তথ্যপ্রমাণ দু’বছর আগেই জোগাড় হয়ে গিয়েছে। তার পরেও কেন চার বছর পর অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হল? ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলায় এই প্রশ্ন তুলে সিবিআইকে ধমক দিল আদালত। বিচারকের মন্তব্য, ‘‘এটা কি রসিকতা হচ্ছে?’’
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর খুন হয়েছিলেন কাঁকুড়গাছির বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকার। সেই মামলায় দু’দিন আগেই অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। তাতে ১৮ জনের নাম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছে বেলেঘাটার তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পাল এবং কলকাতা পুরসভার দুই কাউন্সিলর স্বপন সমাদ্দার এবং পাপিয়া ঘোষের নাম। শুক্রবার কলকাতার বিচার ভবন সেই মামলায় ওই ১৮ জনকেই সমন পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি চার্জশিটের প্রতিলিপিও পাঠাতে বলেছে আদালত।
শুনানির শুরুতে আদালত সিবিআইয়ের কাছে জানতে চেয়েছিল, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ভাবে পদক্ষেপ করা যেতে পারে? জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট (সমন) জারি করতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর পরেই বিচারক প্রশ্ন করেন, ১৮ জনের মধ্যে কাউকে গ্রেফতার করার চেষ্টা হয়েছিল কি না। উত্তরে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘না, তা হয়নি।’’ বিচারক জানতে চান, কাউকে গ্রেফতার করার দরকার ছিল? এর জবাবে তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘না। ওঁরা সহযোগিতা করছিলেন।’’
অভিযুক্তেরা পালাতে পারেন কি না, সিবিআইয়ের কাছে তা-ও জানতে চেয়েছিলেন বিচারক। সিবিআই জানায়, তাদের সে রকম মনে হয়নি। তার ভিত্তিতে বিচারক জানান, তা হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রয়োজন নেই। এ কথা জানিয়ে আদালত অভিযুক্তদের সমন পাঠানোর নির্দেশ দেয়। শুধু ওই ১৮ জনই নন, মূল চার্জশিটে যে ২০ জনের নাম রয়েছে, তাঁদেরও সমন পাঠাতে বলে আদালত।
বিচারকের এই নির্দেশের পর সিবিআই আদালতে জানায় যে, সকলকে চার্জশিট পাঠাতে তাদের মাসখানেক সময় লাগবে। এতেই ক্ষুব্ধ হন বিচারক। তিনি বলেন, ‘‘চার বছর পর সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিচ্ছেন। এটা কী ‘ম্যাটার অফ জোক?’ চার বছর ধরে কী করছিলেন? চার্জশিটে তো দেখলাম তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করা হয়েছে দু’বছর আগে।’’ বিচারকের সংযোজন, ‘‘তদন্তের অধিকার দেওয়া হয়েছে মানে সেটা আপনাদের খামখেয়ালির উপর নির্ভর করতে পারে না।’’
বিচারক জানিয়েছেন, মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ জুলাই। সিবিআই সূত্রে খবর, ওই দিনই অভিযুক্তদের আদালতে হাজির থাকতে বলা হবে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময়েই ভোট-পরবর্তী হিংসায় অভিজিৎ খুন হন বলে অভিযোগ। পরিবারের দাবি, ২ মে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার দিনই অভিজিৎকে পিটিয়ে, গলায় কেব্ল টিভির তার পেঁচিয়ে খুন করা হয়েছিল। পাশাপাশি তাঁর দাদা বিশ্বজিৎ এবং মা মাধবী দেবীকেও মারধরের অভিযোগ রয়েছে। সেই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে কয়েক জন গ্রেফতার হলেও অন্য অভিযুক্তেরা অধরাই। গত সপ্তাহেই এই মামলার অন্যতম মূল অভিযুক্ত অরুণ দে গ্রেফতার হন সিবিআইয়ের হাতে।