Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Pollution

Pollution in Kolkata: তেরোর দফারফা! দূষণে কলকাতা আছে কলকাতাতেই

বাতাসে ভাসমান অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম২.৫) উপস্থিতির নিরিখে বিশ্বের শহরগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা।

রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯ সালে কলকাতায় প্রতি ঘনমিটারে পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল ৮৪ মাইক্রোগ্রাম।

রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯ সালে কলকাতায় প্রতি ঘনমিটারে পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল ৮৪ মাইক্রোগ্রাম। ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২২ ০৭:০৭
Share: Save:

দূষণ রোধে কলকাতা পুরসভার ১৩ দফা নির্দেশিকা ‘উড়িয়ে দিয়ে’ শহর বোঝাল, কলকাতা আছে কলকাতাতেই! অন্তত শহরের পরিবেশবিদ মহলের একাংশের এমনই মত। এ ক্ষেত্রে তাঁরা বুধবার আমেরিকার এক গবেষণাকারী সংস্থার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত রিপোর্টের প্রসঙ্গ তুলে ধরছেন। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, বাতাসে ভাসমান অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম২.৫) উপস্থিতির নিরিখে বিশ্বের শহরগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা। দিল্লির পরেই।

রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৯ সালে কলকাতায় প্রতি ঘনমিটারে পিএম২.৫-এর উপস্থিতি ছিল ৮৪ মাইক্রোগ্রাম। শীর্ষে ছিল দিল্লি (পিএম২.৫-এর উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ১১০ মাইক্রোগ্রাম)। যেখানে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, বাতাসে পিএম২.৫-এর বার্ষিক উপস্থিতির নির্ধারিত মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৪০ মাইক্রোগ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্ষেত্রে তা প্রতি ঘনমিটারে ন্যূনতম ৩৫ মাইক্রোগ্রাম। ফলে সংশ্লিষ্ট রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতার বাতাসে পিএম২.৫-এর উপস্থিতি উভয় সংস্থার নির্ধারিত মাত্রার থেকেই বেশি।

‘হাউজ়হোল্ড অ্যাক্টিভিটিজ়’ বাদে বাতাসে পিএম২.৫-এর উপস্থিতির অন্যতম কারণ পথের ধুলো এবং নির্মাণস্থলের দূষণ। এই দূষণ রোধ করতেই জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে কিছু নিয়মবিধি জারি করেছিল কলকাতা পুরসভা। ১৩ দফা সেই নিয়মবিধির মধ্যে রয়েছে ধুলো আটকাতে নির্মাণস্থল ঢেকে রাখা, নির্মাণ সামগ্রী আচ্ছাদনে মোড়া, রাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী না-রাখা, পুরনো বাড়ি ভাঙার সময়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ, রাস্তার ধুলো নিয়ন্ত্রণে ‘ওয়াটার স্প্রিঙ্কলার’-এর মাধ্যমে জল দেওয়া-সহ আরও কিছু। বলা হয়েছিল, নির্মাণের সময়ে দূষণবিধি মান্য করার মুচলেকা দিলেই নির্মাতা এবং ডেভেলপারদের বিল্ডিংয়ের প্রস্তাবিত নকশা অনুমোদন করা হবে।

পুরসভার সেই নির্দেশিকা ঠিক মতো মানা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে একাধিক রিপোর্টে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় পরিবেশ আদালতে বায়ুদূষণ নিয়ে মামলাকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের মর্যাদা পেয়েছে, যা গর্বের। উল্টো দিকে, পরিবেশ দূষণের নিরিখে ক্রমশ কালো তালিকায় চলে যাচ্ছে কলকাতা। তাঁর কথায়, ‘‘এটা হচ্ছে জুডিশিয়াল মনিটরিং-এর অভাবে। বায়ুদূষণ সংক্রান্ত নির্দেশ পালনে রাজ্য সরকার বা পুরসভার কোনও খামতি থাকছে কি না, সে ব্যাপারে আদালতের নজরদারিতে ফাঁক থাকায় এই অবস্থা!’’

পুরসভার পরিবেশ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দারের দাবি, ‘‘দু’-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে শহরের প্রায় সমস্ত নির্মাণস্থলেই দূষণ-বিধি মেনে কাজ হয়। না হলে পুরসভার তরফে নোটিস দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’’ নজরদারির জন্য আধিকারিকদের নির্দিষ্ট দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।

মেয়র পারিষদ এই দাবি করলেও ওয়ার্ডভিত্তিক নির্মাণস্থলের দূষণের উপরে নজরদারিতে পুরসভার পর্যাপ্ত লোকবল ও পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছেই। এক পুরকর্তার বক্তব্য, ‘‘বড় নির্মাণস্থলের উপরে নজরদারি চালানোটা সহজ। সেটা করাও হয়। কিন্তু ছোটখাটো সব নির্মাণস্থলে সেটা চালানো সম্ভব হয় না।’’

এ দিকে, ছোটখাটো নির্মাণস্থলে দূষণ-বিধি ‌না মানায় বাতাসে পিএম২.৫-এর উপস্থিতির নিরিখে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে কলকাতা, যা মানতে নারাজ অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, শুধু তো নির্মাণস্থলের দূষণ নয়, যানবাহনের ধোঁয়া, আবর্জনা পোড়ানো, রাস্তার ধুলো, সব জায়গাতেই নজরদারিতে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। তাই অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণার দাপট কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে রাজ্যের পরিবেশ দফতরের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া জানাচ্ছেন, তিনি ইতিমধ্যেই রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে সংশ্লিষ্ট রিপোর্টটি বিশ্লেষণ করতে বলেছেন। তার উপরে ভিত্তি করে আগামী ২৩ তারিখ দফতর, পর্ষদের কর্তা-আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠকও ডেকেছেন। মানসের কথায়, ‘‘রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে। বায়ুদূষণ রোধে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Air pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE