Advertisement
E-Paper

তৈরি ৩০টি ফাইল, আর বাড়ি ভাঙতে দেরি নয়

বিশাল বাড়িটি যে এখনও দাঁড়িয়ে আছে, সেটাই আশ্চর্যের! এক ফালি বারান্দার উপরে পুরো কাঠামোরই প্রায় ভেঙে পড়ার অবস্থা। অথচ নীচে দোকান চলছে পুরোদমে।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৮ ০১:৫৬
বিপজ্জনক: শহরের পুরনো বাড়িগুলির জীর্ণ দশা। ১২৯/১, মহাত্মা গাঁধী রোড।

বিপজ্জনক: শহরের পুরনো বাড়িগুলির জীর্ণ দশা। ১২৯/১, মহাত্মা গাঁধী রোড।

বাড়ির বারান্দা অন্ধকারাচ্ছন্ন। কোনায় ইট খসে পড়েছে। বাসিন্দারা জানালেন, আগে ওখানে ঘর ছিল। লোকজনও থাকতেন। এখন সেই ঘরের আর কোনও অস্তিত্ব নেই। নড়বড়ে জং ধরা লোহার রেলিং ধরে ছাদে উঠে দেখা গেল, পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক। ছাদের এক দিকের পাঁচিল হেলে পড়েছে। আর এক দিকের দেওয়াল জুড়ে গজিয়েছে গাছ। ছাদের একপ্রান্ত ধসে তা যাতায়াতের অগম্য হয়ে উঠেছে।

১এ, হেরম্ব দাস লেন ঠিকানার বাড়িটির এমনই অবস্থা। কলকাতা পুরসভার তালিকায় বাড়িটি বিপজ্জনক। সেখানকার এক ভাড়াটে আল্পনা দাস বললেন, ‘‘বহু বছর ধরে আইনি লড়াই চলছে মালিকের সঙ্গে। কোথাও যাওয়ার নেই বলে এখানে পড়ে আছি।’’ বাড়িটির মালিক সমরেন্দ্রনাথ ভদ্রের অবশ্য অভিযোগ, ‘‘ওঁরা কেউই বৈধ ভাড়াটে নন। কোনও দিন ভাড়া দেননি। পুরসভার নির্দেশ অনুযায়ী অনেক বার মধ্যস্থতা করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কান দেননি। প্রাপ্যের তুলনায় তাঁরা অনেক বেশি দাবি করছেন। বাড়িটা নিয়ে কিছুই করা যাচ্ছে না।’’

অর্থাৎ, সেই চিরাচরিত ভাড়াটে-মালিক ‘দ্বৈরথ’। কিন্তু সেই ‘দ্বৈরথ’কে আর গুরুত্ব দিতে চাইছেন না কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। তাই শ্যামবাজার থেকে ক্যামাক স্ট্রিট— এই বিস্তৃত এলাকার বিপজ্জনক বাড়িগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। রমজান শেষ হওয়ার পর থেকেই সেগুলি ভাঙার আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।

১এ, হেরম্ব দাস লেনের বিপজ্জনক বাড়ি।

পুরকর্তাদের একাংশই জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই অন্তত ৩০টি বাড়ির ফাইল প্রস্তুত করেছে পুরসভার বিল্ডিং দফতর। পুরোপুরি ভাঙতে হয়তো আরও কিছু সময় লাগবে, কিন্তু প্রাথমিক কাজটা শুরু হবে শীঘ্রই। ৪১২(এ) নোটিস পাঠানো সত্ত্বেও যে সব বাড়ির মালিক বাড়ি সংস্কারে হাত দেননি, সেগুলিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘অনেক বার বলা সত্ত্বেও বাড়ির মালিকেরা শুনছেন না। তাই সেই বাড়িগুলিকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।’’

যেমন ১২৯/১, মহাত্মা গাঁধী রোড। বিশাল বাড়িটি যে এখনও দাঁড়িয়ে আছে, সেটাই আশ্চর্যের! এক ফালি বারান্দার উপরে পুরো কাঠামোরই প্রায় ভেঙে পড়ার অবস্থা। অথচ নীচে দোকান চলছে পুরোদমে। পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, এখানেও ভাড়াটে-মালিক ঝামেলা। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘নতুন বাড়িতে বৈধ ভাড়াটেরা পুরো জায়গাই পাবেন। তাঁদের যাবতীয় তথ্য পুরসভায় নথিভুক্ত থাকছে। নতুন বিল্ডিংয়ের নকশার প্রতিলিপি ভাড়াটেদের হাতেও দেওয়া হচ্ছে, যেখানে তাঁদের নাম ও প্রস্তাবিত ফ্লোরের উল্লেখ থাকছে।’’ ৬৪, পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটেরও একই চিত্র। একাধিক বার নোটিস পাঠিয়ে সাড়া না মেলায় এই বাড়িটিও আতসকাচের তলায় রয়েছে পুরসভার।

তবে এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। পুরসভার নোটিস পেয়ে একাধিক বাড়ির মালিক নিজেই উদ্যোগী হয়েছেন। যেমন ৬, প্রতাপ চ্যাটার্জি লেন বা ২৫০, রবীন্দ্র সরণি ঠিকানার বাড়িগুলি। কোথাও কাজ শুরু হয়েছে, কোথাও পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বিল্ডিংয়ের নকশার অনুমোদন দেওয়া হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সংখ্যায় তা নগণ্য।

পুরকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রতি বারই বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙতে গিয়ে হাজারো বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের। এ বারও যে হবে না, সেই নিশ্চয়তা নেই। ফলে সাফল্য নিয়ে সংশয় থাকছেই। কিন্তু ‘বিচ্ছিন্ন দ্বীপে’র মতো বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙার প্রক্রিয়া রাখতে চাইছে না পুরসভা। তাই আপাতত মিশন ‘শ্যামবাজার টু ক্যামাক স্ট্রিট’, বলছেন পুরকর্তারা।

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

KMC Dilapidated Building Demotion Drive
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy