Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Communal harmony

Communal harmony: কলেজপাড়ার সম্প্রীতির ইতিহাসের টানে পথে পথে

টিপু সুলতানের পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সাহানি বেগম মসজিদ তল্লাটটা কী অদ্ভুত শান্ত! সেই সঙ্গে ইতিহাসের রোমাঞ্চকর ছোঁয়াচে গায়ে কাঁটা দেয়।

ইতিহাস: সাহানি বেগম মসজিদের গল্প শুনছেন কলেজপড়ুয়ারা। মঙ্গলবার, খিদিরপুরে।

ইতিহাস: সাহানি বেগম মসজিদের গল্প শুনছেন কলেজপড়ুয়ারা। মঙ্গলবার, খিদিরপুরে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২২ ০৬:০৮
Share: Save:

আজন্ম খিদিরপুরে বসবাস। তবু কলেজজীবনে ঢুকেও নিজের পাড়ার কত কিছু চেনা হয়নি! মঙ্গলবার সকালে ভাবছিলেন খিদিরপুর কলেজের ভূগোল সাম্মানিক ক্লাসের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী দোলন হালদার।

টিপু সুলতানের পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সাহানি বেগম মসজিদ তল্লাটটা কী অদ্ভুত শান্ত! সেই সঙ্গে ইতিহাসের রোমাঞ্চকর ছোঁয়াচে গায়ে কাঁটা দেয়। আত্মীয়, বন্ধুরা বাড়িতে এলে অবশ্যই নিজের বাড়ির কাছের এই এলাকাটি তাঁদের দেখাবেন ভেবে রেখেছেন দোলন। ভূগোলের পড়ুয়া চন্দন ঘোষ, সুজাতা চট্টোপাধ্যায়রাও আপ্লুত, নিজের কলেজের পাড়ার ভূগোলটাই এত দিন তাঁদেরও অচেনা ছিল। উনিশ শতকীয় সোলানা মসজিদ লাগোয়া কবরস্থানের সঙ্গে জড়িত শহরের এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান মহিলার সহৃদয়তার গল্প বা দক্ষিণ ভারতীয় খ্রিস্টানদের প্রার্থনার সেন্ট ইগনেশিয়াস চার্চ, শ’দেড়েক বছরের পুরনো বাংলা মাধ্যম সেন্ট বার্নাবাস স্কুলের গল্পও জানা গেল। ওড়িয়া মাধ্যম স্কুলও কিন্তু টিকে রয়েছে কলকাতার এই অংশে। বয়সে কিছুটা নবীন, সুদৃশ্য মহালক্ষ্মী মন্দিরও দিব্যি মিলে গিয়েছে এই সম্প্রীতি, সহাবস্থানের ইতিহাসের ধারায়।

অতিমারির জন্য দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষে পাঠরত অনেকের কাছেই কলেজজীবন কার্যত সবে শুরু হয়েছে। একটি-দু’টি বছর পার করেও কলেজের কিছুই জানা হয়নি। খিদিরপুর এলাকায় এমন অনেকের জন্যই নিজের শহরকে চেনার একটি দুর্লভ সুযোগ মিলল মঙ্গলবার সকালে। সৌজন্যে, এ শহরের নানা রঙা সংস্কৃতি ও বহুত্বের মাধুর্য মেলে ধরার মঞ্চ ‘নো ইয়োর নেবার’-এর খিদিরপুর অভিযান। ফলে, উঠে এল বাংলা, বাঙালির বিচিত্র ইতিহাসের শরিক কলকাতার একটি প্রাচীন, বর্ধিষ্ণু জনপদের মহিমা। এই উদ্যোগটির আহ্বায়ক মহম্মদ রিয়াজ বলছিলেন, ‘‘কয়েক ঘণ্টায় খিদিরপুরের পুরো গল্পটা বলা অসম্ভব। কিন্তু মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো কবির স্মৃতির সঙ্গে জড়ানো এলাকায় আমরা একই সঙ্গে বিভিন্ন ধর্ম এবং ভাষার মানুষের সহাবস্থানের ধারাটার কথা বলতে চেয়েছি।” সল্টলেক থেকে রোজ কলেজে আসা ভূগোলের শিক্ষিকা তিস্তা দে-ও বলছিলেন, “অনেকেরই ধারণা, খিদিরপুরে শুধু মুসলিমরা থাকেন। জায়গাটি নিয়েও নানা ভুল ধারণা রয়েছে। কিন্তু এখানে এসে ক্রমশ বুঝেছি, ইতিহাস, সংস্কৃতির উৎকর্ষে এমন জায়গা কমই আছে কলকাতায়। এই হেরিটেজ ওয়াক অনেক বিষয়েই চোখ খুলে দিল।”

কয়েক ঘণ্টার অভিযানে মন্দির, মসজিদ, গির্জার মোহনায় দাঁড়িয়ে অভিভূত ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষ, হাওড়ার শিবপুরের শাহবাজ আহমেদ বা সাংবাদিকতার ছাত্রী, হাইড রোড়ের বাসিন্দা পুষ্পাঞ্জলি শুক্লও। খিদিরপুরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এত গল্প তাঁদেরও অজানা ছিল।

পড়শিকে জানার মঞ্চটি ধারাবাহিক ভাবে কলকাতার বিভিন্ন এলাকার সম্প্রীতি, সহাবস্থানের গল্প বলছে। ধর্মের নামে বিভাজনের নানা অপচেষ্টার উল্টো পিঠে এত বছর, এত ধরনের মানুষের পাশাপাশি থাকার গর্বের ইতিহাসে এখনও বুঁদ কলকাতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Communal harmony
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE