কত গাছ বসানো হচ্ছে তার রিপোর্ট চেয়েছে পরিবেশ আদালত। — ফাইল চিত্র।
গত পাঁচ বছরে শহরে কত গাছ বসিয়েছে কলকাতা পুরসভা? কত সংখ্যক গাছই বা বেঁচে আছে তার মধ্যে? এই সব প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর নেই পুর প্রশাসনের কাছে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের এক মামলার নির্দেশে কত গাছ বসানো হচ্ছে, তেমন একটি মাসিক রিপোর্ট পুরসভা প্রস্তুত করে বটে, কিন্তু তা জনসমক্ষে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব বলেই জানাচ্ছে পরিবেশবিদ মহল। ফলে, শহরে গাছের সংখ্যা নিয়ে ধন্দ কাটছেই না।
গাছের সংখ্যা সংক্রান্ত প্রকাশিত রিপোর্ট না থাকার প্রসঙ্গ স্বীকার করে নিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রিপোর্ট নেই ঠিকই। তবে বছরে গড়ে ১৫-২০ হাজার চারা বসায় পুরসভা। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তারও বেশি। তার মধ্যে ২০ শতাংশ চারা হয়তো বাঁচে না।’’ তার পরেও কলকাতায় সবুজ কমছে, বিভিন্ন সমীক্ষায় কেন এই তথ্য ধরা পড়েছে? উত্তরে মেয়র জানাচ্ছেন, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি এলাকায় মূলত গাছ কাটা হয়েছে। আবার খাস শহরে কারও বাড়ি বা দোকানের সামনে গাছ থাকলে তা কেটে ফেলা হচ্ছে। তা ছাড়া আমপানের মতো ঘূর্ণিঝড়ের দাপট তো রয়েছেই। ফিরহাদের কথায়, ‘‘আমপানে ২০ হাজার বড় গাছ পড়েছিল। আমরা ৫০ হাজার চারা রোপণ করেছি। সেগুলি বড় না হওয়া পর্যন্ত চোখে পড়বে না।’’
প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই মেয়র ২৫ লক্ষ চারা রোপণের কথা ঘোষণা করেছেন। কলকাতা ও শহর সংলগ্ন এলাকায় তা বসানো হবে। ই এম বাইপাস, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি, ধাপায় বায়ো মাইনিংয়ে, আদিগঙ্গার দু’ধার-সহ একাধিক জায়গায় ওই চারা বসানো হবে। তা ছাড়া গঙ্গার পাড়ের মাটিতে কী ধরনের গাছ বসানো যায়, তারও রূপরেখা তৈরি হচ্ছে বলে মেয়র জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বন্দর, রেল কর্তৃপক্ষের অনেক জমি পড়ে রয়েছে। সেখানে চারা বসানোর জন্য তাদের কাছে আবেদন করেছি।’’
তবে শহরে গাছের প্রকৃত সংখ্যা সংক্রান্ত নির্দিষ্ট পুর-রিপোর্ট না থাকাটা ‘কৌশল’ বলে মনে করছেন অনেকে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘গাছের সংখ্যা জানা নেই, এটা বললে গাছ কাটার দায় এড়িয়ে ফেলা যায়। কারণ, গাছের সংখ্যা কত, সে রিপোর্ট স্বচ্ছ ভাবে প্রকাশ করলে এবং অতীতের সঙ্গে বর্তমানের নিরিখে সংখ্যায় হেরফের হলে প্রশাসনের উপরে চাপ তৈরি হয়। সে কারণেই পুরসভা তা করছে না।’’ এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘পরিবেশ নিয়ে এত মাতামাতি, উদ্যাপন। তার মধ্যে শহরে গাছের সংখ্যার রিপোর্ট তৈরি করা যাচ্ছে না? এটা বিশ্বাসযোগ্য?’’
পুরসভা সূত্রের খবর, আগে এক বার গাছ গণনা শুরু হয়েছিল। পাইলট প্রকল্প হিসেবে ৬ ও ৮ নম্বর বরোয় ওই কাজ শুরু হয়েছিল। তখন ওই দুই বরোয় গাছের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫৩৮৪ এবং ১৪০৬৮। অর্থাৎ, মোট ১৯৪৫২। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তার পরে আর সেই কাজ এগোয়নি। পুরসভার এক পদস্থ কর্তার যুক্তি, ‘‘গাছ গণনা করতে সময় লাগবে। এত দ্রুত সেই কাজ হবে না।’’
ফলে, গাছের সংখ্যা নিয়ে ধন্দ তত দিনেও কাটবে না বলে মনে করছেন অনেকে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy