Advertisement
E-Paper

ভূগর্ভের পাঁকেই ডুবে কোর্টের নির্দেশ

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ জানেন? সাফাইকর্মী সুন্দররবি দাস ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। শনিবার কলেজ স্ট্রিটে ম্যানহোল সাফাই করতে নেমেছিলেন নিজেকে কলকাতা পুরসভার সাফাইকর্মী হিসেবে পরিচয় দেওয়া ওই প্রৌঢ়।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০০:৪৯
অসহায়: কলেজ স্ট্রিটে ম্যানহোল সাফাই করছেন এক কর্মী। নিজস্ব চিত্র

অসহায়: কলেজ স্ট্রিটে ম্যানহোল সাফাই করছেন এক কর্মী। নিজস্ব চিত্র

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ জানেন? সাফাইকর্মী সুন্দররবি দাস ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। শনিবার কলেজ স্ট্রিটে ম্যানহোল সাফাই করতে নেমেছিলেন নিজেকে কলকাতা পুরসভার সাফাইকর্মী হিসেবে পরিচয় দেওয়া ওই প্রৌঢ়। দস্তানা, গামবুট বা মাস্ক— কিছুরই বালাই নেই। শুধু অন্তর্বাসটুকু পরে দড়ি বেয়ে ভূগর্ভস্থ নর্দমার ভিতরে নেমে পাঁক তুলছিলেন তিনি। এই দৃশ্যই বলে দিচ্ছিল, সাফাইকর্মীদের অধিকার রক্ষায় কলকাতা পুরসভা এখনও কতটা উদাসীন।

সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে ৫০০ টাকার বিনিময়ে তিন জন ঠিকা শ্রমিককে কোনও রকম সুরক্ষা ছাড়া ভূগর্ভস্থ নর্দমায় সাফাইয়ের কাজে নামানোয় বেঙ্গালুরু জল সরবরাহ ও নিকাশি বোর্ডের বিরুদ্ধে জে সি নগর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনাচক্রে ওই দিনই বেঙ্গালুরুর হোঙ্গাসান্দারায় একটি বেসরকারি স্কুলের সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করার সময়ে এক মহিলার মৃত্যু হয়।

১৮৬৩ কিলোমিটার দূরে কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে কর্মরত সুন্দররবি বেঙ্গালুরুর ঘটনার খবর জানেন না। সুন্দররবি ও তাঁর সহকর্মী টুপলাল রবিদাসের জীবন জড়িয়ে রয়েছে শহরের অসংখ্য ম্যানহোলের সঙ্গে। সম্ভবত সেই জন্যই পুরসভার কোন বিভাগে কাজ করেন জানতে চাইলে সুন্দররবি বলেন, ‘‘আমি হাইড্রেনে আছি তো! যখন যেখানে যেতে বলে, সেখানে ড্রেন পরিষ্কার করি।’’ বস্তুত, দেশ জুড়ে সাফাইকর্মীদের প্রতি এই অমানবিক আচরণের প্রতিবাদে ১৯৯৩ সালে সাফাই কর্মচারী আন্দোলন গড়ে ওঠে। ২০০৩ সালে সাফাইকর্মীদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে সাফাই কর্মচারী আন্দোলন নামে সংগঠনটি। যার প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, আপৎকালীন পরিস্থিতি ছাড়া সাফাইকর্মীদের নিকাশি নালায় নামিয়ে নর্দমা পরিষ্কার করতে বাধ্য করাটা অপরাধ। আপৎকালীন পরিস্থিতিতেও প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া সাফাইকর্মীদের নিকাশি নালায় নামানো যাবে না।

আরও পড়ুন: গাড়িতে ১০০০ কেজি বিস্ফোরক

সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের কথা জানেনই না সুন্দররবি, টুপলালেরা। দস্তানা, গামবুট কোথায় জানতে চাইলে সুন্দররবি বলেন, ‘‘সে সব নাকি রাখা আছে!’’ প্রৌঢ়ের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে টুপলাল বলেন, ‘‘গ্লাভস, হেলমেট, বুট সবই আছে। কিন্তু সে সব পরে কাজ করা যায় না। বুটের ভিতরে কাদা, জল ঢুকে যায়।’’ এ দিন ওই পুরকর্মীরা যখন কোনও রকম সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই নর্দমায় নেমে নোংরা পরিষ্কার করছেন, তখন কাজ কেমন চলছে, তা দেখতে এসেছিলেন পুরসভার এক আধিকারিক। এ ভাবে কেন কর্মীরা কাজ করছেন? প্রশ্ন শুনেই গাড়িতে উঠে চলে যান ওই আধিকারিক। খানিক দূরে গাছের ছায়ায় বসে পুরকর্মীদের কাজ

তদারকি করছিলেন মুন্সি দাস নামে এক ব্যক্তি। নিজেকে পুরসভার প্রতিনিধি বলে পরিচয় দিয়ে মুন্সিবাবু বলেন, ‘‘কেন এ ভাবে কাজ হচ্ছে, তা তো আমার উপরে যাঁরা আছেন, তাঁরাই ভাল বলতে পারবেন!’’

সাফাই কর্মচারী আন্দোলনে এ রাজ্যের প্রতিনিধি রাজপাল বাল্মীকি বলেন, ‘‘কর্মীদের এ বিষয়ে সচেতন করে না কলকাতা পুরসভা। গরিব মানুষগুলো কাজ হারানোর ভয়ে যে ভাবে বলা হয়, সেটাই ভবিতব্য মেনে কাজ করেন।’’ মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ বলেন, ‘‘পুরসভায় এ ভাবে কাজ করানো প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে। আমাদের সব

রকম আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। এর পরেও এই ধরনের ঘটনা ঘটলে কড়া ব্যবস্থা নেব।’’

Supreme Court of India Cleaner Kolkata Municipal Corporation KMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy