Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩

হেরিটেজে ফের ‘তুঘলকি’ পুরসভার!

হেরিটেজ মর্যাদায় গ্রেডের যে ক্রমতালিকা রয়েছে, তাতে সংস্কার বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু কড়াকড়ি রয়েছে। গ্রেড ওয়ান ভবনগুলির ক্ষেত্রে যেমন সামান্য পরিবর্তনও করা যায় না।

সংস্কার চলছে ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের সেই অফিসে। মঙ্গলবার, লর্ড সিনহা রোডে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সংস্কার চলছে ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের সেই অফিসে। মঙ্গলবার, লর্ড সিনহা রোডে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

ফের হেরিটেজ মর্যাদায় অবনমন! ফের বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল কলকাতা পুরসভা। আর তার সঙ্গে এ বার নাম জড়াল রাজ্য সরকারি দফতরেরই। লর্ড সিনহা রোডে রাজ্য সরকারের ‘ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ’-এর (আইবি) অফিসের হেরিটেজ মর্যাদার অবনমন প্রসঙ্গে ফের পুরসভার ‘তুঘলকি’ আচরণ নিয়ে সরব হয়েছেন হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ওই ভবনকে যে ভাবে হেরিটেজ তালিকায় গ্রেড-টুএ মর্যাদা থেকে গ্রেড-থ্রি’তে নামানো হয়েছে, তা নিয়ে সরব হয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, আইবি-র তরফে পুরসভায় আবেদন করা হয়েছিল, ১৩, লর্ড সিনহা রোডের ভবনটিকে হেরিটেজ তালিকা থেকে বাদ দিতে। পুরসভার নথি অনুযায়ী, ওই আবেদনে জানানো হয়েছিল, বিল্ডিংয়ের অবস্থা খারাপ। তা যখন-তখন ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। হেরিটেজ তালিকায় থাকার কারণে পুরসভার অনুমতি ছাড়া যে হেতু সংস্কার সম্ভব নয়, তাই সেটিকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক।

পুরসভা সিদ্ধান্ত নেয়, হেরিটেজ কমিটির সদস্যেরা অফিসটি পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেবেন। পুর হেরিটেজ কমিটির সদস্যদের তরফে শেষ পর্যন্ত ভবনটিকে নামিয়ে গ্রেড থ্রি পর্যায়ভুক্ত করা হয়। পুর প্রশাসনের বৈঠকে মঙ্গলবার সে প্রস্তাব পাশও করে। এর আগেও হেরিটেজ মর্যাদার অবনমন নিয়ে একাধিক বার বিতর্কে জড়িয়েছিল পুরসভা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ফের হেরিটেজ কমিটির প্রাসঙ্গিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

প্রসঙ্গত, হেরিটেজ মর্যাদায় গ্রেডের যে ক্রমতালিকা রয়েছে, তাতে সংস্কার বা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু কড়াকড়ি রয়েছে। গ্রেড ওয়ান ভবনগুলির ক্ষেত্রে যেমন সামান্য পরিবর্তনও করা যায় না। তেমন ভাবেই গ্রেড টুএ ও টুবি’র ক্ষেত্রে পরিবর্তন করতে হলে পুর-হেরিটেজ কমিটির অনুমতি সাপেক্ষে করতে হয়। কিন্তু বড় কোনও পরিবর্তন করা যায় না। একমাত্র গ্রেড-থ্রি ভবনের
ক্ষেত্রেই পুরো ভেঙে ফেলে নতুন ভাবে নির্মাণ করা যায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে পুরনো ভবনটির ছবি নতুন ভবনে রাখা বাধ্যতামূলক।

Advertisement

যদিও হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সেই ‘কড়াকড়ি’ শুধু রয়ে গিয়েছে খাতায়-কলমেই। এক হেরিটেজ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘গ্রেডেশনের ইচ্ছে মতো পরিবর্তন করা যায় না! কিন্তু সেটাই ধারাবাহিক ভাবে হয়ে চলেছে। কয়েকজন মিলে বসছেন বৈঠকে। তাঁরাই নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছেন।’’ হেরিটেজ স্থপতি হিমাদ্রি গুহ বলেন, ‘‘হেরিটেজ আইনের একটা ধোঁয়াশার দিক রয়েছে বটে। সেটাকে মাধ্যম করেই গ্রেডেশনের পরিবর্তন করা হচ্ছে। গ্রেড থ্রি-তে একবার নামিয়ে দিলে ভবন ভেঙে ফেলা সম্ভব।’’

যদিও এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন হেরিটেজ বিশেষজ্ঞেরা। সাধারণ নাগরিকেরা যেখানে ‘হেরিটেজ-অস্বস্তি’তে পড়ে বাড়ি সংস্কার করতে পারছেন না, সেখানে ওল্ড কেনিলওয়ার্থ হোটেল হোক বা আইবি অফিস, দু’টি ক্ষেত্রেই হেরিটেজ-সমস্যা দূর করতে সামান্য সময়ও নেননি পুর কর্তৃপক্ষ।

আইবি ভবনে আপাতত
সংস্কারের কাজ চলছে। তবে কবে থেকে সে কাজ শুরু হয়েছে, কী ভাবে সংস্কারের কাজ চলছে, ওই কাজের জন্যই অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, সে ব্যাপারে আইবি অফিসের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, হেরিটেজ কমিটির সদস্যেরা সর্বসম্মত ভাবে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পুর হেরিটেজ কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘ভবনটি পরিদর্শনে দেখা গিয়েছিল তা খুবই পুরনো। সংস্কারের প্রয়োজন। তাই তা করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.