকদেরও ক্ষতি।

এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘জনস্বাস্থ্য বিপন্ন মনে করলে পুর স্বাস্থ্যকর্মীরা যে কোনও জায়গাতেই যেতে পারেন।’’ গত এক বছরে স্বাস্থ্যকর্মীরা সায়েন্স সিটিতে গিয়েছেন কি না, সেটা খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ডেপুটি মেয়র তথা স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘১৪৪টা ওয়ার্ডের কথায় কী হচ্ছে, সেটা তো কেন্দ্রীয় ভাবে জানা সম্ভব নয়। তবে নিশ্চয়ই খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ আর সায়েন্স সিটির অধিকর্তা বলছেন, ‘‘পুরসভা অন্য বিষয়ে সহযোগিতা করে। তাই নির্দিষ্ট করে এ নিয়ে আমরা বিতর্কে যেতে চাইছি না। প্রয়োজনে আমরা ওদের পরামর্শ চাইব।’’

Dengue Mosquito KMC Science City
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy