Advertisement
১৮ মে ২০২৪

অবৈধ নির্মাণ রুখতে বাড়তি সুবিধার সিদ্ধান্ত

ফিরহাদ আগেই জানিয়েছিলেন, শহরে বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করা হবে। কিছু দিন আগে পুরসভা বিল্ডিং দফতরে একটি মনিটরিং সেল করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৯ ০২:৪০
Share: Save:

বেআইনি নির্মাণ রুখতে বহুতল তৈরির নিয়মে বেশ কিছু সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কলকাতা পুর প্রশাসন। সম্প্রতি বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করা নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পুরসভা সূত্রের খবর, যে হারে বেআইনি নির্মাণ বাড়ছে, তা রোখা না গেলে শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে, বিঘ্নিত হবে পরিষেবা। ভারসাম্য থাকবে না পরিবেশেরও। অভিযোগ, পুলিশ এবং রাজনৈতিক দলের একাংশের সহায়তায় বেআইনি বহুতল বেড়েই চলেছে। তার উপরে বেআইনি বাড়িকে টাকা দিয়ে ‘আইনি’ করার প্রক্রিয়া কলকাতা পুরসভায় চালু থাকায় সমস্যা আরও জটিল আকার নিয়েছে।

ফিরহাদ আগেই জানিয়েছিলেন, শহরে বেআইনি নির্মাণ বন্ধ করা হবে। কিছু দিন আগে পুরসভা বিল্ডিং দফতরে একটি মনিটরিং সেল করার সিদ্ধান্ত নেয়। কেন এমন হচ্ছে, তা নিয়ে চলে চর্চা। প্রায় ৭০০টি বেআইনি নির্মাণের তালিকা পাঠানো হয় বিল্ডিং দফতরে। তার পরেই সম্প্রতি বিল্ডিং নিয়মে বাড়তি কিছু সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুর প্রশাসন।

কী বলা আছে সেই খসড়ায়?

বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিক জানান, শহরে পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন করে গড়ার ক্ষেত্রে সুবিধা দেওয়ার নিয়ম ছিলই। সেই সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে মালিকপক্ষের জন্য। প্রথমত এত দিন বিল্ডিং নিয়মের ১৪২ ধারায় বলা ছিল, মালিকেরা সাড়ে ১৫ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বাড়ি বানাতে পারেন, যাতে সেটি পাঁচতলা পর্যন্ত হতে পারে। খসড়ায় বলা হয়েছে, ওই উচ্চতা বাড়িয়ে সাড়ে ২৫ মিটার করা হবে। যাতে আটতলা পর্যন্ত বাড়ি করা যাবে। পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, কলকাতার অধিকাংশ পুরনো বাড়িতে ভাড়াটে থাকেন। কিন্তু ভাড়ার পরিমাণ এতই কম যে বাড়ির বেহাল দশা হলেও তা সারাতে পারেন না মালিকপক্ষ। কারণ নতুন গড়ার প্রধান শর্তই হল, ওই বাড়িতেই ভাড়াটেকে পুনর্বাসন দিতে হবে। খরচ করে তাই পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন করে বানাতে প্রায় কেউ আগ্রহ দেখান না। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই সব পুরনো বাড়ির ক্ষেত্রে তাঁদের সিদ্ধান্তে অনেকটাই উপকৃত হবেন মালিক। বাড়তি তিনটি তল বেশি পেলে তাঁদের খরচ উঠে আসবে।

বেআইনি নির্মাণের প্রবণতা কমাতে আরও একটি নিয়মের উল্লেখ রয়েছে খসড়ায়। বলা হয়েছে, রাস্তার হিসেব মেনে আগে ২০ মিটার উচ্চতায় ছ’তলা বাড়ি তৈরির অনুমতি দেওয়া হত। কিন্তু দেখা গিয়েছে, অনেকে নিয়মের তোয়াক্কা না করে আরও এক’টি বা দু’টি তল বানিয়ে নিয়েছেন। এমন ঘটনা কিছু ক্ষেত্রে ঘটেছে। তাই এ বার নিয়ম করা হচ্ছে, উচ্চতা আরও এক মিটার বাড়িয়ে একুশ করা হবে। যাতে সাততলা পর্যন্ত বাড়ি করা যেতে পারে। মেয়রের অনুমান, এর ফলে বেআইনি নির্মাণে খানিকটা হলেও রাশ টানা যাবে।

পুরসভার বিল্ডিং দফতর সূত্রের খবর, শহরে অনেক মাস হাউজিং বা গণ আবাসন থাকলেও বিল্ডিং নিয়মে এত দিন সেটির কোনও সংজ্ঞা ছিল না। অথচ বিল্ডিং আইনে বলা ছিল, মাস হাউজিংয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ এফ এ আর (ফ্লোর এরিয়া রেশিয়ো) দিতে হবে। কিন্তু যথার্থ সংজ্ঞা না থাকায় সেই সুবিধা মিলত না। এ বার খসড়ায় ‘মাস হাউজিং’য়ের নতুন সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ওই ধরনের আবাসনে মোট ফ্ল্যাটের শতকরা ২৫ ভাগ মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের জন্য রাখতে হবে। তবেই তা মাস হাউজিংয়ের সুবিধা পাবে।

ফিরহাদ জানান, শীঘ্রই এই নিয়মগুলি চালু করার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যেই নতুন নিয়মের খসড়া গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। পুরসভার আইন দফতরের অনুমোদন পাওয়ার পরে পুরো গেজেট প্রকাশিত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Illegal Construction Firhad Hakim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE